লালমাই পাহাড়। কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে সদর দক্ষিণ উপজেলায় এ পাহাড়ের অবস্থান। লাল রংয়ের মাটি বেষ্টিত বলেই লালমাই নামকরণ করা হয়। এই লালমাই পাহাড়ের কৃষকরা কচুমূখী চাষ করেছেন। ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরাও স্বপ্ন বুনছেন আর্থিক স্বচ্ছলতার।
সরেজমিনে লালমাই পাহাড় ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন পাহাড়ের উচু নিচু জমিতে। কেউ পরিবারের সদস্য নিয়ে, কেউবা শ্রমিক নিয়ে কোদাল কুপিয়ে তুলছেন কচুমূখী। মাঠ থেকে সংগ্রহ করা কচু পরিষ্কার করে বিকেল হলেই ঝুড়িতে করে চলে যাচ্ছেন হাটে।
লালমাই পাহাড়ে কচুমূখী চাষ করেছেন কৃষক আবুল কালাম আজাদ। কথা হয় তার সঙ্গে। জানান, গত বছর দশেক ধরে লালমাই পাহাড়ে নিয়ম করে তিনি কচুমূখীসহ নানান জাতের শাক-সবজি ও ফলমূল চাষ করছেন। কৃষিতেই তার সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে।
আবুল কালাম বলেন, ‘এ বছর ২৪০ শতক জমিতে কচুমূখী চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকা। ফলন ভালো হয়েছে। পেয়েছি ১৮ টন কচুমূখী।’
সবকিছু ঠিক থাকলে ৮ লাখ টাকার তিনি তার সবজিগুলো বিক্রি করতে পারবেন। এতে খরচ বাদে তিন লাখ টাকা লাভের কথা জানান আজাদ।
লালমাই পাহাড়ের কচুমূখী স্বাদে-গুণে অনন্য। তাই হাটে এই কচুমূখীর আলাদা চাহিদা রয়েছে। বিজয়পুর এলাকার বাসিন্দা আবদুস সাত্তার জানান, শত বছর ধরে লালমাই পাহাড়ে কচুর ছড়া চাষ হয়। স্থানীয়রা কচুমূখীকে কচুর ছড়া নামে চেনেন।
বলেন, ‘এই মাটিতে উৎপাদিত কচুর ছড়া দিয়ে ইলিশ মাছ রান্না করলে খুব স্বাদ হয়। তাই বছরের এই সময়ে বাড়িতে কুটুম আসলে কচুমূখীর তরকারি দিয়ে আপ্যায়নের একটা প্রথা চালু আছে আমাদের।’
কুমিল্লার কোটবাড়ি, পাহাড়পুর, বিজয়পুর, নিমসার হাট থেকে কচুমূখী দেশের বিভিন্ন জেলা সদরে চলে যায়। পাইকারি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে হাটে ৬০-৮০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
কৃষি সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, ‘শত বছর ধরে লালমাই পাহাড়ে কচুমূখী চাষ হয়। লালমাই পাহাড়েরর কচুমূখী এতদ্বঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী সবজি। লালমাটিতে উৎপাদন হয়, লাল রঙের জন্য বাজারে গেলে যে কেউ সহজে এই কচুমূখী চিনতে পারে। রান্না করলে একদম মোমের মত নরম হয়ে যায়। সব বয়সীদের জন্য এই কচুমূখী বেশ উপকারী।’
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, ‘লালমাই পাহাড়ের ৫০ হেক্টর জমিতে কচুমূখী চাষ হয়েছে। বছরের এই সময় কৃষকরা ব্যস্ত থাকে কচুমূখী সংগ্রহ পরিষ্কার ও বাজারজাত করার কাজে। পাশাপাশি কৃষকদের বাগানে স্থানীয় নারী পুরুষরাও দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। জমি থেকে কচুমূখী সংগ্রহ পরিষ্কার করার মজুরি হিসেবে প্রতিজন শ্রমিক ৫০০ টাকা পর্যন্ত পান। এ কাজে এই এলাকার শতাধিক পরিবার বেশ ভালো আয় করেন।’
কচুমূখী চাষে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়। কীভাবে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করা যায় সেসব পরামর্শের পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নিয়মিত মাঠে গিয়ে কৃষকদের খোঁজ খবর রাখেন বলেও জানান তিনি।