পাবনার সুজানগরে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য পরিচয় দেয়া কামরুজ্জামান উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাবশালী পরিচয় দিয়ে সরকারি চাকরি দেয়ার আশ্বাসে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
পাওনা টাকা ফেরত না পেয়ে বুধবার দুপুরে সুজানগর বাজারে আওয়ামী লীগের কথিত নেতা উজ্জ্বলকে অবরুদ্ধ করেন ভুক্তভোগীরা। পরে ভুক্তভোগীদের টাকা উদ্ধারের আশ্বাস দিয়ে উজ্জ্বলকে ছাড়িয়ে নেয় পুলিশ।
প্রতারিত হয়েছেন দাবি করা লোকজনের মধ্যে সুজানগর পৌর এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকির হোসেনও রয়েছেন।
জাকির জানান, এলাকার মানুষের কাছে কামরুজ্জামান উজ্জ্বল নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দেন। তার কথা বিশ্বাস করে নিজের ছেলের জন্যও চাকরির অনুরোধ করেছিলেন জাকির।
জাকির বলেন, ‘২০১৯ সালে তিনি আমার ছেলেকে নৌ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি দেবেন জানিয়ে ওই মন্ত্রণালয়ের লোকজনের জন্য ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। আমি অনেক কষ্ট করে সম্পদ বিক্রি ও ধারদেনা করে তাকে ১৩ লাখ টাকা দেই। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছরেও তিনি চাকরি দেননি। পরে আমি টাকা ফেরত চাইলে তিনি দিচ্ছি দেবো বলে দিনের পর দিন ঘোরাতে থাকেন।’
এ অবস্থায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জাকিরকে ১০ লাখ টাকা ফেরত দেন উজ্জ্বল। বাকি তিন লাখ টাকা পরে দেবেন বললেও এখন আর তিনি ফোনই ধরেন না। নিরুপায় হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সহযোগিতা চেয়েও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানান জাকির।
তিনি বলেন, ‘পরে শুনেছি আমার মতো ভুক্তভোগী আরও অনেকেই আছে। বুধবার তিনি এলাকায় আসায় হাসপাতাল মোড়ে সবাই এক হয়ে পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে তাকে আটকে রাখে।’
হাসপাতাল মোড় এলাকার ব্যবসায়ী জামিল বলেন, ‘কামরুজ্জামান উজ্জল মোটরসাইকেলের শোরুম করার কথা বলে আমার একটি দোকান ভাড়া নেন। কিন্তু তিনি তা না করে সেখানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় তৈরি করেন। গত ছয় মাস ধরে দোকানের ভাড়াও দেন না। মার্কেটে রাজনৈতিক কার্যক্রমের কারণে অন্য দোকানীরা এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমি তাকে বকেয়া ভাড়া দিয়ে দোকান ছাড়তে বললে তিনি আমাকে ভয়ভীতি, এমনকি মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ারও হুমকি দিয়েছেন।’
এদিকে, কামরুজ্জামান উজ্জ্বলকে অবরুদ্ধ করায় সুজানগর বাজারে ব্যাপক হট্টগোল ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পাওনা টাকা না দিলে তাকে যেতে দেয়া হবে না বলেও শ্লোগান দেন ভুক্তভোগীরা।
এ সময় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে উজ্জ্বলকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে সুজানগর থানার ওসি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘সুজানগর বাজারে হট্টগোলের খবর শুনেই আমরা সেখানে উপস্থিত হই। আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পাওনাদার ও কামরুজ্জামান উজ্জলের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরে, বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে কামরুজ্জামান উজ্জলকে বের করে আনা হয়।’
এসব বিষয়ে সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘কামরুজ্জামান উজ্জ্বলের কাছে দেনা-পাওনা ও নানা অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীরা আমার কাছে এসেছে। কিন্তু তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো না থাকায় আমি এ নিয়ে কোনো কথা বলিনি। কামরুজ্জামান উজ্জ্বলের মদদে এলাকায় গত কয়েকদিনের মধ্যে ৪টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তার প্রতারণায় দলের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে।’
তবে, প্রতারণার অভিযোগ অসত্য দাবি করে আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘সুজানগরের মানুষ জানে আমি কেমন লোক। আমার সর্ম্পকে জেলা আওয়ামী লীগ নেতারাও অবহিত। চাকরির নামে টাকা নেয়া বা দোকান ভাড়া বাকির অভিযোগ সঠিক নয়। আমাকে কেউ অবরুদ্ধ করেনি, কোনো হট্টগোলও হয়নি। রাজনৈতিক বিরোধে শাহীনুজ্জামান শাহীন মিথ্যে গুজব ছড়াচ্ছেন।’