বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আদতে এসপি, পরেন ডিআইজির র‍্যাংক ব্যাজ

  •    
  • ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২১:২০

ঢাকা রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের পুলিশ সুপার (কমান্ড্যান্ট) মীজানুর রহমান নিজের পদবিতে ব্রাকেটে লিখে থাকেন ‘উচ্চ আদালতের রায়ে ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত’। পরেন ডিআইজির র‍্যাংক ব্যাজ। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে উচ্চ আদালতের এক আদেশের রেফারেন্স টানেন তিনি।

পদবি পুলিশ সুপার (এসপি), তবে পরেন পুলিশের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) র‌্যাংক ব্যাজ। নিজেকে সব সময় পরিচয় দেন প্রভাবশালী এক পরিবারের আত্মীয় হিসেবে। ইতোমধ্যে অদৃশ্য ইশারায় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আসা অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত এড়িয়েছেন তিনি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে অপকর্মের নানা অভিযোগ।

ওই কর্মকর্তার নাম মীজানুর রহমান। ঢাকা রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) পুলিশ সুপার (কমান্ড্যান্ট) হিসেবে দায়িত্বরত। তবে দাপ্তরিক কাজে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে ব্রাকেটে লিখে থাকেন ‘উচ্চ আদালতের রায়ে ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত’।

এসপি পদে থেকে ডিআইজি র‍্যাংক ব্যাজ পরা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে উচ্চ আদালতের এক আদেশের রেফারেন্স টানেন মীজানুর রহমান। যদিও সেই রায়ে বলা আছে- ‘পদোন্নতিতে বাধা নেই’। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তের পরোয়া করেন না তিনি।

পুলিশ বিভাগ বলছে, আদালতের রায়ের কপি তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি। রায়ে কী লেখা আছে তা দেখে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে তারা। আদালত যদি মীজানকে পদোন্নতি দিয়ে থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে আইনি লড়াই করবে পুলিশ সদর দপ্তর।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আদালত যদি তার পদোন্নতির রায় দিয়ে থাকে তা প্রতিপালনের দায়িত্ব পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু তিনি পুলিশ সদর দপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে সেই সুযোগ দেননি। তার আগেই তিনি কাগজে-কলমে পুলিশ সুপার পদে থেকে ডিআইজি র‍্যাংক ব্যাজ পরিধান করে চলেছেন। পুলিশের মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তার কাছ থেকে কোনোভাবেই এমনটা আশা করা যায় না।

মো. মীজানুর রহমানের জারি করা অফিস আদেশ।

মীজানের বিতর্কিত কার্যক্রমের এখানেই শেষ নয়। তার উল্টোপাল্টা আচরণে আগেও বহুবার বিব্রত ও অপ্রস্তুত হয়েছে পুলিশ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ভেজাল সারের কারখানা খুলে জালিয়াতির ব্যবসা, পুলিশ দিয়ে জমি দখল করে পদস্থ কর্মকর্তাদের নামে সাইনবোর্ড টাঙানো, বাড়ি বানানোয় ৬০ পুলিশকে রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে ব্যবহার, প্রভাবশালী পরিবারের দোহাই দিয়ে দুদকের তদন্ত থেকে অব্যাহতি, নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি অর্জন, কনস্টেবল রিলিজে উৎকোচ গ্রহণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে পুলিশের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

বাস্তবতা হলো, এতসবের পরও রহস্যজনক কারণে মীজানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। একের পর এক বাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলেও চুপ পুলিশ সদর দপ্তর।

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আদালতের নাম ব্যবহার করে একদিকে পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন মীজান; অন্যদিকে ডিআইজি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে মন্ত্রণালয়ে জোর তদবির চালাচ্ছেন। একজন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তার এভাবে লাগাতার অপকর্ম পুলিশ বিভাগের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসপি মীজানুর রহমানের লাগাতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিব্রত মন্ত্রণালয় ও পুলিশ বিভাগ। এখন ‌আবার তিনি আদালতের দোহাই দিয়ে ডিআইজির ব্যাজ-র‍্যাংক পরে বের হচ্ছেন।

‘তিনি বলছেন, আদালত তাকে প্রমোশন দিয়েছে। কিন্তু আদালত তো আমাদের বলবে রায় বাস্তবায়ন করতে। আমরা প্রজ্ঞাপন জারি করে তা প্রতিপালন করব। কিন্তু তিনি তার আগেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বসে আছেন।’

অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অ্যাডমিন) কামরুল আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি, তাই কথা বলা কঠিন। সব দেখে পরে বলব।’

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (জননিরাপত্তা) আকতার হোসেইন ব্যস্ততার কথা বলে এড়িয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ) জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মীজানুর রহমান পদোন্নতি না পেয়ে একটার পর একটা মামলা করেন পুলিশ বিভাগের নামে। তিনি বলে থাকেন, আদালত তাকে পদোন্নতি দিয়ে ব্যাজ-র‍্যাংক পরতে বলেছে। সম্প্রতি তিনি নাকি আদালত থেকে ডিআইজি হওয়ারও রায় পেয়েছেন। আমরা এখনও রায়ের কপি পাইনি। তবে জেনেছি, রায়ের কপি পেলে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে।’

‘আমরা জানি না আসলে আদালত তাকে কী বলেছে। আমি এখনও রায়ের কপি হাতে পাইনি। তবে ওনাকে দেখি, একজন পুলিশ সুপার হয়েও ডিআইজির ব্যাজ-র‍্যাংক পরে ঘোরাঘুরি করেন।’

পুলিশ সুপার মীজানুর রহমান পরে আছেন ডিআইজির র‍্যাংক-ব্যাজ। ছবি: নিউজবাংলা

আদালত মূলত কী বলেছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ নিউজবাংলাকে বলেন, “তার ‘পদোন্নতিতে বাধা নেই’ বা ‘পদোন্নতি দেয়া হলো’ এমন কোনো কথা রায়ে নেই। আপিল বিভাগের রায়ে কিছু ক্লারিক্যাল ভুলও আছে। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সেটা সংশোধনের জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছি। এ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত ২৩ অক্টোবর দিন ঠিক করে দিয়েছে।”

মীজানুর রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার মৌসুমী কবিতা ফাতেমা বলেন, ‘আদালত কী বলেছে তা সার্টিফায়েড কপি দেখে বুঝে নেবেন। এখন আর এই মামলা চলমান নেই। তাই আর কথা বলব না।’

এসপি হয়ে ডিআইজির ব্যাজ-র‍্যাংক পরা বৈধ না অবৈধ- এমন প্রশ্নের উত্তরও এড়িয়ে যান তিনি। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মীজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু একাধিকবার কল করেও মীজানকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে ১৫ সেপ্টেম্বর ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেন মীজানুর রহমান। মীজানের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মো. ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। পুলিশের মহাপরিদর্শককেও (আইজিপি) এ নোটিশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

নোটিশে তিনি পদোন্নতির সঙ্গে বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের কথাও উল্লেখ করেন। প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে ডিআইজিসহ পরবর্তী উচ্চপদে পদোন্নতি পেতে তার আর কোনো বাধা নেই বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

মীজানুর রহমান ১৯৮৯ সালে উপপরিদর্শক পদে পুলিশে যোগ দেন। পরে ১৭তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর ১৯৯৮ সালে সহকারী পুলিশ সুপার, ২০০৩ সালে অ্যাডিশনাল এসপি ও ২০০৬ সালে এসপি হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এই কর্মকর্তা। ওই পদে থেকেই ২০১৮ সালের ৩ জুলাই ডিআইজি হিসেবে র‌্যাংক ব্যাজ পরা শুরু করেন তিনি। এর আগে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে ২০১০ সালে বাগেরহাটের এসপির পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল তাকে।

এ বিভাগের আরো খবর