আত্মপ্রকাশ করেই সরকারবিরোধী তীব্র আন্দোলন গড়ার ঘোষণা দেয়া ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’কে সেভাবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জোট নেতারা নিজেরাও স্বীকার করছেন তারা একটু ধীর গতিতে এগুচ্ছেন। অক্টোবর থেকেই টানা কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তারা।
গত ৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে এই জোট আত্মপ্রকাশ করে। সাতটি ছোট দল ও সংগঠন মিলে করা এই জোটে আছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
জোটের প্রথম কর্মসূচিতে গত ১১ আগস্ট সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের ঘোষণাও দেন জোটের নেতারা। সরকারকে বিদায় না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবার কথা জানিয়ে তারা দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার আহ্বানও জানিয়েছিলেন।
কিন্তু গত এক মাসে নিজেদের মধ্যে একটি আলোচনা সভা ছাড়া জোটের আর কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি। ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে একটি বড় কর্মসূচি করার ঘোষণা দিলেও সেটি হয়নি। তবে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ ডেকেছে জোট।
জাতীয় প্রেসক্লাবে ২১ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন আ স ম রব। ছবি: নিউজবাংলা
নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোটের শরিকদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা আছে, একেক দলের ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা ও লক্ষ্যকে এক করা যাচ্ছে না। আর অতীতের ভূমিকা, নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে মূল্যায়নের পর নেতারা অনুভব করতে পারছেন যে, আসলে তাদের পক্ষে সেভাবে কিছু করা সম্ভব নয়।
ওই জোটের মধ্যে জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জোটসঙ্গী ছিল। এর মধ্যে জেএসডির প্রধান আ স ম আবদুর রব ১৯৮৮ সালে সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হন বিরোধীদলীয় নেতা। প্রধান দলগুলোর বর্জনের মুখে সেই নির্বাচনে এরশাদের সঙ্গে তার সমঝোতার কারণে সে সময় তার দলকে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ হিসেবে কটাক্ষও করা হতো।
এই দুটি ছাড়াও গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবার বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। আবার তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে।
জোট নেতারা অবশ্য জানাচ্ছেন, তারা মাঠে কর্মসূচি না দিলেও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সমন্বয় সাধনে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার বাইরে তৃণমূল পর্যায়েও জোটের কর্মসূটিতে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন নেতারা।
জোটের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা একটু স্লো যাচ্ছি এটা সত্য। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া, ঢাকার বাইরে জেলা ও বিভাগগুলোতে সমন্বয় তৈরি করতে আমরা একটু ব্যস্ত ছিলাম। এই সময়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা করে সময় নিয়েছি।’
অক্টোবর থেকে সরকারবিরোধী ধারাবাহিক কর্মসূচি আসতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকার বাইরেও যাব।’
দলগুলোর কর্মসূচির কারণে জোটের কর্মসূচি কম হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘প্রত্যেকটা দলের নিজস্ব কর্মসূচিও রয়েছে। এর মধ্যেও বিভাগে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করা যাবে সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের যে ঘোষণা এসেছে, তা কবে নাগাদ শুরু হবে, তাও বলতে পারেননি এই নেতা। বলেন, ‘বিরোধী দলগুলোর তো পরস্পরের সঙ্গে যোগাযাগ আছেই। আমরা যুগপৎ আন্দোলন করলে মঞ্চগতভাবেই (গণতন্ত্র মঞ্চগত) করব।’
জোটের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘তীব্র আন্দোলন বলতে কী বুঝব? এখন বিএনপি যা করছে তাকে কি তীব্র আন্দোলন বলবেন? আমরা তো বিএনপির চেয়ে বড় সমাবেশ করে ফেলতে পারব, সে রকম না। আমাদের এখন পর্যন্ত সাংগঠনিক যে শক্তি আছে, সেটা বিবেচনায় তীব্র আন্দোলন বলতে সমাজকে নাড়িয়ে দিতে পারে এমন কিছু একটা করা। কিন্তু সেটা এখনই করে ফেলতে পারব, সে রকম মনে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্র জনগণের মন মানসিকতা এবং সংগঠনেরও ওই ধরনের প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে। এত দূর পর্যায়ে এখনও আমরা পৌঁছাইনি আসলে।’
জোটের পক্ষ থেকে টানা কর্মসূচি কবে নাগাদ আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা বলতে পারব না। তবে আমরা চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় ১৬ সেপ্টেম্বর একটি সমাবেশ করার পরিকল্পনায় ছিলাম। সেটা ঘোষণাও করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আমরা সেটা করতে পারিনি। আমাদের নিজেদের গোছানো নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। হয়ত একটু সময় লাগবে। তবে জোটের মিটিংগুলো হচ্ছে।’
২১ সেপ্টেম্বর একটি আলোচনা সভা করেছে ওই জোট। ওই আলোচনা সভায় সব রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ঘোষণা দিয়েছেন জোটের নেতারা।