বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একই আঙিনায় মন্দির ও মসজিদ

  •    
  • ৪ অক্টোবর, ২০২২ ০৮:৪৭

লালমনিরহাটে একই খতিয়ানের একই দাগের জমিতে পুরান বাজার জামে মসজিদ ও কালীবাড়ি সর্বজনীন মন্দির। আজান ও নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ রাখেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। ২০০ বছর ধরে অটুট এই সম্প্রীতির বন্ধন।

একপাশে মন্দিরের উপাসনা, আরেকদিকে মসজিদে ইবাদত বন্দেগি। এক পাশে উলুধ্বনি, অন্য পাশে চলছে আজান ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। এক পাশে ছড়াচ্ছে ধূপকাঠি, অন্য পাশে আতরের সুঘ্রাণ।

লালমনিরহাট জেলা শহরে পুরান বাজার এলাকায় একই আঙিনায় প্রায় ২০০ বছর ধরে সহাবস্থান মন্দির ও মসজিদের। একই খতিয়ানের একই দাগের জমিতে পুরান বাজার জামে মসজিদ ও কালীবাড়ি সর্বজনীন মন্দির।

গত শনিবার দুপুরে মহাষষ্ঠী পূজায় দেখা গেছে, জোহরের নামাজের আজানের সময় থেকে নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের মাইক, ঢাক-ঢোলসহ যাবতীয় শব্দ বন্ধ রেখেছেন মন্দিরের হিন্দুরা। নামাজের জামাত শেষ হলে মন্দিরের পূজার্চ্চনার কার্যক্রম শুরু হয়।

এভাবে শৃঙ্খলা বজায় রেখে একই উঠানে দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে আসছে উভয় ধর্মের মানুষ। পুরান বাজার জামে মসজিদ এবং কালীবাড়ি দুর্গামন্দির ও কালীমন্দির পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। দুটি স্থাপনার দেয়াল প্রায় একসঙ্গে লাগোয়া। এ যেন ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

১৮৩৬ সালে দুর্গামন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে পুরান বাজার এলাকাটি অনেকের কাছে কালীবাড়ি নামে বেশি পরিচিত। মন্দিরটিতে রয়েছে কালী মূর্তি, মহাদেব ও বাবা লোকনাথ। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় স্বাভাবিক নিয়মে চলছে এসব দেবদেবীর পূজার্চনা। এ ছাড়া এখানে রয়েছে দুর্গামন্দির। প্রতি বছর জাঁকজমক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় শারদীয় দুর্গোৎসব।

পরবর্তীকালে ১৯০০ সালে মন্দির প্রাঙ্গণে একটি নামাজের ঘর নির্মিত হয়। পরে নামাজের ঘরটিই পরবর্তী সময়ে পুরান বাজার জামে মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে। এটি জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ। এখানে নামাজ আদায় করতে দূর-দূরান্ত থেকেও আসেন মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে এই মসজিদে সব সময় মুসলিমদের ভিড় থাকে।

স্থানীয়রা বলেন, কালীবাড়ি মন্দিরটি প্রায় ২০০ বছরেরও পুরনো। তৎকালীন মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পূজার্চনা করতেন। তারা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও মন্দিরটি থেকে যায় অক্ষত। পরবর্তী সময়ে অবকাঠামোগত কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে মন্দিরে। দুর্গাপূজা যখন শুরু হয়, সে সময় এলাকাটি হয়ে ওঠে নয়নাভিরাম ও আনন্দমুখর।

মন্দিরের পুরোহিত সঞ্জয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘মন্দিরে নিয়মিত পূজার্চনা হয়। আজান ও নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়। ধর্মীয় সম্প্রীতির বিঘ্ন ঘটে– এমন অবস্থার মধ্যে আমাকে কোনো দিনই পড়তে হয়নি বরং স্থানীয় মুসল্লিদের সহযোগিতা পেয়ে আসছি। উভয় ধর্মের বাসিন্দারা এটা নিয়ে গর্ব করেন। বিশ্বজুড়ে চলমান সহিংসতা আর সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের মধ্যে এমন দৃশ্য নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি অটুট ছিল, আছে আর থাকবে। কোনো দিনই এই সম্প্রীতিতে কোনো দাগ পড়েনি আর পড়বেও না। সারা বিশ্বেও যদি ধর্মীয় সহিংসতা বাধে, তবুও এখানকার ধর্মীয় সম্প্রীতি অটুট থাকবে- এটাই আমাদের বিশ্বাস।’

পুরান বাজার জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে একই উঠানে দুইটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। আমরা মুসলমান এবং হিন্দুরা যে যার ধর্ম সুষ্ঠুভাবে পালন করে আসছি। আমরা নামাজ পড়ছি, তারা পূজা করছেন। কেউ কারো ধর্মে কোনো হস্তক্ষেপ করে না। আমাদের উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে ধর্মীয় আচার-বিধি পালন করা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’

এ মসজিদের ইমাম মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘মন্দিরটি মসজিদের আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করে। নামাজের সময় মন্দিরের ঢাকঢোল বন্ধ রাখে তারা।’

কালীবাড়ী মন্দিরের সভাপতি ও পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী জানান, ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এলাকার নামকরণও করা হয় কালীবাড়ি। পরে সে সময় সেখানে বাজার গড়ে উঠলে বাজারের ব্যবসায়ী ও শহরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন্দিরের পাশেই প্রতিষ্ঠা করেন পুরান বাজার জামে মসজিদ। সেই থেকে এক উঠানে চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কার্যক্রম। আমার জন্মের পর থেকেই দেখছি এভাবে চলতে। কোনো সমস্যা হয়নি, হবেও না।’

এ বিষয়ে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একই সঙ্গে মসজিদ ও মন্দির আসলেই আমি অভিভূত। এখানে যার যার ধর্ম, তারা পালন করছেন, কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তাছাড়া মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মালম্বী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। জেলায় ৪৬৪টি পূজামণ্ডপ এবারে চলছে।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ‘একই উঠানে মসজিদ-মন্দির হলেও উভয় ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে থেকে স্ব-স্ব ধর্ম পালন করে আসছেন। এখানকার মানুষ সব ধর্মে বিশ্বাস করে। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে চলছে এ সম্প্রীতির বন্ধন। আমরা প্রশাসনের তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর