প্রতি বছর পাহাড়ে মাল্টা চাষে বাম্পার ফলন হলেও এ বছর হতাশ চাষিরা। ঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় মাল্টা হয়েছে আকারে ছোট। তবে বাজারে মাল্টার দাম ও চাহিদা অনেক বেশি।
কৃষি বিভাগের সহায়তা মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন মাল্টা চাষিরা। এ অবস্থায় মাল্টা চাষে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। যদিও কৃষি বিভাগের দাবি, সব ধরনের সহায়তা দেয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় মাল্টা বারী-১। এ মাল্টা পাকলেও সবুজ থাকে। সবুজ গাছে সবুজ মাল্টা বেশ রসালো ও খেতে মিষ্টি। এর চাহিদা বেশি, দামও ভালো। তাই মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। জেলার সদর, কাপ্তাই, নানিয়ারচর, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, কাউখালী, রাজস্থলী, লংগদু উপজেলায় মাল্টা চাষ হয়। চলতি বছর এ জেলার মোট ২২০ হেক্টর জমিতে মাল্টা বারী-১ আবাদ করা হয়েছে।
রাঙ্গামাটির বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর বাজারে মাল্টা বিক্রি হচ্ছে খুবই কম। রাঙ্গামাটির প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র বনরূপা বাজারে মাল্টা বিক্রি করতে দেখা গেলেও পরিমাণে খুব কম। এক-দুই ব্যাগ বিক্রি করতে দেখা গেছে চাষি ও ব্যবসায়ীদের। কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা করে। ৮ থেকে ১২টি মাল্টার ওজন এক কেজি। দাম নিয়ে সমস্যা না থাকলেও ফলনে সন্তুষ্ট নন বিক্রেতারা।
মাল্টা বিক্রি করতে আসা খুচরা ব্যবসায়ী সাধন চাকমা জানান, ৮ থেকে ১২টি মাল্টার ওজন এক কেজি হচ্ছে। ক্রেতা খোঁজেন আকারে বড়। দাম নিয়ে সমস্যা নেই। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে মাল্টা বিক্রি খুব কম।
জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাল্টার ফলন হয় নানিয়ারচর উপজেলায়। কিন্তু এ বছর মাল্টা চাষে হতাশ সেখানকার চাষিরা।
২ একর ৩৩ শতক জমিতে ৩০০-এর বেশি মাল্টাগাছের বাগান মাত্র ৩০ হাজার টাকা বলছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা কম দাম বলায় বাজারে নিয়ে এসে খুচরায় মাল্টা বিক্রি করছেন নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ির চাষি সন্তোষ চাকমা। তিনি বলেন, ‘এ বছর ফলন এসেছে, তবে আকারে ছোট। ঠিকমতো বৃষ্টি না হওয়ায় আকার ছোট হয়েছে। মাল্টায় পোকা ধরা ও রোগ দেখা দেয়ায় এ বছর উৎপাদন খুব কম। তা ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কোনো সহায়তা পা্ইনি। বাগানে ব্যবসায়ীরা দাম কম দেয়ায় বাজারে খুচরায় বিক্রি শুরু করেছি। কিন্তু ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী মাল্টা দিতে পারছি না।’
প্রতি বছর মাল্টা বারী-১-এর বাম্পার ফলন হয় রাঙ্গামাটি সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের শুকরছড়ি বোধিপুর এলাকার ত্রিশরণ ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশের মাল্টা বাগানে। এ বছর ৩০ শতক জমিতে ৪০টি মাল্টাগাছে ফলন এসেছে। তবে খরচের তুলনায় ফলন কম বলে জানিয়েছেন ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা ভদন্ত শ্রীমৎ জিনোবোধি মহাস্থবির ভিক্ষু। তিনি বলেন, ‘খরচের তুলনায় মাল্টার ফলন কম। খরচ অনুসারে লাভ হয় না। তা ছাড়া এক শ্রমিককে বেতন দিতে হয় ৫০০ টাকা। সবদিক হিসাব করলে লাভ খুবই কম। খরচ ও পরিশ্রম সবদিক হিসাব করলে এ বছর মাল্টা চাষ তেমন ভালো হয়নি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু সার দিয়েছে। কয়েকবার আলোচনা করেছি যন্ত্রপাতি সহায়তার বিষয়ে। কৃষি বিভাগ থেকে বাগান পরিষ্কারের জন্য যন্ত্রপাতি দিলে মাল্টা চাষে লাভ হতো। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এসব দেয়া হয়নি।’
যদিও সব ধরনের সহায়তা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তপন কুমার পাল। তিনি বলেন, ‘যারা প্রদর্শনী অর্থাৎ প্রকল্পের আওতায় থাকে তাদের স্প্রে মেশিনসহ আরও অনেক কিছু দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে যারা মাল্টা চাষ করেন তাদের শুধু সার প্রয়োগ, মাল্টিং, সেচ ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি পরামর্শ দেয়া হয়। তবে লেবুজাতীয় বিষয়ে একটি প্রকল্প চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের, বিশেষ করে মাল্টা, লেবু ও বাতাবি লেবুজাতীয় বাগান করে দেয়া হচ্ছে।’
ফলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে মাল্টা বাজারে আসছে সেগুলোর এখনও সময় হয়নি। অর্থাৎ মাল্টার সিজন এখনও আসেনি। অক্টোবরের ১৫ তারিখের পরে যে মাল্টা সংগ্রহ হয় তা সিজনাল। তখন বোঝা যাবে এ বছর মাল্টার ফলন কতটুকু হয়েছে।’