সিরাজগঞ্জের বেলকুচির মবুপুরে মা ও ২ ছেলেকে হত্যা রহস্যের জট খুলেছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত রওশন আরার সৎ মামাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘বেলকুচিতে ট্রিপল মার্ডারের মূল আসামিকে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে স্বক্ষম হয়েছি।’
এর আগে গত শনিবার বেলকুচি উপজেলার মবুপুর গ্রামে সুলতান আলীর স্ত্রী রওশন আরা বেগম এবং তার দুই ছেলে ১০ বছরের জিহাদ ও ৪ বছর বয়সী মাহিমের মরদেহ তালাবদ্ধ বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
উদ্ধারের ২-৩ দিন আগে তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করে পুলিশ। কারণ উদ্ধারের সময় মরদেহগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল।
মরদেহ উদ্ধারের পরদিন সকালে নিহত রওশনের ভাই নুরুজ্জামান অজ্ঞাত আসামি করে বেলকুচি থানায় একটি মামলা করেন।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জরিতদের গ্রেপ্তার করতে মাঠে নামে পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা।
এরই ধারাবাহিকতায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত রওশনের সৎ মামা আইয়ুব আলী সাগরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা।
গ্রেপ্তার সাগর উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাতী গ্রামের মৃত মোকছেদ আলীর ছেলে। সাগরকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
পুলিশ সুপার জানান, সাগর পেশায় একজন তাঁত শ্রমিক। এ পেশার আয় দিয়ে সংসার চালাতে না পেরে তিনি বিভিন্ন সময় ব্র্যাক, সাউথ বাংলা, মানবমুক্তি ও তাঁতী সমিতির এনজিও থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েছেন। একসময় সংসারের খরচ এবং এনজিওর কিস্তি একসঙ্গে চালানো তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
ঋণে জর্জরিত সাগর প্রায়ই তার ভাগনি রওশনের বাসায় যাতায়াত করতেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বরও তিনি রওশন আরার বাড়িতে গিয়ে কিছু টাকা ধার চান। কিন্তু টাকা নেই বলে রওশন ধার দিতে অপারগতা জানান।
এ অবস্থায় ভাগনির বাসায় চুরি করার সিদ্ধান্ত নেন সাগর। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আবারও রওশনের বাড়িতে যান তিনি। রাতে সাবার সঙ্গে খাবার খেয়ে একই ঘরে তারা ঘুমিয়ে পড়েন।
মাঝরাতে চুরির উদ্দেশে রওশনের আঁচল থেকে সিন্ধুকের চাবি খুলে নেন সাগর। সিন্ধুক খুলে তিনি টাকা ও গহনা খুঁজতে থাকেন।
এ সময় রওশন জেগে ওঠলে পাশে থাকা পাথরের শিল দিয়ে তার বুকে আঘাত করে গলা টিপে হত্যা নিশ্চিত করেন সাগর। পরে আবার তিনি টাকা ও গহনা খুঁজতে থাকেন।
এক পর্যায়ে রওশনের ছোট ছেলে মাহিন জেগে উঠে কান্না শুরু করলে সাগর তাকেও গলা টিপে হত্যা করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে রওশনের বড় ছেলে জিহাদও জেগে ওঠে। পরে তাকেও একইভাবে হত্যা করা হয়।
তিনজনকে হত্যার পরও রওশনের ঘর থেকে টাকা ও গহনা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন সাগর। পরে ফজরের আজান হলে ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে তালা দিয়ে তিনি চলে যান।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাগরকে আদালতে পাঠানো হবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।