একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি খলিলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর তাকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১।
এরপরই পলাতক খলিলুর রহমানকে ধরতে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে এলিট ফোর্সটি।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘খলিলুর রহমানের বয়স ৬৮। তার বাবার নাম নবী হোসাইন। তারা নেত্রকোণা জেলার নোয়াগাঁও এলাকার বাসিন্দা।’
২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ এর ৯ নম্বর মামলায় খলিলুর রহমানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
‘খলিলুর রহমান, তার ভাই মো. আজিজুর রহমান, একই এলাকার আশক আলী, জানিরগাঁও ইউনিয়নের শাহনেওয়াজ এবং রমজান আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ ধ্বংস করা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টাসহ পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। এই পাঁচ আসামির মধ্যে খলিলুর রহমান ছাড়া সবাই কারাগারে,’ যোগ করেন র্যাব মূখপাত্র।
তিনি জানান, বিচারকালীন সময় চারজন আসামি বিভিন্ন সময় মারা যান। গত ১৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে খলিলুরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ৪টিতে মৃত্যুদণ্ড ও একটিতে ১০ বছরের সাজা ঘোষণা করে।
খলিলুরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে গৃহীত হলে আত্মগোপনে চলে যান এবং রাজধানীর দক্ষিণখান, তুরাগ ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন ও একা থাকতেন। এ সময় যোগাযোগের জন্য তিনি কোন ধরনের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না। মাঝে মাঝে তার পরিবারের সদস্যরা গোপনে তার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন।’
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘খলিলুর ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ছিলেন। যুদ্ধের সময় তিনি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরে চন্ডিগড় ইউনিয়নের আল বদর বাহিনীর কমান্ডার হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নেত্রকোণার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা থানা এলাকায় অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করা, ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যায় জড়িত ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ২২ জনকে হত্যা, একজনকে ধর্ষণ, একজনকে ধর্ষণের চেষ্টা, চারজনকে অপহরণ ও নির্যাতন ও ঘরবাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ছিল।’