দুর্গাপূজার ছুটিতে ভারতে যাতায়াতকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন ও নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায়।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে সময় না লাগলেও ভারতীয় ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে সময় লাগছে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। একজন যাত্রী সকালে লাইনে দাঁড়ালে ওপারে পৌঁছাচ্ছেন সন্ধ্যায়।
যাত্রীদের অভিযোগ, ভারতের অংশে ইমিগ্রেশনের জনবলস্বল্পতা ও কর্মকর্তাদের ধীরগতির কারণে এমন ঘটনা ঘটছে।
করোনার কারণে গত দুই বছর দুর্গাপূজায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভারতে যেতে পারেননি। তাই এবারের পূজা দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার সনাতন ধর্মী বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশটিতে যাচ্ছেন। আবার ভারতে সরকারি ছুটি বেশি হওয়ায় অনেকেই আসছেন বাংলাদেশে।
এসব যাত্রীর অনেকেই যাচ্ছেন বেড়াতে, কেউ চিকিৎসা, ব্যবসা, পড়াশোনাসহ নানা কাজে যাতায়াত করছেন।
গত শনি ও রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, যারা ভারতে পূজা দেখতে বা অন্য কাজে যাচ্ছেন, তাদের ভারতের ইমিগ্রেশন ও নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অসুস্থ যাত্রীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
যাত্রীদের বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সহজে শেষ হলেও পেট্রাপোলে পড়ছেন ভোগান্তিতে।
হাজার হাজার যাত্রীকে গরমের মধ্যেই রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকে সেখানেই অসুস্থও হয়ে পড়েছেন।
রোববার ফিরে যাওয়ার সমর সাহা নামে এক ভারতীয় নাগরিক বেনাপোল থেকে ভারতে প্রবেশের পর বলেন, ‘বেলা ১১টার সময় বেনাপোল ইমিগ্রেশন পার হতে আমার সময় লাগে ১০ মিনিটের মতো। বেনাপোল ইমিগ্রেশন থেকে এসে নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় হাজার হাজার যাত্রীর লাইনে দাঁড়ালাম। লাইন কোনো রকমে আগে বাড়ে না। কে আগে যাবে এ নিয়ে ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে কয়েকজন যাত্রী মাটিতে পড়ে যান।
‘এখানে দেখার কেউ নেই। টানা রোদের মধ্যে নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় ৪ ঘণ্টা থাকার পর বেলা ৩টার দিকে ভারতীয় ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছালাম।’
তিনি জানান, পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পার হতে তার সময় লাগে আরও ঘণ্টাখানেক।
পেট্রাপোলের ইমিগ্রেশন কেন্দ্রে দেখা যায়, ২০টির মতো ডেস্ক থাকলেও সেখানে লোকবল মাত্র ছয়-সাতজন। ফলে সময় বেশি লাগছে।
গত শুক্রবার ভারত থেকে ফিরে আসা সফিকুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তার পেট্রাপোল চেকপোস্ট থেকে বেনাপোলে আসতে সময় লেগেছে সাড়ে ৫ ঘণ্টা।
তিনি বলেন, ‘বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে কাজের ধীরগতির কারণে পাসপোর্ট যাত্রীরা নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ইমিগ্রেশন অভ্যন্তরে ডেস্কের সংখ্যা বেশি থাকলেও তিন-চারজন ইমিগ্রেশন অফিসার কাজ করছেন। যাত্রীরা ভোর ৬টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে দেশে আসতে।’
সীমান্তে বিভিন্ন বাহিনী দায়িত্ব পালন করলেও যাত্রীদের লাইনে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না। এ ছাড়া দালালরাও টাকা নিয়ে ইমিগ্রেশন পার করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অনেক যাত্রী।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, ‘বাংলাদেশ অংশে যাত্রীদের যাতে কোনো দুর্ভোগ না হয় তার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। রাত-দিন যাত্রীসেবা বাড়ানো হয়েছে। ওপারে যাত্রী দুর্ভোগের ব্যাপারে ভারতীয় কতৃর্পক্ষের সঙ্গে সমস্যা সমাধানে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, তারা বেনাপোল দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সেবায় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ যাত্রী থাকছে, ততক্ষণ ইমিগ্রেশন খোলা রেখে কাজ করা হয়। আমাদের বেনাপোল ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের সময় লাগে না। নতুন করে সিনিয়র সিটিজেন ডেস্ক, মুক্তিযোদ্ধা ডেস্ক, রোগী ডেস্ক করে দেয়ায় মান বেড়েছে।’
ওসি বলেন, ‘এপারে সময় না লাগলেও পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে অনেক সময় নিয়ে পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হচ্ছে। নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায়ও নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে জানা গেছে। আমরা পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে কাজের গতি বাড়াতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু ওরা চলে ওদের মনমতো।’