বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন খেতা শাহ

  •    
  • ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১০:০৯

যে ভক্তের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিলেন, তার স্ত্রীকে নিয়ে গত ২২ জুন উধাও হন মাজারের ফকির খেতা শাহ। গত ১১ জুলাই রাত ১২টার দিকে গাজীপুরের জয়দেবপুরের একটি বাড়ি থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু খেতা শাহ থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

যাকে নিয়ে উধাও হয়েছিলেন, সেই নারী ঘরে ফেরার আড়াই মাস পরও কোনো হদিস নেই ময়মনসিংহের তারাকান্দার আলোচিত ফকির খেতা শাহের।

নিজ ঘরে আশ্রয় দেয়া এক ভক্তের স্ত্রীকে নিয়ে উধাও হয়েছিলেন তিনি। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা করেন সেই ভক্ত। তোলপাড় করা সেই ঘটনার ১৯ দিন পর উদ্ধার হন সেই নারী, সেটি গত ১১ জুলাইয়ের কথা। কিন্তু এরপর ৮০ দিনেও পুলিশ জানতে পারেনি, খেতা শাহ কোথায়।

গাজীপুরের জয়দেবপুরের একটি বাড়ি থেকে সেই নারীকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তিনি ফিরেছেন তিন ছেলে মেয়ের কাছে। কিন্তু খেতা শাহের সঙ্গে কোথায়, কেন গিয়েছিলেন, সেটি আর বলছেন না।

ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় কাঁথাকে বলা হয় খেতা। জেলার তারাকান্দার টিকুরী এলাকায় সব সময় ছেঁড়া কাঁথা শরীরে জড়িয়ে রাখতেন খেতা শাহ নামের এক ব্যক্তি। তিনি যা বলতেন তাই হতো- এমন বিশ্বাসে অনেক লোক তার ভক্ত হয়ে যান৷

বৃদ্ধ বয়সে মারা যান সেই ব্যক্তি। কিন্তু থেকে যান ভক্তরা। একপর্যায়ে নির্মাণ করা হয় মাজার। নামকরণ করা হয় ‘খেতা ছিঁড়ার মাজার’। প্রতি বছর পালন করা হয় ওরস।

এবারও চার মাস আগে ওরস শুরু হয় ওই মাজারে। বরাবরের মতো এবারও হাজারো ভক্তসহ লোকজন আসেন মনের বাসনা পূরণ করার আশায়।

পাগলবেশে ফজলুল হক তালুকদার নামের একজন আসেন মাজারটিতে। ৬০ বছর বয়সী ফজলুলের বাড়ি নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার পাইলাটি গ্রামে।

বড় দাড়ি, লম্বা গোঁফ ও ছেঁড়া কাঁথা গায়ে জড়িয়ে সারাক্ষণ মাজারে বসে সময় কাটাতেন। কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে মাজারের নামের সঙ্গে নাম মিলিয়ে নিজেকে ‘খেতা শাহ’ হিসেবে পরিচয় দেন৷

আধ্যাত্মিক ফকির হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি পেতে কথাও বলতেন খুব কম। এভাবে গ্রামের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন তিনি।

তাকে বাবা ডেকে অনেকে মনের বাসনা পূরণ করতে দোয়া চেয়ে নিতেন। যারা তার কাছে আসতেন, তাদের অনেককে মাথায় হাত বুলিয়ে ঝাড়ফুঁক দিতেন। এভাবে কয়েক দিনেই তার ভক্তের সংখ্যা বেড়ে যায়।

আধ্যাত্মিক ফকির ভেবে খেতা শাহের ভক্ত হয়ে যান মাজারের পাশের এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম। সংসারের উন্নতি আর মনের বাসনা পূরণ হবে- এমন ধারণা থেকে দুই চাচার পরামর্শে নিয়ে আসেন বাড়িতে। স্ত্রীকেও বলতেন ঠিকঠাক সেবা করতে।

গত ২২ জুন দুপুর ১২টার দিকে বাবার বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় যাওয়ার কথা বলে শফিকুলের স্ত্রী খেতা শাহকে নিয়ে বের হন। এরপর দুজনই নিখোঁজ হন।

২৪ জুন সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ওই ভক্ত। রাত ১২টার দিকে তার অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিবদ্ধ করা হয়।

এরপর গত ১১ জুলাই রাত ১২টার দিকে গাজীপুরের জয়দেবপুরের একটি বাড়ি থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু খেতা শাহ থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

গত বুধবার দুপুরে শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভণ্ড খেতা শাহ আমার অন্ধ বিশ্বাসকে টার্গেট করেছিল। ফলে সুযোগ বুঝে আমার স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে আমাকেসহ ছোট ছেলেমেয়েদের মনে আঘাত করেছে।

‘আমার স্ত্রী জানিয়েছে তাকে বিয়ে করেননি ওই প্রতারক। কিন্তু তিনি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত মনকে শান্তনা দিতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘যতদিন বেঁচে থাকব, স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে এক সঙ্গে থাকব৷ কিন্তু খেতা শাহ যেন আর কারও পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি না করে, সেজন্য তাকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। এজন্য পুলিশের সাথে নিয়মিত যোগাযোগও করছি। তারা জানিয়েছে, গ্রেপ্তার করতে সবধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু আমার স্ত্রী একথা জানতে পেরে আমাকে বারবার নিষেধ করছে। সে ভয় পাচ্ছে।’

সেই ঘটনার পর স্থানীয়রা পরিবারটিকে বাঁকা চোখেও দেখছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, ‘খেতা শাহকে গ্রেপ্তার করলে ঘটনার রহস্য উন্মোচন হবে। এ জন্যই চাই তিনি ধরা পড়ুক।’

তারাকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মালেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খেতা শাহকে গ্রেপ্তার করতে আমাদের সবধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর