বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোটা সুবিধা নিতে স্ত্রীকে বোন বানালেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান

  •    
  • ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৮:০৪

সন্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকু বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের ৮ ছেলে-মেয়ের মধ্যে সোনালী খাতুন নামে কোনো সন্তান নেই। এই নামে তার পুত্রবধূ আছেন। তিনি আনিছুর রহমানের স্ত্রী।’

আছে একাধিক সন্তান, প্রতিবেশীরাও জানেন তারা স্বামী-স্ত্রী। অথচ জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তারা ভাই-বোন!

কোটা এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা নিতে স্ত্রীকে বোন বানানোর এমন তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছেন আনিসুর রহমান। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।

প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে ছোট ভাইকে ভোটার আইডি এবং শিক্ষা সনদ জালিয়াতি করে রেলওয়েতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাইয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে আনিসুরের বিরুদ্ধে।

এলাকাবাসী জনায়, নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের কুটিনাওডাঙ্গা আমিরটারী তালবেরহাট গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের ৮ ছেলে-মেয়ে।। তাদের মধ্য সবার বড় আনিছুর রহমান। তিনি রংপুর বেতারে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করেন।

২০০৭ সালে জেলার উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগড়াকুরা বাজার এলাকার মৃত রবিউল ইসলামের মেয়ে সোনালী খাতুনকে বিয়ে করেন আনিসুর। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সোনালী সবার ছোট। আনিছুর-সোনালী দম্পতির ঘরে জমজসহ বর্তমানে তিন সন্তান রয়েছে।

তবে বিয়ের পর উপজেলার সাপখাওয়া দাখিল মাদরাসায় নিজের শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা হিসেবে তথ্য দিয়ে ২০১০-১১ সেশনে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হন সোনালী। ২০১৩ সালে ওই মাদরাসা থেকে জিপিএ-২.৯৪ পেয়ে দাখিল পাশ করেন তিনি।

পরে দাখিল পাসের সনদ ও ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দেখিয়ে ২০১৪ সালে ভোটার হন সোনালী। সনদ অনুসারে মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুর আইনুল হককে নিজের বাবা ও শাশুড়ি জামিলা বেগমকে নিজের মা হিসেবে তথ্য দেন তিনি।

সোনালী আনিসুরের বোন নয় দাবি করে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ জহুরুল হক বলেন, ‘আনিছুর রহমান আমার বাল্যবন্ধু। সোনালী খাতুন তার স্ত্রী। উলিপুর উপজেলায় সোনালীর বাবার বাড়ি।’

আনিছুর রহমানের ছোট ভাই খালেক জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি দেখে নিশ্চিত করেন সোনালী খাতুন তার ভাবী। তিনি স্বীকার করেন, মুক্তিযোদ্ধা বাবার সুযোগ সুবিধা পেতেই তার ভাই এমনটি করেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সন্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের ৮ ছেলে-মেয়ের মধ্যে সোনালী খাতুন নামে কোনো সন্তান নেই। এই নামে তার পুত্রবধূ আছেন। তিনি আনিছুর রহমানের স্ত্রী।’

অভিযুক্ত আনিছুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন, স্ত্রীকে বোন বানানোর বিষয়টি ভুলবশত হয়েছে। তার স্ত্রী এমনটি করেছেন।

তবে বিষয়টি নিয়ে আনিসুরের স্ত্রী সোনালী খাতুন কথা বলতে রাজি হননি।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, ২০১৪ সালে ভোটার হালনাগাদ করার সময় সোনালী খাতুন এসএসসি সনদ এবং জন্ম নিবন্ধনের তথ্য দিয়ে ভোটার হন। তথ্য গোপন করার বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেনি।

এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ভোটার তালিকা আইন ও বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান আনোয়ার হোসেন।

এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের দুই ছেলে আনিছুর রহমান এবং আজিজুল হক তথ্য গোপন করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন বলে অভিযোগ আছে। এনআইডিতে দুই ভাইয়ের একই নাম হলেও আলাদা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

২০১২ সালে রংপুর বেতারে অফিস সহায়ক পদে চাকরি নেন আনিছুর। আর ২০১৪ সালে রেলওয়ের ওয়েম্যান পদে অষ্টম শ্রেণি পাশের যোগ্যতা দেখিয়ে চাকরি পান আনিসুরের ছোট ভাই আজিজুল হক।

চাকরি নিতে তথ্য গোপনের আশ্রয় নেন আজিজুল। এ ক্ষেত্রে তিনি তার আগের ভোটার আইডি সংশোধন করেন।

বড় ভাই আনিসুরের সব তথ্য ব্যবহার করে তিনি এনআইডি সংশোধন করেন। পড়াশুনা না করেও তিনি বড় ভাই আনিছুর রহমানের অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদ ব্যবহার করেন।

আগের ভোটার আইডিতে আজিজুল হকের জন্ম সাল ছিল ১৯৮৭ সালের ৫ এপ্রিল। পেশা ছিল কৃষক। নতুন আইডিতে তার জন্মের সাল-তারিখে লেখা ১৯৮২ সালের ৭ জুলাই।

জাতীয় পরিচয়পত্রে তথ্য গোপন করে নাম পরিবর্তন করলেও স্বাক্ষর পরিবর্তন করেননি আজিজুল হক।

২০১৪ সালে এনআইডিতে তথ্য গোপন করে চাকরি করার সংবাদ গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। পরে তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন দুই ভাইয়ের নামে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে মামলার নির্দেশ দেয়।

২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচন অফিসার আনোয়ার হোসেন তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেন।

এ বিভাগের আরো খবর