রাজধানী ঢাকায় এবার ২৪১টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। এর মধ্যে জমকালো আয়োজনের কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে দেখতে বোনকে নিয়ে বের হয়েছেন পূজা বৈদ্য।
বনানীতে এক মণ্ডপের সামনে সোমবার বিকেলে কথা হলো এই পুণ্যার্থীর সঙ্গে। এবারের অভিজ্ঞতা কেমন জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বললেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মণ্ডপ হয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছি। সেখানে অনেক ভিড়। আর বৃষ্টির বাগড়া না থাকলে তো ওদিকে ঢোকাই যেত না।
‘ওদিকে ঘোরাঘুরি শেষ করে এদিকে এলাম। এ পর্যন্ত যে ক’টি পূজা মণ্ডপ ঘুরেছি, সব জায়গায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেখেছি। দেখলাম উপস্থিত লোকজনও নিরাপত্তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছে। সার্বিক আয়োজন দেখে খুব ভালো লাগছে।’
বনানীর মণ্ডপে পূজা দেখতে আসা ড. শংকর বললেন, ‘পূজায় এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা খুব ভালো। গত দুই বছর করোনার কারণে বের হতে পারিনি। এবার সার্বিক ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে আয়োজন সবই খুব সুন্দরভাবে করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।’
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বনানী থানার সাব-ইন্সপেক্টর নুর ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে দুই বছর পর এমন জমজমাট পূজার আয়োজন নিয়ে সবাই বেশ খুশি। এখানে আগতদের সবার মাঝেই দেখা যাচ্ছে খুশির আমেজ। দুদিন ধরে এখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছি। কোনো অনিয়ম হয়নি।’
গুলশান-বনানী পূজামণ্ডপের প্রবেশপথে কড়া নিরাপত্তা। ছবি: নিউজবাংলা
প্রায় একইরকম চিত্র দেখা গেছে ফার্মগেটের বড় পূজা মণ্ডপটিতে। গেটে জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে এই মণ্ডপে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড়টা তুলনামূলক কম দেখা গেছে।
মা-বাবার সঙ্গে এখানে পূজা দেখতে এসেছে পূজা ঘোষ। এই কিশোরীর অভিব্যক্তি, ‘এবার অন্যরকম আনন্দ লাগছে। দুই বছর পর পূজায় মনের মতো ঘুরতে পারছি। করোনার জন্য গত দুই বছর একদম বের হতে পারিনি। আরও মণ্ডপ দেখব। খুব খুশি লাগছে।’
বন্ধুদের নিয়ে একই মণ্ডপ পরিদর্শনে এসেছেন সোহাগ হোসেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী না হয়েও কেন এসেছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এই ধর্মের অনুসারী নই এটা সত্য। তবে আনন্দ-উৎসব দেখতে তো সবারই ভালো লাগে। প্রতিবছরই আমি পূজা দেখতে বের হই। বন্ধুদের নিয়ে আনন্দ উপভোগ করি।’
মণ্ডপের সামনে চুপচাপ বসে ছিলেন অবিনাশ রায় নামে মাঝবয়সী এক পুণ্যার্থী। তিনি বললেন, ‘বছরে একবার মা আসেন। মুখ দর্শন করতে পারি। করোনার জন্য গত দুই বছর ভালো করে মায়ের দর্শন পাইনি। এবার একটু ভালো করে দেখতে পাচ্ছি। এতেই আমি খুশি।’
বনানী ও ফার্মগেটের দুটি পূজামণ্ডপেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই দর্শনার্থীর আসা-যাওয়া বাড়তে দেখা যায়। তবে উপচেপড়া ভিড় ছিল না বললেই চলে। অনেকেই বললেন, বৃষ্টির জন্য ভিড়টা তুলনামূলক কম। আবার কেউ কেউ বললেন- রাতে ভিড় বাড়বে।
ভিড় যেমনই হোক, মণ্ডপে আগত সব পুণ্যার্থীকে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। একইসঙ্গে চলেছে খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার তৃতীয় দিনে মহাঅষ্টমীতে সরেজমিনে এমন চিত্রই দেখা গেছে।