বিয়ের সাড়ে পাঁচ মাসের মাথায় বগুড়ার আদমদীঘিতে সৈয়দা সারা আহম্মেদ প্রিয়াসা নামে এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার রাতে উপজেলার ডহরপুর গ্রাম থেকে প্রিয়াসার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে নাসিরুল্লাহ হক ঐক্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার দুপুরে তাকে আদালতে নিলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
২৩ বছর বয়সী প্রিয়াসা নওগাঁ শহরের জনকল্যাণ এলাকার জসিম উদ্দিনের মেয়ে। নাসিরুল্লাহর বাড়ি আদমদীঘি উপজেলার ডহরপুরে।
প্রিয়াসার পরিবারের দাবি, নির্যাতন করে হত্যার পর তাকে ফ্যানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। নাসিরুল্লাহর পরিবার বলছে আত্মহত্যা।
আদমদীঘি থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা এসব বিষয় জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, নাসিরুল্লাহর সঙ্গে নওগাঁ শহরের সারা আহম্মেদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চলতি বছরের ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় তারা নিজেরা বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হতে থাকে।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে স্বামীর বাড়ি ডহরপুর গ্রামে নিজের ঘরে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো মরদেহ দেখতে পান পরিবারের লোকজন। পুলিশ গিয়ে মরদেহ থানায় নেয়।
পুলিশ জানায়, রোববার দুপুরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
প্রিয়াসার বড় বোন শারমিন আক্তার লাবনী বলেন, ‘আমার বোনকে ফুসলিয়ে নাসিরুল্লাহ তার বাড়িতে নিয়ে বিয়ে করে। সে মাদকাসক্ত, যা আমরা পরে জানতে পারি। নানা কারণে সে আমার বোনকে জ্বালাতন করত। প্রিয়াসা আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে।
‘ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিলে ফ্যান বাঁকা হয়ে থাকত। আর জানালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করলে জানালা ভাঙার চিহ্ন থাকত, সে ধরনের কোনো আলামত নেই।’
একই অভিযোগ করেন প্রিয়াসার মা ইয়াছমিন আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘পারিবারিক নানা কারণে আমার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এখন তারা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। থানায় শনিবার আমাদের অভিযোগ নেয়া হয়নি।
‘রোববার দুপুরে অভিযোগ নিয়েছে। আমি নিজেই থানায় অভিযোগ করেছি। তদন্তের পর সত্যতা পেলে নাকি মামলা হিসেবে রেকর্ড করবে।’
হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাসিরুল্লাহর মা খন্দকার নিসরাত বানু। তার ভাষ্য, ‘আমার বউমা অভিমান করেই আত্মহত্যা করেছে। আমরা বা আমার ছেলে কেন তাকে হত্যা করবে। তারা ভালোবেসে বিয়ে করেছিল, আমরা মেনেও নিয়েছিলাম। বিয়ের পর সব পরিবারে মান-অভিমান একটু থাকেই। সে অভিমান করে যে আত্মহত্যা করবে, তা আমরা বুঝতে পারিনি।’
আদমদীঘি থানার ওসি রেজাউল জানান, প্রিয়াসার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তিনজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন তার মা ইয়াছমিন আহম্মেদ। সেই মামলায় নাসিরুল্লাহকে আদালতে নিলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ওসি বলেন, ‘প্রিয়াসার দেহে অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা ময়নাতদন্তের পরই জানা যাবে। আমরা সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করছি।’