বাজারে বসুন্ধরার নামে যে চাল বিক্রি হয়, তা বসুন্ধরা গ্রুপ উৎপাদন করে না। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করে বসুন্ধরার নাম ব্যবহার করছে বলে দাবি করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই শিল্প গ্রুপ।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের শুনানিতে এমন তথ্য জানান বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগীয় প্রধান রেদায়ানুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কোম্পানিরি আইনজীবী মামুন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের চালের কোনো ব্যবসা নেই। কোনো চাল বসুন্ধরা গ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে না।’
এ সময় প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মফিজুল ইসলাম বসুন্ধরার প্রতিনিধিদের সামনে বসুন্ধরা নামে মিনিকেট চালের একটা প্যাকেট তুলে ধরার নির্দেশ দেন। কমিশনের কর্মী তা তুলে ধরলে চেয়ারপারসন জানতে চান, ‘এটি তাহলে কাদের?’
তখন বসুন্ধরার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘এটা আমাদের কোনো প্রোডাক্ট না। বসুন্ধরার অনেক কোম্পানি আছে। কিন্তু চালের কোনো কোম্পানি নেই।’
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘২০ কেজি মিনিকেট চালের বস্তা তাহলে কাদের? আপনারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? যদি কোনো ব্যবস্থা না নেন, তাহলে এটিই প্রমাণ হয় এই চাল আপনারাই প্রস্তুত করেন।’
বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিনিধি তখন বলেন, ‘এই চালের প্যাকেট আমরা আজই দেখলাম। একই নামের কোনো প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরার নাম করে চাল বিক্রি করছে সেটা অনুসন্ধান করে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এ সময় তারা কমিশনের কাছে এ-সংক্রান্ত্র কোনো তথ্য আছে কি না জানতে চাইলে কমিশনের এক সদস্য বলেন, ‘কোথায় বসুন্ধরার নামে পণ্য আছে এ তথ্য আমরা দেব না। এটা আপনাদের দায়িত্ব। আপনাদের নাম দিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে, এটা আপনারা অনুসন্ধান করবেন।’
আটা-ময়দা বিষয়ে বসুন্ধরার প্রতিনিধি সময় চেয়ে বলেন, তাদের ব্র্যান্ডের নাম বসুন্ধরা। আটা-ময়দা বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির পণ্য। আটা-ময়দার মধ্যে দেশে ৭৫ শতাংশ চাহিদা আটার, বাকি ২৫ শতাংশ ময়দার।
এসব পণ্যের দাম বাড়ার ব্যাখ্যায় বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখন আটা-ময়দার সংকট চলছে। গমের ৭০ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানি করতে হয় বলে আটা দেয়া যাচ্ছে না। তবে ময়দা দেয়া যাচ্ছে, কারণ ময়দা কানাডা থেকে আমদানি করা হয়।
কমিশন থেকে জানতে চাওয়া হয় তাদের আটা-ময়দার মার্কেট শেয়ার কত?
বসুন্ধরার পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা বলা কঠিন। নিজেদের সার্ভে করা প্রতিবেদেনে দেখা গেছে বড় ১০ কোম্পানির মার্কেট শেয়ার ৭০ শতাংশ। তারা চার নম্বরে।
কমিশন পরবর্তী শুনানিতে সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত, গত তিন বছরের আয়-ব্যয়ের তথ্য চায়।
সব প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের সময় দিয়েছে কমিশন।
অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে চাল, আটা-ময়দা, ডিম-মুরগি, সাবান ও ডিটারজেন্ট পাউডার বাজারজাতকারী ও পাইকারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে সম্প্রতি ৪৪টি মামলা করে প্রতিযোগিতা কমিশন।
সোমবার থেকে সেসব মামলার ওপর ধারাবাহিক শুনানি শুরু হয়েছে।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মফিজুল ইসলাম এবং সদস্য জিএম সালেহ উদ্দিন, এ এফ এম মনজুর কাদির ও নাসরিন বেগম কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে শুনানি গ্রহণ করেন।