মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ‘অবশ্যই ফিরে যেতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর এই সাক্ষাৎকার নেন শতরূপা বড়ুয়া। সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয় মঙ্গলবার।
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে হবে যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের অবশ্যই দেশে ফিরে যেতে হবে।
‘তাদের (রোহিঙ্গাদের) নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। সবাইকে বুঝতে হবে পরিস্থিতি। আমাদের পক্ষে আর কোনো লোক নেয়া সম্ভব নয়, রোহিঙ্গাদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এত বিশাল জনসংখ্যার দায়িত্ব একা একটি দেশের পক্ষে নেয়া অসম্ভব। শুধু আশ্রয় দেয়াই নয়, এত বিশাল জনসংখ্যার জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করাও একটি বড় দায়িত্ব, যা কোনো দেশ একা বহন করতে পারে না।
‘যারা সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল, তারা এখন নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য কতটা আর করতে পারে, কারণ এর বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে এবং দেশটিকে তার জনগণের কথাও ভাবতে হবে।
‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিশু-কিশোররা এখন ঘিঞ্জি বস্তিতে (রোহিঙ্গা ক্যাম্প) লালিত-পালিত হয়ে বড় হচ্ছে, যেখানে মানবিক মূল্যবোধ ও সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ খুবই সীমিত।’
মিয়ানমার থেকে আসার পর বাংলাদেশের শত শত হেক্টর জমির বন ধ্বংস হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান কক্সবাজারের বন ধ্বংস করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বিনষ্টের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে এবং এলাকার আবাদি জমি ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা মানবপাচারের পাশাপাশি মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েছে এবং ক্যাম্পের অভ্যন্তরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে কোটি মানুষের শরণার্থী হয়ে ভারতে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার সময় হত্যা ও ধর্ষণসহ অমানবিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠীকে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। কাজেই আজকে তারা (বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা) যখন একই ধরনের নির্যাতনের শিকার, সে কথা চিন্তা করেই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ তাদেরকে আশ্রয় দেয়।’
এ সময় সাম্প্রতিক বৈশ্বিক অর্থনীতিক অস্থিরতা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এবং চলমান কোভিড-১৯ এর কারণে সমগ্র বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হচ্ছে, যা বিশ্ববাসীকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে।’
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট ছাড়াও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নানা অভিযোগ, মিডিয়ার স্বাধীনতা ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণের পথে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ, গৃহহীনদের জন্য নেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ তার সরকারের নেয়া নানা কল্যাণমুখী নীতি ও কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী, ট্রান্সজেন্ডারদের কল্যাণে নেয়া নানা পদক্ষেপ, জিয়া-এরশাদ আমলের সামরিক শাসন, আগামী নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন।