ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকেন্দ্রিক অজ্ঞান পার্টি চক্রের হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব বলছে, প্রায় ৩০০ জনকে অজ্ঞান করেছে চক্রটি। ১৫ বছর ধরে এ এলাকায় সক্রিয় তারা। শনিবার রাজধানীর বিমানবন্দর ও কদমতলী এলাকায় র্যাব-১ তাদের ধরতে অভিযান চালায়।
চক্রের হোতা মো. আমির হোসেন। তার বাড়ি বরিশাল জেলায়। গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন মো. লিটন মিয়া ওরফে মিল্টন, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে পারভেজ এবং জাকির হোসেন। তাদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত ট্যাবলেট, যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণে ব্যবহৃত লাগেজ ও চোরাই স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।
রোববার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
দীর্ঘ সময় ধরে চক্রটি প্রায় ৩০০ প্রবাসীকে কৌশলে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত ২ সেপ্টেম্বর একজন কুয়েতপ্রবাসী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। এরপর চক্রটির একজন সদস্য বিমানবন্দর থেকে ওই প্রবাসীকে অনুসরণ করতে থাকে।
‘ওই ব্যক্তি আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে উত্তরবঙ্গগামী বাস কাউন্টারে টিকিট কাটতে গেলে কাউন্টারের পাশে আগে থেকেই যাত্রীর ছদ্মবেশে অনস্থান করছিল চক্রের হোতা আমির হোসেন। আমির হোসেন তার কাছে থাকা অতিরিক্ত বাসের টিকিট বিক্রি করেন।’
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমির তার সঙ্গে থাকা একটি লাগেজ ও কিছু কুয়েতি দিনার দেখিয়ে ওই ব্যক্তির কাছে নিজেকে প্রবাসী পরিচয় দিয়ে একসঙ্গে বাসে উঠে একপর্যায়ে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খেতে দেন।
‘পরে বিস্কুট খাওয়ার পর ওই প্রবাসী অজ্ঞান হয়ে যান। এরপর চক্রটি তার সব মালামাল লুট করে নিয়ে মাঝপথে বাস থেকে নেমে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রবাসী গত ৬ সেপ্টেম্বর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেন।’
চক্রের সদস্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব মুখপাত্র জানান, সংঘবদ্ধ অজ্ঞান পার্টির এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। তারা বিভিন্ন পেশার আড়ালে গত ১৫ বছর ধরে হাতে পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে প্রবাসফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করে এসব করতেন।
চক্রের সদস্যদের সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন জানান, আমির হোসেন বিমানবন্দরকেন্দ্রিক ওই অজ্ঞান পার্টি চক্রের হোতা। তিনি মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পরবর্তী সময়ে বিমানবন্দর এলাকায় একটি ফাস্টফুডের দোকানে চাকরির আড়ালে ১৫ বছর ধরে এই অপকর্মে জড়িত।
আমির হোসেনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫টির বেশি মামলা রয়েছে এবং তিনি একাধিকবার কারা ভোগ করে জামিনে ছিলেন। লিটন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি মাইক্রোবাসের চালক হিসেবে পরিচিত হলেও ওই পেশার আড়ালে ৩-৪ বছর ধরে আমিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছেন।
র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, জাকির হোসেন ছাপাখানার ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন। আবু বক্কর ৮-৯ বছর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। চক্রের আরও ৬-৭ জন বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিলেন, যারা বর্তমানে কারাগারে।