‘মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলাম। শহরের বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় পড়ে যায় সে। রাস্তা পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় বোঝার উপায় নাই নিচের খানাখন্দ’-বলছিলেন নওগাঁ পৌরসভার উকিলপাড়া মহল্লার বাসিন্দা শারমিন বেগম।
কাগজ-কলমে প্রথম পৌরসভার মর্যাদা পেলেও নেই পর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনসহ নানা সমস্যায় জর্জর এই পৌরসভার বাসিন্দারা যারপরনাই বিরক্ত।
১৯৬৩ সালে পৌরসভার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮০ সালে দ্বিতীয় এবং ১৯৮৯ ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নতি ঘটে। এর জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ। আয়তন প্রায় ৩৮ দশমিক ৩৬ বর্গকিলোমিটার।
পৌরসভার ওয়ার্ড ৯টি এবং মহল্লা ৫৬টি। পৌরসভার ২০টি প্রধান সড়কসহ পাড়া-মল্লার ভেতর দিয়ে আরও ৮০টির বেশি সড়ক আছে। এসব সড়কের ১৩০ কিলোমিটার অংশ পাকা। আধা-পাকা রয়েছে আরও ৪০ কিলোমিটার অংশ। কাঁচা রাস্তা রয়েছে প্রায় ১২০ কিলোমিটার।
সরকারি কলেজ মোড় থেকে থানার মোড়, তাজের মোড় থেকে বিডিআর ক্যাম্প রোড, আলুপট্টি থেকে চণ্ডীপুর রোড, বটতলী মোড়-বাইপাস সড়ক, তাজের মোড়-বউবাজার, ব্রিজের মোড়-কালিতলা, জনকল্যাণ মোড়-দুর্গাপুর, বাটার মোড়-গোস্তহাটির মোড়-কালিতলা, সুলতানপুর-লস্করপুর, পলিটেকনিক্যাল মোড়-আরজি নওগাঁ সড়কের অবস্থা বেহাল।
পার-নওগাঁ বৌবাজার, সরদারপাড়া রোড়, মুরছুলা স্কুল রোড, জনকল্যাণ মোড় থেকে ইঁদুর বটতলী পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের পুরো অংশই ইট-বালু, বালিকা বিদ্যালয় সড়কের ঢালাই ও বিটুমিন উঠে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ আর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া এসব বাস্তায় একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। দেখে মনে হবে রাস্তায় নৌকা চালানোর মতো পানির জমেছে।
পৌরবাসীর অভিযোগ, ‘ক’ শ্রেণির এই পৌরসভার উন্নয়নে তেমন কোনো পরিকল্পনা তৈরি হয়নি। নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করেও সেবা পাচ্ছেন না পৌরবাসী। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক নাই, পর্যাপ্ত ডাস্টবিন নাই, স্যুয়ারেজ লাইন নাই, পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা নাই, সিসি ক্যামেরা নাই, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা নাই, সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ফলে পৌরবাসীর ক্ষোভ দিন দিন বেড়েছে।
শহরের উকিলপাড়া মহল্লার বাসিন্দা শারমিন বেগম বলেন, ‘নির্বাচনের আগে পৌরসভার মেয়রসহ জনপ্রতিনিধিরা নানা সমস্যা নিরসনের আশ্বাস দেন। বছরের পর বছর গেলেও ভালো কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। শুধু কাগজ-কলমেই প্রথম শ্রেণির পৌরসভা।’
তাজের মোড় এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অধিকাংশ রাস্তা বেহাল। বারবার পৌরপিতা নির্বাচন করছি আমরা, কিন্তু তারা চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়ন করছে না। যার কারণে আমরা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’
কলেজ মোড়ের বাসিন্দা তারেক হোসেন বলেন, ‘ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক নাই, পর্যাপ্ত ডাস্টবিন নাই, স্যুয়ারেজ লাইন নাই, পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা নাই, সিসি ক্যামেরা নাই, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা নাই, সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।’
নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ শরিফুল ইসলাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পৌরসভায় প্রথম শ্রেণির হলেও আমাদের যে রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা তা পাই না। বর্জ্য অপসারণ, রাস্তাঘাটের বেহাল, আমাদের এগুলো এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে।
‘পৌরসভার যে বাজেট হয় সেটা দেখতে হবে। বাজেটে পৌরবাসীর জন্য কী কী তারা কাজ করতে চায় এর একটি তালিকা দরকার। এবং এই তালিকার জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে, পৌরবাসীর সুযোগ-সুবিধার জন্য তারা কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে।’
পৌরবাসীর এসব অভিযোগের বিষয়ে মেয়র নজমুল হক সনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছু রাস্তার অবস্থা বেহাল অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের একটি করে মোট ১৩টি রাস্তা এবং শহরের প্রাণকেন্দ্র নওগাঁ বাজারের চারটি রাস্তা আরসিসি ঢালাই করে নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে পারব।
‘অন্য সমস্যাগুলোর দিকেও পৌরসভার নজর আছে। আশা করছি বরাদ্দ পেলে সেগুলো খুব দ্রুতই সমাধান হবে।’
তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে বর্ষার সময়ে স্বাভাবিকভাবেই কিছু সমস্যা হয়। এরই মধ্যে ড্রেন পরিষ্কার কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজগুলো শেষ হলে নওগাঁ শহরের জলাবদ্ধতা থাকবে না।’