ইটনা উপজেলার ছিলনী গ্রাম থেকে পাসপোর্ট করতে এসেছিলেন হাসিবুর রহমান। সরকারি সংস্থাটির কিশোরগঞ্জ কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখেন মূল ফটক তালাবদ্ধ।
একই উপজেলার পাঁচকাহনিয়া গ্রাম থেকে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করতে আসে মো. শাফিউল্লাহ দেখেন একই চিত্র।
হাসিবুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাড়িতে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি। আজকে একটু সময় করে এসেছিলাম পাসপোর্ট করতে। অফিসের সামনে আসতেই দেখি পুরো অফিস ফাঁকা। ভেতরে, বাহিরে কোথাও কেউ নেই।
‘অন্য দিন অফিসের গেটে যে একজন আনসার সদস্য থাকত আজকে সেও নেই। পরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা শেষে অফিসের সামনে এক দোকানে জিজ্ঞেস করে জানলাম সার্ভার নাকি সমস্যা। তাই চলে যাচ্ছি।’
কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে যেতেই দেখা যায়, নতুন করে পাসপোর্ট করতে আসা এবং সংগ্রহ করতে আসা লোকজন ফিরে যাচ্ছেন।
তাদের মধ্যে একজন তরিকুল ইসলাম। বাড়ি বাজিতপুর উপজেলায়, থাকেন ঢাকায়। চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে ঢাকা থেকে আসেন বাড়িতে।
তিনি বলেন, ‘পাসপোর্টটি সংগ্রহ করতে পারলাম না। আগামীকাল আবার পূজার বন্ধ। একই কথা বলে অফিস থেকেও বার বার ছুটি নেয়া সম্ভব না। একটা বিপদেই পড়ে গেলাম আমি।’
এই সমস্যা কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জাকালিয়া গ্রামের এনামুল হক রাজিবের। তিনিও থাকেন ঢাকায়। পাসপোর্টের জন্য ছুটি নিয়ে কিশোরগঞ্জ আসা।
তিনি বলেন, ‘একদিনের জন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছিলাম। রাতে রওনা দিয়ে ভোরে এসে পৌঁছেছি। আজকে নাকি সার্ভারের সমস্যার কারণে কিছুই করা যাবে না। তাই আবার চলে যাচ্ছি। পরে আবার কবে ছুটি পাব জানি না।’
জেলার হোসেনপুর উপজেলা থেকে পাসপোর্ট করতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘কিছুদিন পূর্বে পাসপোর্ট এসেছিলাম চাচাত ভাইয়ের সঙ্গে। তখন দেখেছি কী পরিমাণ ভিড়! আজ নিজের পাসপোর্ট করতে এসে দেখলাম ভিড় নেই। এই চিত্র দেখে মনে হয়েছিল ভুল করে হয়ত বন্ধের দিনে চলে এসেছি। পরে জানতে পারলাম আজকে নাকি সার্ভার সমস্যা। তাই অফিস তালাবদ্ধ।’
ইটনা উপজেলার রায়টুটী এলাকার বাসিন্দা শামসুর রহমান যাবেন ওমরাহ হজে। পাসপোর্ট হয়ে গেছে জেনে নিতে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘এসে দেখি কেউ নাই। অফিসের গেইটে তালা মারা। কয়েকদিন আগেও দুপুরে এসেছিলাম তখন মানুষের ভিড়ের জন্য ভেতরে ঢুকতে পারিনি। তাই আজকে সকাল সকাল চলে এসেছিলাম। আজকে এসে দেখি অফিস বন্ধ।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন দোকানি বলেন, ‘তিন থেকে চার শ লোক ঘুরে গেছে। অন্যান্য দিন আমাদের দোকানে প্রচুর পরিমাণে ভিড় থাকে, আজকে একদম ফাঁকা।’
সার্ভার সমস্যা হলে কেন অফিস বন্ধ করে চলে যেতে হবে- জানতে কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মুরাদ চৌধুরীর মোবাইলে কল করা হলে বলেন, ‘আমাদের সব কাজ তো অনলাইনে। তাই সার্ভারে সমস্যা থাকলে সেগুলো করা সম্ভব হয় না। তাই বলে দিয়েছি অন্যদিন আসতে।’
তথ্য বাতায়নে দেওয়া ইমিগ্রেশন অফ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরীর নম্বরে ফোন করা হলে কলটি রিসিভ করেন সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গতকাল থেকেই সার্ভারে সমস্যা হচ্ছে। সেটি সমাধানে আমরা কাজ করছি। আশা করি কিছুক্ষণের মধ্যেই সার্ভারের সমস্যাটি সমাধান হয়ে যাবে।’
সার্ভারে সমস্যা থাকলে কি অফিস বন্ধ রাখতে হবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অফিস টাইমে বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।’
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জেনেছি। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, ‘সার্ভারে সমস্যা থাকলেও অফিস চলাকালীন সময়ে তালাবদ্ধ করে চলে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’