নওগাঁ সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের গোয়ালী হাটের জায়গা অবৈধ দখলে চলে গেছে। এতে হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য এলাকাবাসী গত ৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা এবং সহকারী ভূমি কমিশনার সদর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এখন পর্যন্ত।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, হাটে অবৈধভাবে ১৩ ব্যক্তি ১৩টি দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। তারা হলেন স্থানীয় গোয়ালী গ্রামের জাহিদুল ইসলাম, মাসুদ রানা, আমজাদ হোসেন, মেছের মন্ডল, মো. আজাদ, মো. হামিদুল, মো. আমিনুল, মো. বেলাল, মো. জাহিদ, মো. কুদ্দুস, মো. শিলু, মো. রহিম, মো. এবাদুল এবং চককালীদাস গ্রামের আনিছুর রহমান মুন্সি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোয়ালী হাটের উন্মুক্ত জায়গা দখল করে সেখানে পাকা, আধাপাকা স্থাপনা নির্মাণ করায় হাটের জায়গা ব্যাপক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এতে হাটে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে আসা কৃষকরা তাদের পণ্য কেনাবেচা করতে জায়গার সংকটে পড়ছেন। প্রতিদিনের বাজার ছাড়াও সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে থাকে। আশপাশের প্রায় ১৫ থেকে ২০টি গ্রামের মানুষ কৃষিপণ্য কেনাবেচা করতে আসে এই হাটে।
হাটে সবজি বিক্রি করতে আসা হাসান আলী বলেন, ‘হাটের খোলা জায়গা দখল করে ১৩টা ঘর বানানো হয়েছে। ড্রেনের লাইনের উপর বাঁশের চটা দিয়ে বসে আমাদের বেচা-কেনা করতে হচ্ছে অনেক কষ্ট করে। দেখার কেউ নাই।’
আনিছুর রহমান নামের আরেক সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘হাটের অধিকাংশ জায়গা দখল করে পাকা ও আধাপাকা ঘর তৈরি করা হয়েছে, এ কারণে কিছু বিক্রি করতে গেলে ঠিকমত জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার হাটের ভিতর কোনো দোকানের সামনে বসলে, তারাও সরিয়ে দেয়, বসতে দেয় না।’
মুক্তিযোদ্ধা কায়ছার আলম, আমজাদ হোসেন, লিয়াকত আলী চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, হাটে সরকারি জায়গায় ঘর নির্মাণ অবৈধ। একজনের দেখাদেখি গত কয়েক বছরে প্রায় ১৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে হাটের উনুক্ত জায়গা কমে গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা গাড়িতে করে হাটে ধান আনা-নেওয়া করতে পারে না। এ ছাড়া সবজি চাষীরাও ঠিকমতো বেচাকেনা করতে পারছেন না। অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্ত দোকানী মাসুদ রানা ও মেছের মন্ডল বলেন, তিন-চার বছর আগে হাটে দোকান দিয়েছেন। হাট ইজারাদারকে প্রতি হাটবারে তারা নির্দিষ্ট খাজনা দেন। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমস্যা হলে প্রশাসন থেকে নিষেধ করা হলে তারা দোকানঘর তুলে নেবেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অন্য দোকানিরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
হাট ইজারাদার রইছ উদ্দিন জানান, হাটে ১৩টি অবৈধ দোকান ঘর আছে। সব দোকান মালিক হাট বারে ঠিকমতো খাজনাও দেন না। তাদের নিষেধ করা সত্ত্বেও ঘর নির্মাণ বন্ধ হয়নি। যদি এসব ঘর না থাকত, তবে আরও প্রায় ২০০ ক্রেতা হাটে কৃষি পণ্য বিক্রি করতে পারতেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গোয়ালী হাটে বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা (দোকানঘর) নির্মাণ করা হয়েছে বলে আমাদের কাছে স্থানীয়রা অভিযোগ দিয়েছেন। সার্ভেয়ার দিয়ে আমরা মাপযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যদি অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করা হয়ে থাকে, অবশ্যই সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।’