কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার পাওয়া গেছে ১৫ বস্তা টাকা। ৩ মাস ১ দিনে প্রায় ৪ কোটি টাকা জমা পড়েছে মসজিদটিতে।
দিনভর গুনে দেখা গেছে, সেখানে জমা পড়েছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। এ ছাড়াও পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা বাক্স কমিটির আহ্বায়ক এটিএম ফরহাদ চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সর্বশেষ গত ২ জুলাই দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ৩ মাস ২০ দিনে এই দানবাক্সগুলোতে জমা পড়েছিল ১৬ বস্তা টাকা। পরে ওই বস্তাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে দিনভর গণনা শেষে পাওয়া যায় ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৮ হাজার ৪১৫ টাকা। সেবারও বৈদেশিক মুদ্রাসহ সোনা ও রুপা ছিল।
ইতোপূর্বে সবচেয়ে বেশি টাকা পাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল চলতি বছরের ১২ মার্চ। সেদিন ৪ মাস ৬ দিনের ব্যবধানে ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকাসহ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছিল।
এবার ৩ মাস যেতে না যেতেই অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শনিবার সকাল পৌনে ৯টায় দানবাক্সগুলো খোলা হয়। পরে বাকশের টাকা বস্তায় ভরা হয়।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বস্তা থেকে টাকাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। গণনা চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। এতে অংশ নেন ১১২ জন মাদ্রাসা ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ ও মসজিদ কমিটির ৩৪ জন।
মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, মসজিদে দানবাক্স রয়েছে ৮টি। সেখানে প্রতিনিয়ত মানুষ সহায়তা দেন। করোনা সংক্রমণের শুরুতে মসজিদে মুসল্লিদের চলাচল এবং নারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকলেও দান অব্যাহত ছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের হাফিজিয়া মাদ্রাসার খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়।
ইতোপূর্বে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদেরও এই দানের টাকা থেকে সহায়তা করা হয়েছে।
মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। মনের আশা পূরণের জন্য তারা এই দান করেন।
দানবাক্স খোলার পর থেকেই গণনা দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় জমান উৎসুক মানুষ। তাদের একজন এনামুল হক হৃদয়। তিনি পাকুন্দিয়া উপজেলার বাসিন্দা।
হৃদয় বলেন, ‘মানুষের মুখে আর বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকায় পাগলা মসজিদের দানবাক্সে জমা পড়া টাকার কথা শুনি। গতবারও দেখতে এসেছিলাম। এবার আবারও নিজ চোখে দেখতে এসেছি। সত্যিই এত পরিমাণ টাকা একসঙ্গে কখনও দেখিনি।’
গণনার কাজে নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্য নিজাম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার দেশের বাড়ি টাঙ্গাইল। গণনা দেখে খুব ভালো লাগছে। টাকার অনেক ছবি তুলে বাড়িতে পাঠিয়েছি।’
গণনায় অংশ নেয়া হেফজখানা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, দানবাক্স খোলার পর থেকে গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করেন।
পাগলা মসজিদের নৈশপ্রহরী মকবুল হোসেন দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘ ২৭ বছর। তিনি বলেন, ‘শুধু মুসলিম না, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে এসে দান করে। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণ হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলও দান করেন অনেকে।’
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা বাক্স কমিটির আহ্বায়ক এটিএম ফরহাদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে দানবাক্সগুলো খোলার সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার জোহরা সুলতানা যুথী ও মোছা. নাবিলা ফেরদৌস, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলামসহ আরও অনেকেই।
এ ছাড়াও দুপুরে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম, পৌর মেয়র ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ মিয়া টাকা গণনা পরিদর্শনে আসেন।
কিশোরগঞ্জের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দার তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমির ওপর অবস্থিত ঐতিহাসিক এই পাগলা মসজিদ।