বন্ধুকে হত্যায় ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামি শাহিন আলমকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
প্রায় ৬ বছর আত্মগোপনে থাকা এ আসামিকে সোমবার মানিকগঞ্জ ঘিওর থানার বড়টিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪।
রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে আসামি গ্রেপ্তার ও হত্যা মামলার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র্যাব-৪ এর অধিনায়ক ও পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টে কাজ করতে গিয়ে বন্ধুত্ব হয়েছিল শহিদুল ইসলাম ও শাহিন আলমের। পরে তারা একটি এনজিও খোলেন অংশীদারিত্বে। লোভের বশবর্তী হয়ে এনজিওর পুরো মালিকানা পেতেই শাহিন খুন করেন শহীদুলকে। এ মামলায় গ্রেপ্তারের পর শাহিন ও তার সহযোগিরা আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। এক পর্যায়ে শাহিন জামিন নিয়ে পালিয়ে যান।’
র্যাব জানায়, ৬ বছর ধরে নাম-পরিচয় বদলে আত্মগোপনে ছিলেন শাহিন আলম।
২০০১ সালে আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টে চাকরি করার সময় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে শহীদুল ও শাহিনের। শহীদুল আগে একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে দুজনে মিলে এনজিও প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন।
২০০৪ সালে ঢাকা জেলার ধামরাই গোয়াড়ীপাড়ায় একটি অফিস ভাড়া নিয়ে তারা ‘বাংলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামের সঞ্চয় ও ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থা চালু করেন। গার্মেন্টের চাকরি ছেড়ে তারা এনজিওর কাজ চালাতে থাকেন।
দুজন নারী কর্মী নিয়োগ দিয়ে ধামরাই এলাকায় তারা কার্যক্রম বাড়াতে থাকেন। চারটি প্রোগ্রামে ৪৫০ জন সদস্য সংগ্রহ করে সঞ্চয়, ঋণদান এবং ফিক্সড ডিপোজিট কার্যক্রম চালান।
শহীদুলের দক্ষতায় অল্প সময়ের মধ্যেই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয় সংস্থাটি। লোভের ভশে শাহিন নিজের কব্জায় সবকিছু নেয়ার চেষ্টা করেন। তারই এক পর্যায়ে খুন করেন শহীদুলকে।
মামলায় বলা হয়েছে, আসামি শাহিন তার মামাতো ভাই টাঙ্গাইলের সন্ত্রাসী রাজা মিয়াকে নিয়ে শহীদুলকে হত্যার পরিকল্পনা নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০৬ সালের ২০ মে সন্ধ্যায় শাহিন নিজের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখার কথা বলে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা নামক জায়গায় ডেকে নেন শহীদুলকে। সেখানে নম্বরবিহীন মাইক্রোবাস নিয়ে অবস্থান করছিলেন রাজা মিয়া। সাহেদ, কুদ্দুস, বিষ্ণু সুইপার ও ড্রাইভার রহম আলী ছিলেন তার সঙ্গে।
রাতে শহীদুল যেতে না চাইলে আসামিরা তাকে বাসায় নামিয়ে দেয়ার কথা বলে মাইক্রোবাসে তুলে নেন। কিছুক্ষণ পর শহীদুলের গলায় রশি পেচিয়ে ও মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করেন আসামিরা। এরপর শহীদুলের নিথর দেহ নিয়ে তারা কালামপুর, সাটুরিয়া হয়ে নির্জনস্থান বেতুলিয়া ব্রীজের কাছে যান।
মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শহীদুলকে জবাই করা হয়। সেখানে দেহ ফেলে রেখে বিচ্ছিন্ন মাথা পলিথিনে ভরে নাগরপুরের জগতলা নামক স্থানে পুঁতে রাখে।
পরদিন সাটুরিয়া থানা পুলিশ মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করে একটি হত্যা মামলা করে। এর দুইদিন পর শহীদুলের মস্তক উদ্ধার করে নাগরপুর থানা পুলিশ।
শহীদুল হত্যা মামলায় সাটুরিয়া থানা পুলিশ দুই এনজিও কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়। এরপর পুলিশ শাহিনকে গ্রেপ্তার করে। শাহিন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার বিস্তারিত তথ্য জানান। শাহিন আলম ১০ বছর কারাগারে থাকার পর ২০১৬ সালে জামিন পান। এরপর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
শহীদুল হত্যা মামালার রায়ে ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর আদালত শাহিন আলমকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তার ৪ সহযোগি সাহেদ, রাজা মিয়া, আব্দুল কুদ্দুস ও বিষ্ণু সুইপারকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়।
ফাঁসির আসামি শাহিন আলমকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করেছে।