পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনার চতুর্থ দিনে পাওয়া গেছে আরও একটি মরদেহ। বোদা উপজেলায় করতোয়ার আউলিয়ারঘাট থেকে দুপুরে এ মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
এ নিয়ে চার দিনে ৬৯ যাত্রীর মরদেহ নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। এখনও তিনজনের খোঁজ মেলেনি।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায়।
এদিকে জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার তদন্তকাজের জন্য আরও তিন দিনের সময় বাড়ানো হয়েছে।
তিনি জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ওই কমিটির প্রধান, তিনি আবার উদ্ধার অভিযান সরাসরি তদারকি করছেন। এ কারণে তদন্তের কাজে সময় লাগছে।
বোদা উপজেলার মারেয়া আউলিয়া-বদ্বেশ্বরী ঘাটে করতোয়া নদীতে রোববার দুপুরে শতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে যায়, যার বেশির ভাগই মহালয়ার পুণ্যার্থী ছিলেন। তারা নদীর ওপারে বদ্বেশ্বরী মন্দিরে প্রার্থনার জন্য যাচ্ছিলেন।
এই প্রাণহানির জন্য শুরু থেকেই অতিরিক্ত যাত্রী বহনকে দায়ী করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে কতজন যাত্রী ছিলেন, তা জানা যায়নি। তবে স্থানীয়দের দাবি, ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণক্ষমতার হলেও নৌকাটিতে যাত্রী ছিল শতাধিক।
দুর্ঘটনাকবলিত নৌকার দৈর্ঘ্য ৩৪ হাত, প্রস্থ ১১ হাত। নৌকায় প্রতি এক হাত দূরত্বে একজন করে থাকলেও ৩৪ জন যাত্রী বহন করবে নৌকাটি। একটু চাপাচাপি করে যাত্রী তুললেও সংখ্যাটি ৫০-এর বেশি হওয়ার কথা নয়।
সেখানে শতাধিক যাত্রী ওঠে কীভাবে? প্রশ্নের উত্তরে ঘাটের ইজারাদার আব্দুল জব্বার আলী বলেন, ‘প্রশাসনের লোকজন দেখেছে। তাদের নিষেধ উপেক্ষা করে নৌকা ছাড়ার সময় হুড়মুড় করে যাত্রীরা নৌকায় উঠে পড়ে।’
জেলা পরিষদ থেকে এক বছরের জন্য জব্বারের নামে ইজারা দেয়া হয়েছে খেয়াঘাটটি। অংশীদার রয়েছেন একাধিক। ঘাটে মোট চারটি নৌকা রয়েছে। দুটি ঠেলা নৌকা ও দুটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত। পারাপারে যাত্রীপ্রতি ১০ টাকা করে নেয়া হয়।
আব্দুল জব্বার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অসাবধানতা ও অসচেতনার জন্য এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’ ঘাটে নিরাপত্তা জোরদার ছিল না, এমনটাও দাবি করেছেন তিনি।
বেঁচে ফেরা নৌকার মাঝি ডিপজলের বরাতে তিনি আরও বলেন, ‘কিছু দূর যাওয়ার পর নৌকাটি টলমল করলে আবার পেছনে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন মাঝি। সে সময় যাত্রীরা ভয়ে বেশি নড়াচড়া করলে কাত হয়ে নৌকাটি ডুবে যায়।’
বেশি লাভের আশায় ইজারাদার ঘাটে যাত্রীর তুলনায় পর্যাপ্ত নৌকা ব্যবহার করেননি দাবি করেন স্থানীয় বাবুল হোসেন। বলেন, ‘পূজার কারণে লোকজনের চাপ অনেক। তারা চারটি নৌকা ব্যবহার করতে পারতেন। কিন্তু একটি ছোট নৌকা ও বড় নৌকা দিয়েই দিন পার করেন তারা। যাত্রীর তুলনায় নৌকা বেশি ছিল না। তাই সময়ের কথা চিন্তা করে মানুষ ঝুঁকি নিয়েছে। এ জন্য এই সর্বনাশ হয়েছে।’
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই ঘাটটি ইজারা দেয়া। একটি ছোট, আরেকটি বড় নৌকা ছিল। কিন্তু নৌকাটি আগের ঘাটে ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি ভিডিও দেখলে বুঝতে পারবেন যে একজন চিৎকার করতেছে, সেই লোকটি আমাদের একজন এসআই। আমরা অনেক চেষ্টা করেও অতিরিক্ত লোক ওঠা বন্ধ করতে পারিনি। বেশি লোক ওঠায় এই দুর্ঘটনা।’
ঘটনাস্থলে থাকা মারেয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আনসার মো. রেজাউল করিম শামিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নৌকাটা মূল ঘাট থেকে ২০০ মিটার উজানে দাঁড়াইছে। আমরা মূল ঘাটে ছিলাম, প্রশাসনও ছিল। সেখানে লোক তুলছে, মানুষজন হুড়াহুড়ি করে উঠছে। আমরা দূর থেকে চিল্লাইছি লোক বেশি না উঠতে, কিন্তু শোনে নাই। তা ছাড়া মাঝনদী থেকে নৌকা ফিরতেছিল, কিন্তু তখন নৌকা ঘোরানোর সময় পানি উঠে ডুবে গেছে।’
পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকার ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি লোক ছিল। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।’