একদিকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদপত্নী বেগম রওশন এরশাদ, অন্যটিকে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতার ভাই জি এম কাদের। দুজনের বিপরীতমুখী অবস্থানে ভাঙনের কবলে দল। ওদিকে জাতীয় নির্বাচনের দামামা বাজার অপেক্ষা। এই সময়ে এই দ্বন্দ্ব দলটিকে নতুন কোনো সংকটে ফেলে কি না, তা নিয়ে আছে আলোচনা।
সমস্যার শুরু গত ৩১ আগস্ট। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ হঠাৎ করেই আগামী ২৬ নভেম্বর দলের সম্মেলন ডেকে বসেন। সেটি আবার জানতেন না দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। সেদিনই বিষয়টি স্পষ্ট করেন তার অনুসারী নেতারা।
পরদিন জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল বৈঠক করে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীকে চিঠি দেন। ১৪ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এরশাদ অনুসারী হিসেবে পরিচিত হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, দলের মধ্যে যে সংকট, তা আসলে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে। অতীতেও নির্বাচন এলেই দলটিতে এমন সংকট দেখা গেছে। আগামী দিনে কারা ক্ষমতায় থাকবে, সেদিকেই দৃষ্টি এখন দলের। এ কারণেই বেশ কিছু কৌশল নিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালে দলে রওশন- কাদেরের দ্বন্দ্ব হলেও পরে মীমাংসা হয়ে যায়। এবারও তা-ই হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
রওশনপন্থি এক নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের বসলেই মীমাংসা হয়ে যাবে। হয়তো শেষ পর্যন্ত সেটাই হবে।’
রওশন চিকিৎসার জন্য এখন দেশের বাইরে। আগামী ৮ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা আছে, যদিও তা পিছিয়ে যেতেও পারে। তিনি দেশে এলে দুই নেতাকে এক টেবিলে বসানোর একটি উদ্যোগ নেয়া হতে পারে।
দলের প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য বলেন, ‘আমার মনে হয় না রওশন এরশাদ দলের জন্য ক্ষতিকর কিছু করবেন। তবে তিনি দেশে ফিরলে বিষয়টি বোঝা যাবে। তবে আমি ৮০ শতাংশ মনে করি, ভাবি-দেবরের বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান কঠোর কিছু সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছেন। তার মানে এই নয় যে তিনি আওয়ামী লীগ বিমুখ হয়ে গেছেন। তিনি নির্বাচনবিমুখ হননি। সে হিসেবে তো এখনও জাতীয় পার্টি সরকারের সঙ্গেই রয়েছে। যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা না হয় তাহলে মনে হয় এবার সরকারের বাইরেও যেতে পারেন তিনি।’
রওশনপন্থি নেতারা আগের তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মতোই কোনো প্রশ্ন ছাড়াই আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে আগ্রহী।
এই অংশের এক নেতা বলন, ‘দলের বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছে যখন থেকে জাতীয় পার্টি বিএনপির সুরে কথা বলা শুরু করেছেন। বিএনপি এখন যা-ই বলে জি এম কাদেরও সেই লাইনেই কথা বলেন। কিন্তু রওশন এরশাদ কোনো অবস্থাতেই বিএনপির সঙ্গে যেতে চান না।’
তবে জাতীয় পার্টির জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সম্প্রতি বলেছেন, তারা বিএনপির সঙ্গে যাবেন- এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে জাতীয় পার্টি আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট নাও করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ৩০০ আসনে এককভাবে প্রার্থী দেয়া হবে।
রওশনপন্থি আরেক নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রওশন এরশাদ সবাইকে নিয়ে কাউন্সিল করতে চেয়েছিলেন। তিনি দেশে এসে যে রাজধানী একটি হোটেলে জি এম কাদেরপন্থিদের ডাকলেও তারা কেউ সাড়া দেননি। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে কাউন্সিলের ডাক দিয়েছেন।’
রওশন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকাকালে তেমনভাবে তার খোঁজ নেননি জি এম কাদের। এ বিষয়টি ভালোভাবে নেননি তিনি। দলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা তার কাছে গিয়ে বলেছেন, জি এম কাদের তাদের একঘরে করে রেখেছেন। এটিও ভালোভাবে নেননি রওশন।