নৌ বাহিনীতে চাকরি শেষে পেনশনের ৬ লাখ, স্ত্রীর তিন লাখ টাকাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের ১৫ লাখ টাকা আহমেদীয়া ফাইনান্স অ্যান্ড কমার্স এমসিএস লিমিটেডে জমা রেখেছিলেন আব্দুল হাকিম। শর্ত ছিল, মাসে প্রতি লাখে দেড় হাজার টাকা লভ্যাংশ দেবে এমসিএস লিমিটেড।
শুরুর দিকে শর্ত অনুযায়ী ঠিকমতো লভ্যাংশ দিলেও কিছুদিন পর থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর প্রতিষ্ঠান তালা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির আহমেদ গ্রাহকদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যান।
তাই লাভের চিন্তা বাদ দিয়ে এখন আসল টাকা উদ্ধারের জন্য পথে পথে ঘুরছেন আহমেদীয়া ফাইনান্স অ্যান্ড কমার্স এমসিএসর প্রায় ১ হাজার ১০০ গ্রাহক। পথে বসা গ্রাহকদের টাকা উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান তারা।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে গিয়াস উদ্দিন এমসিএস লিমিটেডের ব্যবস্থা নিয়ে তাদের টাকা ফেরতের দাবি জানান। এ সময় শতাধিক গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে জানতে আহমেদীয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্স এমসিএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনির আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সাইফুল ইসলামকেও একাধিকবার ফোন করলে তিনি ধরেননি।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা জানান, সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে শুরু করে এক কোটি টাকাও জামানত রেখেছেন অনেকে। ১ হাজার ১০০ জনের মতো গ্রাহকের কয়েক শ কোটি টাকা আটকে আছে মনির আহমদের এই প্রতিষ্ঠানে।
ভুক্তভোগীরা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান মো. মনির আহমেদসহ অন্যরা প্রতি লাখে দেড় হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়। ব্যাংকের চেয়ে অনেক বেশি টাকা লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় ২০১৯ সাল থেকে সবাই লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে।
প্রথম দিকে ঠিকঠাক লভ্যাংশ দিলেও পরে সেটি কমিয়ে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে ২০২০ সালের দিকে টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
তারা জানান, অনেকে ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেনে টাকা রাখলেও পরে তারা জানতে পারেন এটি সমবায় অধিদপ্তর থেকে সমবায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রেজিস্ট্রেশন নেয়া হয়েছিল। পরে তারা আসল টাকা উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও সমবায় অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তাদের দাবি, এই প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখা টাকা সরিয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠান করেছেন মনির আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইব্রাহিমপুরের ৮২/২ হোল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় অবস্থিত আহমেদীয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্স এমসিএস লিমিটেডের অফিস। এখানে আমানত রাখা শতাধিক গ্রাহকের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্য, পুলিশ যেমন আছেন, তেমনি রিকশাচালক থেকে শুরু করে আরও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আছেন। সাবেক সরকারি চাকরিজীবীরা বেশিরভাগেই তাদের পেনশন ও গ্রাচুইটির টাকা দীর্ঘদিন ধরে এখানে এফডিআর করে রেখেছে। কিন্তু এখন লভ্যাংশ তো দূরে থাক আসল টাকা পাচ্ছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত পেতে সহযোগিতা চেয়ে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তারা। তার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। মন্ত্রী পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশনাও দিয়েছেন।
কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করে সংবাদ সম্মেলনে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘রিজেন্টের মতো বড় বড় দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রী আমাদের কষ্টে জমানো টাকাগুলো উদ্ধার করে মনির আহমেদসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেবেন।’