কোটা এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিতে স্ত্রীকে বোন বানিয়ে এনআইডি জালিয়াতি করে সমালোচিত কুড়িগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের ছেলে আনিসুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রংপুর আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা আছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আনিসুর রংপুর বেতারের অফিস সহকারী। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর সন্তোষপুর ইউনিয়নে।
তাকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নবিউল হাসান।
তিনি জানান, আনিছুর রহমানের নামে রংপুর আদালতে চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত এনআই অ্যাক্ট ১৩৮ ধারায় একটি মামলা আছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তাকে শনিবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আনিছুরের জালিয়াতির নানা তথ্য। নিউজবাংলায় প্রকাশিত “কোটা সুবিধা নিতে স্ত্রীকে বোন বানালেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুযোগ-সুবিধা পেতে স্ত্রীকে তিনি বোন বানিয়ে এনআইডি তৈরি করিয়েছেন।
নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের কুটিনাওডাঙ্গা আমিরটারী তালবেরহাট গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের ৮ ছেলে-মেয়ে। তাদের মধ্য সবার বড় আনিছুর রহমান।
২০০৭ সালে জেলার উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগড়াকুরা বাজার এলাকার মৃত রবিউল ইসলামের মেয়ে সোনালী খাতুনকে বিয়ে করেন আনিসুর। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সোনালী সবার ছোট। আনিছুর-সোনালী দম্পতির ঘরে যমজসহ বর্তমানে তিন সন্তান রয়েছে।
তবে বিয়ের পর উপজেলার সাপখাওয়া দাখিল মাদ্রাসায় নিজের শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা হিসেবে তথ্য দিয়ে ২০১০-১১ সেশনে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হন সোনালী। ২০১৩ সালে জিপিএ-২.৯৪ পেয়ে দাখিল পাস করেন তিনি।
পরে দাখিল পাসের সনদ ও ভুয়া জন্মনিবন্ধন দেখিয়ে ২০১৪ সালে ভোটার হন সোনালী। সনদ অনুসারে মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুর আইনুল হককে নিজের বাবা ও শাশুড়ি জামিলা বেগমকে নিজের মা হিসেবে তথ্য দেন তিনি।
আনিছুর রহমানের সঙ্গে সে সময় যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন, স্ত্রীকে বোন বানানোর বিষয়টি ভুলবশত হয়েছে। তার স্ত্রী এমনটি করেছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে আনিসুরের স্ত্রী সোনালী খাতুন কথা বলতে রাজি হননি।
এর আগে আনিছুর ও তার ভাই আজিজুল হক তথ্য গোপন করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন বলেও অভিযোগ আছে। এনআইডিতে দুই ভাইয়ের একই নাম হলেও আলাদা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
২০১২ সালে রংপুর বেতারে অফিস সহায়ক পদে চাকরি নেন আনিছুর। আর ২০১৪ সালে রেলওয়ের ওয়েম্যান পদে অষ্টম শ্রেণি পাসের যোগ্যতা দেখিয়ে চাকরি পান আনিসুরের ছোট ভাই আজিজুল হক।
চাকরি নিতে তথ্য গোপনের আশ্রয় নেন আজিজুল। এ ক্ষেত্রে তিনি তার আগের ভোটার আইডি সংশোধন করেন।
বড় ভাই আনিসুরের সব তথ্য ব্যবহার করে তিনি এনআইডি সংশোধন করেন। পড়াশোনা না করেও তিনি বড় ভাই আনিছুর রহমানের অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদ ব্যবহার করেন।
আগের ভোটার আইডিতে আজিজুল হকের জন্মসাল ছিল ১৯৮৭ সালের ৫ এপ্রিল। পেশা ছিল কৃষক। নতুন আইডিতে তার জন্মের সাল-তারিখে লেখা ১৯৮২ সালের ৭ জুলাই।
জাতীয় পরিচয়পত্রে তথ্য গোপন করে নাম পরিবর্তন করলেও স্বাক্ষর পরিবর্তন করেননি আজিজুল হক।
২০১৪ সালে এনআইডিতে তথ্য গোপন করে চাকরি করার সংবাদ গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। পরে তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন দুই ভাইয়ের নামে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে মামলার নির্দেশ দেয়।
২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচন অফিসার আনোয়ার হোসেন তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেন।