স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে কেউ গরু পালন করবেন, কেউ ব্যবসা করে হবেন স্বাবলম্বী। স্বচ্ছলতা ফিরবে পরিবারে। ঘুচবে অভাব নামক যন্ত্রণা। ‘সোনালী ফাউন্ডেশন’ নামের এক ভুইফোঁড় এনজিও দুই শতাধিক মানুষকে এমন স্বপ্ন দেখিয়েছিল।
প্রতারকদের সেই ফাঁদে পা দিয়ে তারা খুইয়ে বসেছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতারণার এই ঘটনা ঘটেছে মেহেরপুর সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে।
স্বল্প সুদে ঋণ নেয়ার আশায় এই মানুষগুলো নিজেদের গচ্ছিত টাকা জমা করেছিলেন এই প্রতিষ্ঠানে। বৃহস্পতিবার তাদেরকে ঋণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার একদিন আগেই অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বুধবার লাপাত্তা হয়ে গেছে প্রতারকরা।
বুধবার সকাল থেকেই ওই এনজিওর প্রধান কার্যালয় ফাঁকা পড়ে আছে। এনজিওর শতাধিক গ্রাহককে কার্যালয়ের সামনে দেখা গেলেও দেখা মেলেনি সোনালী ফাউন্ডেশনের কাউকে।
প্রতারক চক্রটি কয়েকদিন আগেও শহীদ গফুর সড়কের ব্রিজ সংলগ্ন বিপুল হোসেনের বাড়িতে প্রতিষ্ঠানের নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছিল। সোনালী ফাউন্ডেশনের নামে করা সাইনবোর্ডে স্লোগান ছিল- ‘মানবতার সেবায় আমরা গড়বো আগামীর দিন’। প্রতারকরা এই ভিজিটিং কার্ডও করেছিল। তাতে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মোঃ শাহিদ, মোবাইল নম্বর দেয়া ছিল ০১৮৯৪৫৭৭১৬৩।
বুধবার সকাল পর্যন্ত নম্বরটি সচল থাকলেও ১০টার পর থেকে সেটি বন্ধ রয়েছে।
সপ্তাহখানেক আগে সদর উপজেলার পশুহাট পাড়া, চকশ্যামনগর, যাদবপুর, কাথুলি তেল পাম্প পাড়াসহ আশপাশের আরও ৪-৫টি গ্রামের নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করে মাঠে নামে ভুঁইফোঁড় এনজিও সোনালী ফাউন্ডেশন।
বার্ষিক এককালীন এক থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে ওই ঋণ পেতে কিছু শর্ত জুড়ে দেয় এই প্রতারক চক্রটি। তারা জানায়, ঋণ পেতে হলে লাখ প্রতি দশ হাজার টাকা সঞ্চয় দিতে হবে। আর কিস্তি হিসেবে বছর শেষে গ্রাহককে লাখ টাকায় সুদ দিতে হবে ৬ হাজার টাকা। এভাবে যে যত টাকা ঋণ নেবে সে অনুপাতে সঞ্চয় জমা দিতে হবে। আর এই ঋণ নিতে কোনো জামানত লাগবে না।
মেহেরপুর সদর উপজেলার পশু হাসপাতাল পাড়ার ৫৮ বছর বয়সী ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘চারদিন আগে সোনালী ফাউন্ডেশন তাকে লাখে দশ হাজার টাকা সঞ্চয় জমা দিলে এক লাখ টাকা ঋন দিতে চায়। বৃহস্পতিবার নাগাদ এই ঋণ পাওয়া যাবে। আমি দশ লাখ টাকা ঋণ নেয়ার জন্য আজ (বুধবার) সকালে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সাইদকে নগদ এক লাখ টাকা দেই। দুপুর ১২টার দিকে ব্রাঞ্চে এসে দেখি কেউ নেই।’
একইভাবে চকশ্যামনগর গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী রমজান আলী দুই লাখ টাকা ঋণের জন্য ২০ হাজার টাকা জমা দেন। কাথুলি তেল পাম্প পাড়ার সামনের ব্যবসায়ী রিপন হোসেন আট লাখ টাকা ঋণ পেতে সঞ্চয় জমা দিয়েছেন ৭৮ হাজার টাকা। বাকি ২ হাজার টাকা বৃহস্পতিবার জমা দিয়ে ওই দিনই তার ঋণ পাওয়ার কথা ছিল।
যাদবপুর দক্ষিণপাড়ার গৃহবধু আশাবুনও এক লাখ টাকা ঋণের জন্য দশ হাজার টাকা দিয়ে এখন কপাল চাপড়াচ্ছেন।
এনজিওটির ব্রাঞ্চ হিসেবে দেখানো শহীদ গফুর উদ্দিন সড়কের বাড়ি মালিক বিপুল হোসেন বলেন, ‘শাহিদ নামে এক ব্যক্তি রোববার এসে আমার বাড়ির নিচের অংশ ভাড়া নিতে চায়। তারা ২৫ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া এবং দশ লাখ টাকা জামানত দেবে বলে জানায়।
‘শাহিদ নামের লোকটি আরও জানায়, আগামী ১০ অক্টোবর চুক্তি স্বাক্ষর হবে। তবে এখন থেকেই তারা সোনালী ফাউন্ডেশনের একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রাখবে। আমি তাতে রাজি হয়ে এখন বিপদে পড়েছি। সকাল থেকে অনেক লোক আমার বাড়ির সামনে জমায়েত হয়েছে।’
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল আলম জানান, সোনালী ফাউন্ডেশন নামে কোন এনজিওর বিরুদ্ধে সদর থানায় কেউ এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।
মেহেরপুর সদর সমাজ সেবা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক কাজী কাদের মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি নিউজবাংলাকে জানান, ‘সোনালী ফাউন্ডেশন নামে কোনো এনজিওর নিবন্ধন আমাদের কাছে নেই। এক শ্রেণীর প্রতারকের খপ্পড়ে পড়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। অথচ তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে ওয়েবসাইটে ঢুকলেই আমাদের ফোন নম্বরসহ সব তথ্য পাওয়া যায়।
‘আমাদের কাছে কেউ ফোন দিলেই তাদের নিবন্ধন আছে কিনা জানতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষ অন্ধের মতো মানুষকে বিশ্বাস করে প্রতারিত হচ্ছে।’