গাজীপুরের টঙ্গীতে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দিলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সন্তান প্রসব করেছেন এক নারী।
টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। নবজাতক ও তার মা ফাতেমা দুজনই সুস্থ আছেন।
২০ বছর বয়সী ফাতেমা আক্তার টঙ্গীর টিএনটি বাজার এলাকায় স্বামীর সঙ্গে বসবাস করেন। তার স্বামীর নাম-পরিচয় ও বিস্তারিত ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
স্বজনরা জানান, সোমবার বিকেল থেকে প্রসব ব্যাথা শুরু হয় সন্তান সম্ভবা ফাতেমা আক্তারের। প্রথমে বাড়িতে ধাত্রী এনে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা হয়। এতে ব্যর্থ হয়ে মঙ্গলবার সকালে ওই নারীকে নেয়া হয় টঙ্গীর মাইশা জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে ডা. জাকিয়া সুলতানার তত্ত্বাবধানে আলট্রাসোনোগ্রাফি করা হলে গর্ভের বাচ্চার পালস মেলেনি।
তাৎক্ষণিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে আইসিইউ সুবিধা আছে এমন হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়৷ পরে উত্তরার একটি হাসপাতালে নেয়ার জন্য সিএনজিতে ওঠানো হলে সেখানেই গর্ভের সন্তান প্রসব করেন ওই নারী। নবজাতক ও তার মা ফাতেমা দুজনেই সুস্থ আছেন।
তবে স্বজনদের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই সিএনজিতে সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গর্ভের বাচ্চা মারা গেছে বলে জানিয়েছে। অথচ সিএনজিতে নরমালি সন্তান প্রসব হয়।
যে সিএনজিটিতে সন্তান প্রসব হয় সেটির মালিক সোহরাব বলেন, ‘সন্তান সম্ভবা ওই নারীকে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার জন্য আমার সিএনজিতে ওঠানো হয়। এ সময় সিএনজির ভেতরেই গর্ভের সন্তান প্রসব করেন ওই নারী। পরে তাকে শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সোহরাব বলেন, ‘যতদিন আমার এই সিএনজি থাকবে ততদিন ওই নবজাতক বাচ্চার জন্য সিএনজি ভাড়া ফ্রি করে দিয়েছি আমি।’
এদিকে, সিএনজিতে সন্তান প্রসবের খবর পেয়ে এলাকাবাসীর মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মাইশা জেনারেল হাসপাতালে ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ওমর ফারুক বলেন, ‘বাসায় নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করতে গিয়ে প্রসূতি ও গর্ভের সন্তানের অবস্থা আগেই সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। হাসপাতালে আনার পর প্রাথমিকভাবে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা হলে গর্ভের বাচ্চার পালস পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় প্রসূতি ও গর্ভের সন্তানের আইসিইউ সাপোর্ট দরকার হয়।
‘তাই রোগীকে আইসিইউ সুবিধা আছে এমন হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। পরে অন্য হাসপাতালে নেয়ার পথে সিএনজিতে সন্তান প্রসব করেন ওই নারী।’
এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের কোনো অবহেলা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সিএনজিতে সন্তান প্রসবের ঘটনায় উত্তেজিত এলাকাবাসীকে শান্ত করতে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে এ ঘটনায় রোগীর পরিবার কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। দুদিন আগেও হাসপাতালটিতে চিকিৎসার অবহেলায় দেড় বছরের শিশু মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছিল। তাই আপাতত হাসপাতালটিতে কোনো রোগী ভর্তি না করার জন্য কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেয়া হয়।’