বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাজনীতি করব কখনও বলিনি: বেনজীর

  •    
  • ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৪:৪৩

‘চাকরির শেষ দিন মানে আগামীকাল থেকে জীবনের একটি পাতা উল্টিয়ে নতুন পাতা পড়ার চেষ্টা। তার মানে আগামীকাল থেকে দেখা হবে না-কথা হবে না এমনটি নয়। সামাজিক জীব হিসেবে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে, যেখানেই সুযোগ পাব একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করব।’

পুলিশের চাকরিতে অবসরে যাওয়ার পর রাজনীতিতে যোগ দেবেন কি না, শেষ কর্মদিবসে এমন প্রশ্নে বেনজীর আহমেদ সুস্পষ্ট বক্তব্য দিলেন না।

রাজনীতিতে যোগ দেয়ার গুঞ্জন নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি তো এমন কথা কখনও বলিনি। অন্যের বক্তব্যের বিষয়ে আমি কোনো উত্তর দিতে আগ্রহী না।’

নিজের ৩৪ বছরের চাকরি জীবনের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকার রাজারবাগের পুলিশ মিলনায়তনে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হন তিনি। এ সময় তার নেতৃত্বে পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকাণ্ড, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।

বেনজীর বলেন, তিনি কারও পক্ষে-বিপক্ষে ছিলেন না। তাও কেউ কেউ এটা আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন, যেটাকে ‘নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চা’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শুক্রবার থেকে অবসরে যাচ্ছেন বেনজীর। তবে সেদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অফিস করা হবে না। ফলে কার্যত শেষ কর্মদিবস পার করছেন তিনি।

সপ্তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। তার ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকার তাকে অবসরে পাঠাচ্ছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

২০২০ সালের এপ্রিলে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের ৩০তম মহাপরিদর্শক (আইজি) হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি র‌্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন।

র‌্যাবের সাবেক প্রধান হিসেবে মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিষেধাজ্ঞায় পড়েন বেনজীর। গত ডিসেম্বরে এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও অবশ্য তিনি দেশটিতে জাতিসংঘের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসেছেন।

অবসরে কী করবেন?

এই প্রশ্নে বেনজীর বলেন, ‘আজ পর্যন্ত দায়িত্বে আছি। অবসর নিব আগামীকাল। আগামীকালের পরে অবসর নিয়ে ভাবব। তবে অবসরের পর এই সমাজের অংশ হিসেবে মানুষের সঙ্গে বসবাস করব বাকি সারাটা জীবন।

‘মানুষের অনেক অবদান রয়েছে আমার প্রতি। আমি চেষ্টা করব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের পাশে দাঁড়াতে।’

তিনি বলেন, ‘চাকরির শেষ দিন মানে আগামীকাল থেকে জীবনের একটি পাতা উল্টিয়ে নতুন পাতা পড়ার চেষ্টা। তার মানে আগামীকাল থেকে দেখা হবে না-কথা হবে না এমনটি নয়। সামাজিক জীব হিসেবে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে, যেখানেই সুযোগ পাব একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করব।’

নিজের কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করে বেনজীর বলেন, ‘‘আমার ৩৪ বছর ৫ মাস ১৬ দিন কর্মজীবনের মধ্যে ২০১০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ১২ বছর পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করেছি। ডিএমপি কমিশনার, র‌্যাব ডিজি ও সর্বশেষ আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনারা সমর্থন জুগিয়েছেন, দেশবাসীও সমর্থন জুগিয়েছেন। তাই সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

‘আমাকে আপনারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, একইভাবে পরবর্তী দায়িত্বে যারা আসবেন, তাদেরকেও সহযোগিতা করবেন।’

‘নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চা’ নিয়ে আক্ষেপ

বেনজীর বলেন, ‘বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে যে আমাদের দেশে নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চা ছিল, এখনও আছে। একশ্রেণির মানুষের নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চায় যারা আমাকে অন্যায়ভাবে, অযৌক্তিকভাবে তাদের বিপক্ষে আবিষ্কার করেছেন কিছু লোক।’

তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারাও ভালো থাকবেন এই প্রত্যাশা করি। কারণ সবাইকে নিয়েই বাংলাদেশ। আমার এই ভালোবাসার বাংলাদেশ। সবাইকে নিয়েই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।’

বিক্ষোভে গুলি, মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন

মতবিনিময়ে নানা সময় বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন বেনজীর।

বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে অনেক সময় মানুষ মারা যায় কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এগুলো অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমাদের প্রাথমিক এবং প্রধান লক্ষ্য থাকে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য। এর জন্য আমাদের হাতে অস্ত্র থাকে। এ ছাড়া এসব ঘটনার বিষয় নির্বাহী ও বিভাগীয় তদন্ত হয়।’

কক্সবাজারের কথিত বন্দুকযুদ্ধে কাউন্সিলর একরামুল হকের মৃত্যুর ঘটনায় অনুতপ্ত করেন কি না- এমন প্রশ্নে র‌্যাবের সাবেক প্রধান বলেন, ‘এ বিষয়টি একটি লিগ্যাল বিষয়। যে পর্যন্ত বিষয়টি অন্যায্য বা অনৈতিক প্রমাণিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে আমরা অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ নেই।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাউন্সিলর একরামুল হক। ছবি: সংগৃহীত

‘বিষয়টি আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি, ঘটনাটি ঘটেছে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার ফিল্ড লেভেলের লোকজনের মাধ্যমে। যেই ভদ্রলোক নিহত হয়েছেন তার সঙ্গে ওই মাঠ পর্যায়ে লোকজনের ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল না। তাই বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।

‘তবে আমরা একটি বিষয় দেখি আমাদের কোনো সহকর্মী ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়েছে কি না। কেউ যদি ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়ে কাজ করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। একরামের বিষয়ে একাধিক তদন্ত হয়েছে।’

পুলিশের মানবাধিকার উন্নয়নের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না- জানতে চাইলে বেনজীর বলেন, ‘পুলিশকে মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেবে বলে এ দেশের এনজিওগুলো শত শত কোটি টাকা নিয়ে এসেছে। এখন এ হিসাব বের করলে দেখা যাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে।

‘এসব টাকা আমরা আনিনি এনেছে এনজিওগুলো পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য। এনজিও কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, তবে যখনই তারা ডেকেছে পুলিশ গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। পুলিশের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ সব সময় দেয়া হয়। এ ছাড়া সরকার থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে পুলিশের জবাবদিহিতা আছে।’

‘পুলিশ অনেক গণমুখী’

চাকরি জীবন শেষের আগের দিন পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ দাবি করেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি এখন অনেক বেশি গণমুখী। তিনি এও বলেছেন যে, করোনা সংকট মোকাবিলা ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পুলিশের সাফল্যের বিষয়টি নিয়ে জানতে চায় সবাই।

বেনজীর বলেন, ‘বর্তমান পুলিশ আগের থেকে অনেক বেশি গণমুখী। …ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালনকালে চেষ্টা করেছি মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।’

তার মতে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ পুলিশের দুটি বিষয় বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়। তিনি বলেন, ‘কীভাবে আমরা সফলভাবে করোনা ক্রাইসিস অতিক্রম করেছি এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্যের বিষয়ে সবাই জানতে চায়।

‘কিছুদিন আগে জাতিসংঘে কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে, আমরা কীভাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সফল হয়েছি।’

নিজের ব্যর্থতা কী?

দায়িত্ব পালনে আপনার ব্যর্থতা কতটুকু- এমন প্রশ্নে বেনজীর বলেন, ‘এটাকে আসলে সফলতা-ব্যর্থতার মাপকাঠি হিসেবে না দেখি। আমি দেখতে চাই অর্জন কতটা হয়েছে। আমরা এভাবে দেখি যে, কী অর্জিত হয়েছে, আর অর্জনের কী বাকি আছে।

‘অর্জনের বিষয়টা হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া কখনও শেষ হওয়ার নয়। আমি দৌড়িয়েছি। এখন আমার সহকর্মীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি। তিনি দৌড়াবেন। থিউরি অফ পারফেকশন বলে, পৃথিবীতে কোনো কিছুই পারফেক্ট না। মানুষের মানবিক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের যা কিছু করতে হয় মানবিক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই করতে হয়।’

আইজিপির জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ। যতক্ষণ না পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম না করতে পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জটাই নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ।’

তিনি বলেন, ‘ফরমালিনের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। ম্যাজিস্ট্রেটদের সহযোগিতা নিয়ে শত শত পাউন্ড ফরমালিন ধ্বংস করে জাতিকে ফরমালিন মুক্ত খাবার উপহার দিয়েছি। ওই সময়ে দেশে ৭০০ টন ফরমালিন আমদানি হতো। এখন আমদানি হয় ১০০ টন প্লাস-মাইনাস।’

সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করাকেও একটি সাফল্য হিসেবে দেখান বেনজীর। বলেন, ‘এই সমস্যা প্রায় ৪০০ বছরের সমস্য। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪০ বছর পর্যন্ত দস্যুরা সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। সুন্দরবনে যারা জীবিকা নির্বাহ করত, তারা দস্যুদের কাছে জিম্মি ছিলেন। মৌসুমের সময় নিয়মিত অপহরণ হতো সাধারণ মানুষ। আমরা তিন ডজন ডাকাতকে স্যারেন্ডার করিয়েছি। এই ১২ বছরে যা কিছু ভালো হয়েছে তার ক্রেডিট সরকারের এবং বাংলাদেশের মানুষের। ব্যর্থতাগুলো আমার।’

এ বিভাগের আরো খবর