বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফুলেল ভালোবাসায় বাড়ি ফিরলেন সানজিদা-রূপনারা

  •    
  • ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২০:২৮

সাফ জয়ী নারী ফুটবল দলের সদস্যরা বৃহস্পতিবার নিজ নিজ জেলায় ফিরেছেন। তাদের ফুলেল সংবর্ধনা জানানো হয় ময়মনসিংহ, রাঙ্গামাটি, রংপুর ও মাগুরায়।

‘আগেও ফুটবলে অনেক জয় পেয়েছি। কিন্তু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জয়লাভ করে মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি তা এর আগে কখনও পাইনি। মানুষের এই ভালোবাসাকে পুঁজি করে সামনের দিনে আরও ভালো কিছু করার দায়িত্ব বেড়ে গেছে। দেশবাসী যদি আমাদের সঙ্গে থাকেন, আমরা সামনের দিনে আরও বড় জয় এনে দিতে পারবো।’

নিজ জেলা ময়মনসিংহে ফিরে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার সানজিদা আক্তার।

ওই দলে সানজিদাসহ আট ফুটবলারের বাড়ি ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে। তারা হলেন, সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্দা, শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সাজেদা খাতুন ও মার্জিয়া আক্তার।

তাদের বরণ করে নিতে বৃহস্পতিবার এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের চুরখাই এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালেই পৌঁছান আট ফটবলাররা। তাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল আলম।

সেখান থেকে সজ্জিত পিকআপে ময়মনসিংহ শহরের দিকে যাত্রা করেন তারা। রাস্তার দুই পাশে শত শত মানুষ তাদের স্বাগত জানায়। ময়মনসিংহ শহর ঘুরিয়ে তাদের নেয়া হয় সার্কিট হাউসে।

সেখানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, আমাদেরকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর সেই বক্তব্য আবারও প্রমাণ করেছে এই ফুটবলাররা। তাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি। তারা দক্ষিণ এশিয়ায় সাফ গেমসের ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ছিনিয়ে এনেছে। এই ফুটবলাররাই একদিন বিশ্বকাপ জয় করে আনবে।’

একই দিন নিজ নিজ জেলায় ফিরে জাঁকজমক সংবর্ধনা পান দলটির রংপুর, মাগুরা ও রাঙ্গামাটির ফুটবলাররাও।

রংপুরে ফিরে ফুলেল সংবর্ধনা পান সাফ জয়ী দলের সিরাত জাহান স্বপ্না, স্বপ্না রানী ও সোহাগী কিসকু।

এদের মধ্যে সিরাতের বাড়ি রংপুরে আর স্বপ্না ও সোহাগীর বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে।

তারা তিনজন বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা থেকে বিমানে করে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামেন। সেখানে তাদের বরণ করেন বিভাগীয় ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

বিমানবন্দর থেকে ছাদখোলা গাড়িতে করে তাদের রংপুর নগরী প্রদক্ষিণ করানো হয়।

এ সময় সিরাত জাহান স্বপ্না বলেন, ‘আমি এই রংপুরের মেয়ে। আমার আজকে সবচেয়ে আনন্দের দিন। আমার জন্য এত মানুষ অপেক্ষা করছে। আমি গর্বিত।

‘আমি সামনে আরও এগিয়ে যেতে চাই। বিশ্বকাপ আমরা জয় করতে চাই।’

বিদেশি ক্লাবেও খেলতে চান জানিয়ে সিরাত বলেন, ‘বিদেশি ক্লাবে খেলার জন্য মৌখিকভাবে ৭ জনকে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে আমার নামও রয়েছে। আমিও বিদেশি ক্লাবে খেলব, এটা জেনে আমার খুব ভালো লাগছে।’

নানা বাধা ডিঙিয়ে পাওয়া এই সাফল্য ধরে রাখতে চান সিরাত।

তিনি বলেন, ‘যখন আমি প্রথম ফুটবল খেলা শুরু করেছিলাম, তখন এলাকার অনেকে বাধা সৃষ্টি করেছিল। আমাদের সমাজের পুরুষেরা চায় মেয়েরা একটু পিছিয়ে থাক। পরিবর্তন শুরু হয়েছে। সামনে আমাদের আরও ভালো করতে হবে।’

সাফ জয়ী স্বপ্না রানী রায় বলেন, ‘দেশের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আরও ভালো কিছু করতে সবার সাপোর্ট চাই।

‘হাফ প্যান্ট পরে মেয়েরা ফুটবল খেলছে বলে গ্রামের মানুষেরা কটূক্তি করেছে। এতেও আমরা থেমে থাকিনি। স্কুল পর্যায়ে খেলার সময় স্যারেরা অনেক সাপোর্ট করেছেন। এখন সবাই উৎসাহ দিচ্ছে।’

ফুটবলার সোহাগী কিসকু বলেন, ‘আমরা চাই গ্রামের নারী ফুটবলাররা যেন গ্রামে খেলার সুযোগ পায়।’

বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটি ফিরে দিনভর সংবর্ধনা কুড়িয়েছেন সাফ জয়ী দলের রূপনা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা, আনাই মগিনী, আনুচিং মগিনী ও মনিকা চাকমা।

তাদের মধ্যে আনাই, আনুচিং ও মনিকার বাড়ি খাগড়াছড়িতে, রূপনা ও ঋতুপর্ণার বাড়ি রাঙ্গামাটিতে। তারা পাঁচজনই পড়াশোনা করেছেন ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে।

বৃহস্পতিবার সকালে তারা নিজেদের স্কুলে যান। যাওয়ার পথেই ঘাগড়া-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কে আনন্দ শোভাযাত্রা ও আতশবাজি জ্বালিয়ে তাদের বরণ করে নেয় শিক্ষার্থীরা।

স্কুলে পৌঁছালে ফুটবলাদের নিয়ে কেট কাটেন প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত খেলোয়ারদের পাশে জেলা প্রশাসনকে পেয়েছি। তবে এখনও পর্যন্ত ফুটবল ফেডারেশন থেকে সে ধরনের কোনো সহযোগিতা পাইনি।

‘সহযোগিতা না পেলেও শান্তি মনি চাকমা ও বীরসেন চাকমাসহ আমরা সবাই তাদের প্রতিভাকে হারিয়ে যেতে দেইনি। শুধু বীরসেন চাকমা ও শান্তি মনি চাকমা নন, এই পাঁচ তারকাদের গড়ে তোলার পেছনে অনেকের অবদান রয়েছে।’

স্কুল থেকে জেলা প্রশাসন ও পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়োজনে রাঙ্গামাটি মারী স্টেডিয়ামের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যান ফুটবলাররা।

সেখানে ঋতুপর্ণা বলেন, ‘ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কারণে আজ আমি বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল দলের একজন হয়ে খেলছি। ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় যদি আমাদের পৃষ্ঠপোষকতা না করত, তাহলে আমরা বঙ্গমাতা ফুটবল খেলার পরে হারিয়ে যেতাম।

‘২০১১ বঙ্গমাতা চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছিলাম। সেই ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় এখনও জাতীয়করণ হয়নি। তাই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, এ ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়টি যেন জাতীয়করণ করে দেন।’

এই অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পাঁচজনকে ২ লাখ টাকা করে এবং তাদের দুই কোচ বীরসেন চাকমা ও শান্তি মনি চাকমাকে ৫০ হাজার টাকা করে পুরষ্কৃত করা হয়। একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ফুটবলারদের ৫০ হাজার টাকা ও দুই কোচকে ২৫ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেন।

এর আগে বুধবার রাতে এই ফুটবলারদের মশাল জ্বালিয়ে বরণ করে নেয় ঋতুপূর্ণার গ্রামের বাড়ি কাউখালী উপজেলার মগাছড়ির বাসিন্দারা।

এদিন সাফ জয়ী সাথী বিশ্বাস ও ইতি রানীও ফিরেছেন নিজ জেলা মাগুরায়। সেখানে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। তাদের দুজনকে প্রাইভেটকারে করে নেয়া হয় নিজ নিজ গ্রামে।

দুই ফুটবলারকে অভিনন্দন জানাতে রাস্তার দুপাশে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে ভিড় জমায় স্থানীয়রা।

এ সময় সাথী আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশে আসার পর থেকে আমাদের সব মেয়েরাই অভিভূত। এমন সংবর্ধনা আর ভালোবাসা পাব তা ভাবতেও পারিনি।

‘দেশে আসার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় সংবর্ধনায় কয়েকদিন কেটে গেল। তবে আমার মন পড়ে ছিল আমার বাড়ি শ্রীপুরের গোয়ালদহে। আজ আসতে পেরে শান্তি লাগছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার জন্য এত মানুষ রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছে। এটা সত্যি খুব আনন্দের যে আমরা মেয়েরা কিছু একটা করেছি যা সবাইকে গর্বিত করেছে।’

ফুটবলার ইতি বলেন, ‘আমি এসএসসি পরীক্ষা না দিয়ে খেলায় অংশ নিয়েছি। তার ফল এত দারুণ। এত মানুষ আমাদের সম্মাননা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

এ বিভাগের আরো খবর