উপরে শরতের নীল আকাশ। নীচে দোল খাচ্ছে হলুদ, সাদা ও বেগুনি রংয়ের পদ্ম। পানির উপর ভেসে থাকা বড় বড় পদ্মপাতার উপর ব্যাঙ ও পতঙ্গের খেলা চলে। সেই দৃশ্য দেখতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিলের ধারে মানুষের ভিড়।
এমন দৃশ্য কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রামে। শরতের এ সময় বিলটিতে পদ্মফুলের মেলা বসে। ডাহুক, বক ও পানকৌড়ির আনাগোনা দেখা যায় পদ্মবিলে। তবে দর্শনার্থীরা পদ্ম গাছ ও ফুল ছিড়ে নিয়ে যায়। এ নিয়ে আক্ষেপ স্থানীয়দের।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নেচ্ছা জানান, দক্ষিণগ্রামের পদ্মফুলের আবার অন্য এলাকার ফুলের তুলনায় বড়। তিনি বলেন, ‘এই ফুলে অনেক বেশি পাপড়ি হয়। এই পদ্ম তিন রংয়েরও হয়।’
গত বছর দক্ষিণগ্রামের এই তিন রঙের পদ্মফুল নিয়ে ইউনেসকোর অর্থায়নে গবেষণা শুরু হয়। রাজধানীর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে সেই গবেষণা।
তারা বিলের কিনারায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে পদ্ম না ছিড়তে বা জলাশয়ে গিয়ে মাছও আহরণ করতে নিষেধ করেছিল। তবে এই নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ডটি ভেঙে ফেলেছে দুবৃর্ত্তরা। এতে হুমকির মুখে বিলটি।
কুমিল্লা জিলা স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক দেবরাজ ঘোষ বলেন, ‘দক্ষিণগ্রামের বিলটি সংরক্ষণ করা গেলে পরিবেশের বৈচিত্র্য রক্ষা পেত।’
কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার বানিন রায় বলেন, ‘একই বিলে তিন রংয়ের পদ্ম আর কোথাও ফুটে কিনা আমার জানা নেই। বিলটি সংরক্ষণ করা গেলে খুব ভালো হতো।’
বুধবার বিকেল সাড়ে ৩ টা। কুমিল্লা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণগ্রামে গিয়ে দেখা যায় বিলের ধারে সারি সারি নৌকা ভেসে আছে। দর্শনার্থীরা সেসব নৌকা ভাড়া করে যাচ্ছেন বিলে।
এই নৌকা চালিয়ে ওই এলাকার অন্তত ৫০ টি পরিবার সংসার চালাচ্ছে। এই চালকদের বেশিরভাগ কিশোর ও তরুণ। তাদের একজন তাইফুর আলম। তিনি জানান, শুক্র ও শনিবারসহ যে কোনো সরকারি ছুটির দিন দর্শনার্থীর ঢল নামে। সেদিন গড়ে দুই হাজার টাকা পান নৌকা চালিয়ে।
যারা ঘুরতে আসেন, সবাই সচেতন নয় বলে আক্ষেপ করেন তিনি। বলেন, ‘কেউ কেউ বাড়িতে লাগানোর জন্য গাছ তুলে নিয়ে যান। আমরা অনুরোধ করলেও কথা শোনে না।’
কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স থেকে পদ্মবিলে ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে আসেন আহসান উল্লাহ। এই বিল দেখে যারপরনাই আনন্দিত।
পাশের রাজাপুর গ্রাম থেকে একদল কিশোরও আসে বিল দেখতে। তাদের সবার হাতে ছিল পদ্মফুল। বিল থেকে পদ্ম ছেড়া নিয়ে নৌকার মাঝিদের সঙ্গে তাদের বাক-বিতন্ডাও হয়। কিন্তু কিশোরদের সঙ্গে তারা পেরে উঠেনি।
পদ্মবিলটি সংরক্ষণের বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘এই বিলটি ইতোমধ্যে দেশে বিদেশে সাড়া ফেলেছে। কীভাবে পদ্মবিলটি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা যায় তা নিয়ে ভাবছে জেলা প্রশাসন। নিশ্চয়ই আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’