সড়দ দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা জারি ও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ। কোয়ালিশন মনে করে, সড়ক পরিবহন আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। ফলে ক্রমাগত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা ৮টি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত এই কোয়ালিশন শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানিয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন নিরাপদ সড়ক চাই-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের সদস্য সংস্থাগুলো হলো- নিরাপদ সড়ক চাই, ব্র্যাক, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বুয়েট), রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটি, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন এবং ইম্প্রেসিভ কমিউনিকেশন লিমিটেড।
সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। চার বছর পার হলেও তা বাস্তবায়নে বিধিমালা তৈরি হয়নি। ফলে সড়ককে নিরাপদ করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও আইনের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, সড়ক পরিবহন বিধিমালা দ্রুত জারি ও এর যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’
তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনার তথ্যে মিল নেই। সেকেন্ডারি ডাটা গণমাধ্যম থেকে পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়। সঠিক তথ্য নির্ধারণে সরকারিভাবে পরিসংখ্যান রাখা উচিত।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০১৮-এর তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সড়ক দুর্ঘটনায়। এর ৯০ ভাগই ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।
সংবাদ সম্মেলনে কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রাম (প্রজেক্ট) ম্যানেজার এম. খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমান সরকার সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে এর সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সড়ক দুর্ঘটনা ও ক্ষতির ব্যাপকতা বহুমাত্রিক হওয়ায় সরকারের একার পক্ষে তা নিরসন করা সম্ভব নয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অন্যতম হলো সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রণয়ন। এই আইনের কিছু সবল দিক থাকলেও এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে প্রচুর। যার মধ্যে অন্যতম হলো- আইনটিতে হেলমেট পরিধানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এর মানদণ্ড ও ব্যবহারবিধি উল্লেখ নেই।
আইনে গতিসীমা লঙ্ঘনে শাস্তির বিধান থাকলেও গতিসীমা নির্ধারণ, এর বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা এবং গাইডলাইন সন্নিবেশিত হয়নি। যাত্রীদের সিটবেল্ট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা ও শিশুদের ক্ষেত্রে চাইল্ড রেস্ট্রেইন্ট বা শিশুদের জন্য নিরাপদ বা সুরক্ষিত আসন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতাও আইনটিতে সংযোজন করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- গ্লোবাল হেলথ্ অ্যাডভোকইস ইনকিবিউটরের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ড. শরিফুল আলম, ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রাম পরিচালক আহমেদ নাজমুল হুসেইন, বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান, বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)-এর পরিচালক ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ, বিএনএনআরসি'র প্রধান নির্বাহী এএইচএম বজলুর রহমান, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর রেজওয়ান নবীন, ইমপ্রেসিভ কমিউনিকেশনস লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুজ্জামান প্রমুখ।