বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শতকোটি টাকায় বালির বাঁধ!

  •    
  • ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১২:৫৮

‘বেড়িবাঁধ নির্মাণে বালু ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিকো খামখেয়ালি করে যত্রতত্র গর্ত করে বালু ব্যবহার করছে। রাতের আঁধারেও এরা কাজ করছে।’

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা চরদুয়ানী সুন্দরবনের কোলঘেঁষা বলেশ্বর নদীর তীরে মাটির বদলে বালি দিয়ে বেড়ি বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্থানীয়রা এ কাজে বাধা দিলেও তোয়াক্কাই করছে না চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, প্রকল্পের একজন কনিষ্ঠ পরামর্শক ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত একজন ঠিকাদার রাতের আঁধারে বালি দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্বব্যাংকের কাজের তদারকি ও দেখভাল করার দায় বা দায়িত্ব কোনোটাই তাদের ওপর নেই। এমনকি কাজের দরপত্র, ডিজাইন পর্যন্ত দেখাচ্ছে না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করার পর চলমান বাঁধের কাজ বন্ধে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এসবের তোয়াক্কা করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের তথ্যমতে, বন্যা ও নদী ভাঙন থেকে সুরক্ষায় ২০১৭ সালে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্যাকেজ (সিইআইপি-১) মেগা প্রকল্পের কাজ হাতে নেয় সরকার। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এর আওতায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া, বরগুনা সদরের বুড়িরচর ও পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী এলাকায় মোট ছয়টি পোল্ডারে ২০৮ কিলোমিটার বাঁধ ও স্লুইসগেট নির্মাণ কাজ হাতে নেয়া হয়।

বিশ্বব্যাংকের অর্থয়ানে এ কাজের মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চংকিং ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে নিযুক্ত হয়। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বরগুনা অংশে বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। সম্প্রতি বরগুনার পাথরঘাটা অংশে ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বলেশ্বর নদের তীরের ৪০/২ পোল্ডারে ৩৪ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে বাঁধের অভ্যন্তরে থাকা ১৭টি স্লুইসগেট নির্মাণ কাজ শেষ করেছে তারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধ মাটি দিয়ে নিমাণ করা হলেও স্লু্ইসগেটের উপরের অংশের বাঁধ ও আশপাশ বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।

পাথরঘাটা জ্ঞানপাড়ার বাসিন্দা জালাল হাওলাদার বলেন, ‘প্রতিটি স্লুইসগেট নির্মাণের পর তা মাটি দিয়ে ভরাট করার কথা থাকলেও তার পরিবর্তে নিম্নমানের বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। ওই গেটগুলো ছেড়ে দেয়ার পর প্রবল স্রোতে বালি ভেসে গিয়ে স্লুইসগেট অরক্ষিত হয়ে ফসলের মাঠসহ এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে স্লুইসগেটগুলো এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসবে না।

সম্প্রতি চরদুয়ানী ইউনিয়নের জ্ঞানপাড়া এলাকার বলেশ্বর নদের পাড়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘বাঁধের ভেতরের দিকে বিশালাকার গর্ত খুড়ে মাটি স্তপ করে পাশে রাখার পর ওই গর্ত বলেশ্বর নদ থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালি তুলে ভরাট করা হয়। এরপর সেই বালি ও মাটি ব্যবহার করে বাঁধের নির্মাণ কাজ করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র কনসালটেন্ট মো. সোহেল মিয়া ও চুক্তিভিত্তিক ঠিাকাদার মো. পান্না মিয়া এই কাজ করেন। এভাবে প্রায় দেড় কিলোমিটার কাজ করেছেন তারা। আমি বিষয়টি জানার পর এভাবে কাজ করতে নিষেধ করেছি। কিন্ত তারা আমার কথার তোয়াক্কা করেননি।’

পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, ‘গোটা বাঁধই বালি দিয়ে করার পর ওপরের অংশে সামান্য কিছু মাটির প্রলেপ দিয়ে দায় সারছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহুবার অবহিত করেছি। কিন্তু কেউই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বালু দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে তা হবে আমাদের জন্য একটা মরণফাঁদ। ঝড়- জলোচ্ছ্বাস এই বেড়িবাঁধের উপর আঘাত করলে তাৎক্ষণিকভাবে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। নিঃস্ব হয়ে যাবে এই সাগর উপকূলীয় জনপদ।’

চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত ঠিকাদার মো. পান্না মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

প্রকল্পের পাথরঘাটা অংশের কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা জুনিয়র কনাসালটেন্ট মো. সোহেল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বালি দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কথা স্বীকার করেন। সোহেল বলেন, ‘এখানে মোট ৩০০ মিটারের মতো বালি দিয়ে বাঁধ করা হয়েছে। আমি ঠিকাদারকে নিষেধ করেছি, কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি। এতে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

দাতা সংস্থা বিশ্ব ব্যাংকের কনসালটেশন সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বেড়িবাঁধ নির্মাণে বালু ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিকো খামখেয়ালি করে যত্রতত্র গর্ত করে বালু ব্যবহার করছে। রাতের আঁধারেও এরা কাজ করছে। আমরা এ ব্যাপারে বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তিনটি চিঠি দিয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি।'

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকির কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। তারপরও আমি বিষয়টি জানার পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।’

এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রজেক্ট সংশ্লিষ্ট লোকদেরকে ডেকে আমি সিডিউল দেখব, তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর