কক্সবাজারের রামু উপজেলার বৌদ্ধপল্লিতে হামলার ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আজকের এই দিনে ইতিহাসের বর্বর ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছিল এই জনপদে। এ ঘটনায় শত বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বড় ধরনের ফাটলের সৃষ্টি হয়।
বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগে হারানো সেই সব বৌদ্ধ স্থাপনা আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তবে সেই ক্ষত এখনও পুরোপুরি শুকায়নি।
ঘটনার ১০ বছর পরও সুষ্ঠু বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশায় রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ। মামলার চার্জশিট দাখিল নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে চিহ্নিত অনেক মানুষ মামলার আসামি নন। তদন্তে অনিয়মের কথা বলছেন তারা।
আদালত সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনার পর কক্সবাজারের চারটি উপজেলায় ১৮টি মামলা করে পুলিশ, যেখানে আসামি করা হয় ১ হাজার ২০ জনকে, যারা বর্তমানে সবাই জামিনে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আরও একটি মামলা করা হলেও তা পরে উঠিয়ে নেয়া হয়। পুলিশের করা ১৮ মামলা এখনও চলমান। অভিযোগপত্র দেয়া হলেও সাক্ষীদের অনীহার কারণে এখনও মামলাগুলো আলোর মুখ দেখছে না।
সম্প্রতি তিনটি মামলার অভিযোগপত্রে অসংগতি থাকায় পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। বাকিগুলো এখনও বিচারাধীন।
রামুর বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ও কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সহকারী পরিচালক (আবাসিক) প্রজ্ঞানন্দ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার ১০ বছর পরও বৌদ্ধরা নিরাপত্তায় ভুগছেন। মামলার প্রক্রিয়াটি আরও যাচাই-বাছাই জরুরি। এতে যেসব নিরীহ লোক হয়রানির শিকার হচ্ছে, তাদের বাদ দিয়ে প্রকৃত দোষীদের আসামি করে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, ‘ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বর্তমানে সাক্ষ্য দিতে না আসায় মামলাগুলো ঝুলে আছে। যদি তারা সাক্ষ্য দিতে আসেন, তাহলে বিচার সুষ্ঠু হতো। সাক্ষীরা না আসায় এখন কিছু করা যাচ্ছে না। তাই মামলাগুলো আলোর মুখ দেখছে না।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বর্তমানে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় খুবই ভালো আছে। তাদের মধ্যে আবারও সেই শত বছর আগের সম্প্রীতি ফিরে এসেছে। যে ঘটনা ঘটেছে, তার ক্ষত এখন আর নেই। সবকিছু বদলে গেছে। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে যা যা করা প্রয়োজন, সব করব।’
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে গুজবের জেরে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয় একদল দুর্বৃত্ত। ভাঙচুর করা হয় শত বছরের মূর্তি ও মন্দির। আগুনের লেলিহান শিখায় চাপা পড়ে যায় রামুর ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। পুড়ে যায় ১২টি বৌদ্ধবিহার, ২৬টি বসতঘর। পাশাপাশি আরও ছয়টি বৌদ্ধবিহার এবং শতাধিক বসতঘরে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়।
পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে উখিয়া ও টেকনাফে আরও চারটি বৌদ্ধবিহারে হামলা চালানো হয়। এতে পুড়ে যায় এসব বিহারে থাকা হাজার বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
এ ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রামু থানায় আটটি, উখিয়ায় সাতটি, টেকনাফে দুটি ও কক্সবাজার সদর থানায় দুটি মামলা রেকর্ড হয়।