বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভালো নেই প্রধানমন্ত্রীর স্নেহের শম্পা

  •    
  • ৫ অক্টোবর, ২০২২ ১১:২৯

‘ভালাই দিন যাইতাছিল। রোজার ইদের পরের দিন রাইতে হঠাৎ কইরে নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু করে। মেলাক্ষণ রক্ত পড়ছে। পরে মাথাত পানি দিয়ে এডা (একটি) বড়ি (ট্যাবলেট) খায়ে ঘুমাইছি। পরের দিন ডাক্তার দেহাইছি। ডাক্তার ওষুধ দিছিল। ওষুধ খাওয়ার পর এহন কিছুটা কমছে। তাও দুই-এক দিন একটু একটু কইরে পড়ছে।’

বাবার চিকিৎসা করতে ভ্যান চালিয়ে তোলপাড় ফেলা জামালপুরের শিশু তাহাজ্জুদ শম্পা ভালো নেই। গলায় ঘা হয়ে যাওয়ায় মাঝেমধ্যেই নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে তার। তার মা নেবুজা খাতুনের হাত-পা প্রায়ই অবশ হয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। বাবার পা-ও পুরোপুরি ঠিক হয়নি এত দিনেও।

শম্পার কাহিনি গণমাধ্যমে পড়ে আবেগে ভেসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে এরপর মেয়েটির জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা হয়, উদ্যোগ নেয়া হয় পড়াশোনা নিশ্চিত করার, বাবার চিকিৎসা হয় সরকারি খরচে, তার নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা করতে করে দেয়া হয় দোকানও।

বাবার মুদি দোকানের উপার্জন দিয়ে তিনবেলা খেয়ে সুখেই দিন কাটছিল শম্পাদের। তবে পরিবারের ঘুম কেড়ে নিয়েছে অসুস্থতা। একে একে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ায় কিছুটা কষ্টে দিন পার করছে তারা।

সোমবার দুপুরে নাকাটির গ্রামের বাড়িতে যাবার পথে শম্পার দাদি সরেবান বেগমের সঙ্গে দেখা হয় নিউজবাংলার। নাতনির কথা জিজ্ঞাসা করতেই ৮০ বছর বয়সী সরেবান ওঠেন, ‘আমার নাতির অবস্থা বেশি ভালা না। অসুখ।’

বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বিছানায় বসে লেখাপড়া করছে শম্পা।

সে বলে, ‘ভালাই দিন যাইতাছিল। রোজার ইদের পরের দিন রাইতে হঠাৎ কইরে নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু করে। মেলাক্ষণ রক্ত পড়ছে। পরে মাথাত পানি দিয়ে এডা (একটি) বড়ি (ট্যাবলেট) খায়ে ঘুমাইছি। পরের দিন ডাক্তার দেহাইছি। ডাক্তার ওষুধ দিছিল। ওষুধ খাওয়ার পর এহন কিছুটা কমছে। তাও দুই-এক দিন একটু একটু কইরে পড়ছে।’

শম্পার মা নেবুজা খাতুন বলেন, ‘মেয়ের অসুখ হইল, ডাক্তার দেহাইলাম। মেয়ে একটু ভালা হওয়ার পর আবার আমার অসুখ হইল। থাকতে থাকতে হাত-পা সব অবশ হয়ে জায়গা। পরে আমিও ডাক্তার দেহাইলাম। এহনও শরীর ঠিক হয় নাই।’

তিনি বলেন, ‘উপজেলার ইউএনও সার নিয়মিত আঙ্গর (আমাদের) খোঁজখবর রাখেন। লোক পাঠায়ে খবর নেন। নিজেও ফোনে খোঁজখবর নেন। আমরা প্রশাসনের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’

ছয় বছর আগে জামালপুর শহর থেকে বাড়ি ফেরার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পা ভেঙে যায় শম্পার বাবা শফিকুল ইসলাম ভাষানীর। প্রথমে জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল এবং পরে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে সাত লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসার পরও ভালো হয়নি তার ডান পা।

এরপর থেকেই সব সময় বিছানায় থাকতে হয় শফিকুলকে। সবজি বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেন শম্পার মা নেবুজা বেগম। সেই উপার্জনেও যখন সংসার চলে না, তখন বাবার ওষুধের টাকা সংগ্রহ করতে টানা দেড় বছর ভ্যান চালায় শম্পা।

২০২০ সালের নভেম্বরে শম্পার ভ্যান চালানোর খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নজরে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি জামালপুরের জেলা প্রশাসককে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেন শম্পার। তার বাবাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে এসে চিকিৎসা করানো হয়।

ডিসেম্বরের শুরুতে শম্পার জন্য বাড়ি করে দেয়ার কাজে হাত দেয় প্রশাসন। তার পরিবারকে দেয়া হয় টাকা। এরপর আর ভ্যান চালানোর দরকার পড়েনি শম্পার। সেই সময়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া শম্পা এখন কুটামনি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির তারকা ছাত্রী। আর জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের নাকাটি গ্রামের শম্পা পুরো জেলার এক পরিচিত মুখ।

দোকানে চা খেতে খেতে কথা হয় শম্পার বাবা শফিকুল ইসলাম ভাষানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার পা ভাঙা। এহনও ওষুধ খাওয়া লাগে। এছাড়াও পরিবারের সবার অসুখ। সবার ওষুধ কিনতে কিনতে আমার দিন শেষ। এই এক দোকানের কামাই দিয়ে সংসার চালান লাগে আবার সবার ওষুধও কিনা লাগে। এর জন্য দোকানে আগের মতো মালও তুলবার পাই না। দোকানের মালও কইমে গেছে গা। খুব একটা সমস্যার মধ্যে আছি।

‘প্রতি তিন মাস পর পর আমার ঢাকা যাওয়া লাগে। ডিসি স্যার, ইউএনও স্যার। আঙ্গর মেলা খোঁজখবর রাখেন। ঢাকা যাবার সব ব্যবস্থা করেন। আমার চিকিৎসার সব খরচও দিতাছেন।’

২০২০ সালের নভেম্বরে শম্পার ভ্যান চালানোর খবরটি সর্বপ্রথম ইউটিউবে আপলোড করেন বিজয় টিভির জামালপুর প্রতিনিধি জুয়েল রানা। এরপর ধীরে ধীরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে নজরে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

সাংবাদিক জুয়েল রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় ঘুরে দাঁড়িয়েছিল পরিবারটি। কিন্তু ভাগ্যের লীলাখেলায় আবারও পরিবারটিতে অন্ধকারের ছায়া নেমে এসেছে। এখন যদি উপজেলা প্রশাসন আরও কিছু সহায়তা করে তাহলে শম্পা ও তার পরিবার কিছুটা উপকৃত হতো।’

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরান বলেন, ‘শম্পা এবং তার পরিবারের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ করছি। নিয়মিত কথা হয়। এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও নিয়মিত খবর রাখছেন। তাদের সব সহযোগিতায় আমরা ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকব।’

এ বিভাগের আরো খবর