বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একের সাজা খাটছিলেন আরেক, এবার শাস্তির মুখে দুজনই

  •    
  • ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২২:৫৮

কোর্ট ওসি জানান, আদালতের শুনানিতে প্রকৃত অপরাধী জুয়েলের আইনজীবীকে স্বশরীরে হাজির হয়ে এ ঘটনার ব্যাখা দিতে বলা হয়।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি জাকিরের পরিবর্তে ছদ্মনাম ধারণ করে সাজা ভোগ করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন জুয়েল নামে আরেকজন।

এ অবস্থায় প্রকৃত আসামিকে জেলে পাঠানোর পাশাপাশি জুয়েলের বিরুদ্ধেও মামলা করার আদেশ দিয়েছে আদালত।

নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামছুর রহমানের আদালত বুধবার বিকেলে এ আদেশ দেয়।

এ সময় মাদক মামলা থেকে জুয়েলকে অব্যহতি দেয়া হলেও জাকিরকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মাদক মামলাটির সাজাপ্রাপ্ত জাকির বন্দর উপজেলার নূরবাগ এলাকার সামেদ মিয়ার ছেলে। তার পরিবর্তে আসামি সেজে সাজা ভোগ করতে যাওয়া জুয়েল বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জের আলাউদ্দিনের ছেলে।

আদালত পুলিশের পরির্দশক আসাদুজ্জামান জানান, মাদক মামলার মূল আসামি জাকিরকে গ্রেপ্তারের পর তাকে সহ তার হয়ে সাজাভোগ করতে আত্মসমর্পণ করা জুলেকেও আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় দুজনের কথায় বেমিল পান বিচারক।

পরে জাকিরের হয়ে সাজা ভোগ করতে আসা জুয়েলের বিরুদ্ধে আদালতের কার্য ধারায় ভুয়া আসামি সেজে প্রতারণা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ায় ফতুল্লা মডেল থানায় আদালতের বেঞ্চ সহকারী জহিরুল ইসলামকে মামলা করার নির্দেশ দেয় আদালত।

কোর্ট ওসি জানান, শুনানিতে জুয়েলের আইনজীবীকে স্বশরীরে হাজির হয়ে এ ঘটনার ব্যাখা দিতে বলা হয়।

এ সময় রোকেয়া সুলতানা নামে ওই আইনজীবী আদালতকে জানান, জুয়েল তার কাছে গিয়ে দাবি করেন- তিনি জাকির। মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তিনি জানতেন না যে জুয়েল মিথ্যা বলছে। এ কারণে তিনি তাকে আত্মসমর্পণ করিয়ে জামিন আবেদন করেন।

তবে যাচাই-বাছাই না করে জুয়েলকে আদালতে হাজির করে জামিন আবেদন করায় আদালতে ক্ষমা চান রোকেয়া সুলতানা। পরে আদালত তাকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী রোকেয়া সুলতানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি জাকিরের স্ত্রী জানান, জাকির দুই বার বিদেশে গেছেন। বর্তমানে ভাতের হোটেলের ব্যবসা করেন। তবে জুয়েলকে তিনি চেনেন না বলে দাবি করেন।

জুয়েলের পাশের এলাকার বাসিন্দা নিজাম মিয়া বলেন, ‘জুয়েল ও জাকির একে অপরের পূর্ব পরিচিত। জুয়েল বিভিন্ন মামলায় এর আগে একাধিকবার জেল খেটেছে। ছোটখাটো অর্থ তাদের মধ্যে লেনদেন হয়ে থাকতে পারে।’

ওই মাদক মামলা থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জের রসূলবাগ এলাকা থেকে ২০ পিস ইয়াবাসহ জাকিরকে আটক করে পুলিশ। পরে জাকির পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন যে- তিনি বিদেশ থেকে ফিরে মাদক বিক্রি শুরু করেছেন।

এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেন বন্দর থানার তখনকার এসআই মোকলেছুর রহমান। সেই মামলায় গ্রেপ্তারের পর কারাগারে যান জাকির। পরে ওই বছরই ৩ মে আদালত থেকে জামিন পান জাকির। এরপর থেকে হাজিরা দিচ্ছিলেন।

২০১৭ সালের ৮ আগস্ট আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা পংকজ কান্তি সরকার। পরে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।

এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১২ অক্টোরর সবশেষ আদালতে হাজিরা দেন জাকির। এরপর থেকেই তিনি পলাতক। এ কারণে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করে।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী জহিরুল ইসলাম জানান, ২০২২ সালের ১০ আগস্ট জাকিরের অনুপস্থিতিতে ওই মামলার রায় হয়। রায়ে জাকিরকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১০ দিনের বিনাশ্রম সাজা দেয়া হয়।

তবে গত ১২ সেপেম্বর জুয়েল নামের ওই ব্যক্তি আদালতে আত্মসমর্পণ করে দাবি করেন তিনিই সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি জাকির। এ সময় তিনি তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে জামিনের আবেদন করেন। তবে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে জুয়েলকে কারাগারে পাঠায়।

তিনদিন পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানায়, তিনি জাকির নন। তার নাম জুয়েল। এ নিয়ে কারাকর্তৃপক্ষ আদালতে একটি প্রতিবেদন পাঠায়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদক মামলায় ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট থেকে ৩ মে পর্যন্ত যে আসামি কারাগারে ছিলেন তার সঙ্গে বর্তমানে আত্মসর্মপন করা ব্যক্তির কোনো মিল নেই। কারাগারের নথি ও ছবিতেও অমিল রয়েছে।

এ ছাড়া কারাগারের নিবন্ধন বইয়ে পাওয়া গেছে, আত্মসর্মপন করা ব্যক্তির নাম জুয়েল। তিনি ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ১০ সেপেম্বর পর্যন্ত অন্য আরেকটি মামলায় জেলে ছিলেন।

একজনের সাজা আরেকজন ভোগ করতে যাওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করেন নারায়ণগঞ্জের জেলার শাহ্ রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল জানায়, তিনি ছদ্মনামে জাকিরের সাজা ভোগ করতে এসেছেন। আদালত আমাদের প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর শুনানি করে। ওইদিন মূল আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য পূর্ণরায় পরোয়ানা জারি করা হয়।

‘গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে মূল আসামি জাকিরকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হলে আজ শুনানি হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর