বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাঁচগাঁওয়ে ব্যতিক্রমী লাল দুর্গা

  •    
  • ৪ অক্টোবর, ২০২২ ০৯:১৮

মৌলভীবাজারের রাজগনর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে যে লালরঙা দুর্গা পূজিত হয়, উপমহাদেশে আর কোথাও এর নজির দেখা যায় না। এই প্রতিমা দেখতে প্রতিবছর দুর্গাপূজায় স্থানীয়, জাতীয় এমনকি ভারতের অনেক অঙ্গরাজ্য থেকে ভক্তের সমাগম ঘটে পাঁচগাঁও মন্দিরে।

দুর্গাপূজাকে বিশ্বজনীন স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। প্রতি বছর এ উপমহাদেশে কয়েক লাখ পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এসব মণ্ডপে প্রধান আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন রূপ-ঢঙে নির্মিত দুর্গা প্রতিমা। কয়েক লাখ দুর্গা প্রতিমার মধ্যে ব্যতিক্রম পাঁচগাঁওয়ের লালরঙা প্রতিমা বা লাল দুর্গা।

মৌলভীবাজারের রাজগনর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে যে লালরঙা দুর্গা পূজিত হয়, উপমহাদেশে আর কোথাও এর নজির দেখা যায় না। এ প্রতিমা দেখতে প্রতি বছর দুর্গাপূজায় স্থানীয়, জাতীয় এমনকি ভারতের অনেক অঙ্গরাজ্য থেকে ভক্তের সমাগম ঘটে পাঁচগাঁও মন্দিরে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া প্রায় তিন শ বছর ধরে এই পূজার আয়োজন হয়ে আসছে এখানে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা লালরঙা এই দুর্গা প্রতিমাকে সদাজাগ্রত জ্ঞানে পূজা করেন। সাধারণত দুর্গপূজার দিনগুলোতে লোকেলোকারণ্য হয়ে যায় পাঁচগাঁও গ্রামের কয়েক কিলোমিটার এলাকা। দলে দলে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।

এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, লালরঙা এ দুর্গা প্রতিমার পূজার প্রচলন করেন প্রয়াত সর্বানন্দ দাস। এ নিয়ে এলাকায় বেশকিছু লোকশ্রুতি প্রচলিত আছে।

পূজামণ্ডপের পুরোহিত পরিবারের সদস্য টুটুল ভট্টাচার্য্য জানান, ‘স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাস আসামের শিবসাগরে মুনশি পদে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন সাধক পুরুষ। একবার আসামের কামরূপ-কামাক্ষা বাড়িতে গিয়ে পূজার জন্য পাঁচ বছরের একটি মেয়ে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাকে একটি মেয়ে দেন।

‘সর্বানন্দ দাস সেই মেয়েকে পূজা দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ধীরে ধীরে মেয়েটির রং বদলে লাল হয়ে ওঠে। মেয়েটির মধ্যে স্বয়ং দেবী ভর করেন। মেয়েটি তখন সর্বানন্দ দাসকে বলেন, 'তুমি আমার কাছে বর চাও। আমি তোমাকে বর দিব।'

‘সর্বানন্দ দাস তখন তার কাছে বর চাইলেন। দেবী তখন নির্দেশ দিলেন পাঁচগাঁওয়ের প্রতিমার রং লাল হবে। সাধক সর্বানন্দ দাস দেবীকে রাজনগরের পাঁচগাঁওয়ে যেন দেখা দেন সেই আকুতি জানান। সেই থেকে এখানে লাল বর্ণের মূর্তির পূজা হয়ে আসছে এবং এখানে সাধনায় প্রসন্ন হয়ে মা দুর্গা তাকে দেখা দেন।’

সাধক সর্বানন্দ দাসের বংশধর সঞ্জয় দাস ১৪১৫ বঙ্গাব্দে নতুন জায়গায় মন্দির স্থাপন করলে পূর্বের অনেক স্মৃতিচিহ্ন হারিয়ে যায়। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী মন্দিরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। মন্দির পুড়ে গেলেও দেবীর পুরোনো গহনা অক্ষত ছিল। তবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মূর্তি নির্মাণ করে পূজা করা সম্ভব হয়নি।

দুর্গাপূজায় লাল দুর্গার মণ্ডপকে ঘিরে এখানে অস্থায়ী মেলা বসে। বিভিন্ন ধর্মীয় জিনিসপত্র ও দেবদেবীর ছবি মূর্তিসহ কয়েক শ দোকানে বেচাকেনা হয়।

এবারের পূজার পরিচালক সঞ্জয় দাশ জানান, এবারও পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা রাত-দিন কাজ করছেন।

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশ মোতায়েন আছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে প্রতিটি পূজার জন্য।

এ বিভাগের আরো খবর