জামায়াত-আওয়ামী লীগ পরকীয়া চলছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর এমন বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি নেতার বক্তব্যকে ‘অশালীন ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলেছে দলটি।
রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ থেকে বক্তব্য আসার পর দিন মঙ্গলবার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বিবৃতি দিয়ে তার প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন তা দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। এটি কোনো রাজনীতিবিদের ভাষা হতে পারে না। তার এ বক্তব্য স্বৈরাচারী শাসনকে প্রলম্বিত করার ক্ষেত্র তৈরি করবে।’
আগের দিন রাজধানীর হাজারীবাগে বিএনপির সমাবেশে টুকু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনেকের মুখে একটা বুলি হয়ে গেছে বিএনপি-জামায়াত, বিএনপি-জামায়াত। আমি বলছি এখন সময় এসেছে, আওয়ামী লীগ-জামায়াত, আওয়ামী লীগ-জামায়াত বলার। জামায়াতও উর্দু, আওয়ামী লীগও উর্দু। দুটো একসঙ্গে মিলবে ভালো। কেননা উনারা জামায়াতের নিবন্ধন ক্যানসেল করেন, কিন্তু বেআইনি ঘোষণা করেন না। তাহলে কি আমি বলব, ওনাদের (জামায়াত-আওয়ামী লীগের) পরকীয়া চলছে?’
টুকু ‘জামায়াত’ শব্দটিকে ‘উর্দু’ ভাষা বলে উল্লেখ করে অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় জামায়াতের বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, ‘আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে এ ধরনের অসংলগ্ন বক্তব্য প্রদান করা থেকে সংশ্লিষ্ট সকলেই বিরত থাকবেন।’
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট চলছে সেই ১৯৯৯ সাল থেকে। সম্প্রতি ধর্মভিত্তিক দলটি আমির শফিকুর রহমান একটি রুকন সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে দলের কর্মীদেরকে জানান, বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট ভেঙে গেছে। দুই দল যুগপৎ আন্দোলন করবে, কিন্তু জোটে আর নেই।
বিষয়টি রাজনীতিতে তোলপাড় তুললেও বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো কিছুই বলা হচ্ছে না। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না দেয়াকে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার বলেছেন।
টুকু বলেন, ‘আমাদের বলা হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত, আর আপনারা আমাদের বলেন স্বাধীনতাবিরোধী দল। আমিও স্বীকার করলাম। কিন্তু নিবন্ধন বাতিল করলেন, বেআইনি ঘোষণা করলেন না। তার অর্থ আওয়ামী লীগ-জামায়াতের সঙ্গে তলে তলে বন্ধুত্ব করে। সেজন্য বাতিল করে না। তাই আজকে থেকে আওয়ামী-জামায়াত হবে, বিএনপি-জামায়াত আর হবে না।’
জামায়াতের বিবৃতিতে টুকুর বক্তব্যের নিন্দা জানিয় বলা হয়, ‘যে মুহূর্তে দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর, সে সময় তার এ বক্তব্য জাতিকে হতাশ করেছে। তার বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়, তিনি জনগণের ভাষা বুঝতে অক্ষম এবং তিনি জনগণের ভাষায় কথা বলতে পারেন না। আমরা তার এ বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে টুকুর বক্তব্যের আসল উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তেলে জামায়াত। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও বেআইনি ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়ে তার কথা ও মর্মবেদনায় জনগণের মধ্যে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে, কার স্বার্থে এবং কাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি এ বক্তব্য প্রদান করেছেন? আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জামায়াতে ইসলামী কখনও কোনো আপোষ, গোপন ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না এবং করার প্রশ্নই আসে না।’
ধর্মভিত্তিক কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আবেদনের পর ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। আট বছর পর ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করে। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিও আছে। তবে সরকার এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।