ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে কিছু ভোটারের পরিচয় শনাক্তে আঙ্গুলের ছাপ না মেলার যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তার সমাধানে নতুন একটি চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সব ভোটারের দুই হাতের ১০ আঙ্গুলের প্রতিটির ছাপই নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। এর ফলে কোনো কোনা কোনো আঙ্গুলের ছাপ ইভিএম শনাক্ত করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
আলমগীর বলেন, ‘১০ আঙ্গুলের ছাপ নিলে যদি একটা আঙ্গুলও মিলে যায়, তবু ভোটার ভোট দিতে পারবে। এখন চার আঙ্গুলের ছাপ থাকায় অনেকেই মেলে না। তখন প্রিজাইডিং কর্মকর্তার তার আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে সংশ্লিষ্টকে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দেন। এ নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে, যে কারচুপির সুযোগ থেকে যায়। ওভাররাইট করা যায়। তাই ১০ আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হবে। একই সঙ্গে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ওই ক্ষমতার বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা হবে।’
ইভিএম আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে সেই পরিচয় নিশ্চিত করার পরই ভোট দেয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। তবে কিছু ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ মেলে না নানা জটিলতায়। তাদের পরিচয় শনাক্তে প্রিজাইডিং অফিসারের একটি বিশেষ ক্ষমতা আছে। ওই কেন্দ্রে শতকরা এক শতাংশ ভোটারের পরিচয় তিনি তার আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে নিশ্চিত করে দিতে পারেন।
এই এক শতাংশ ক্ষমতা নিয়ে ইভিএমবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সমালোচনা করে আসছে। তারা মনে করে, প্রিজাইডিং অফিসার এই এক শতাংশ ভোট কোনো বিশেষ দলের পক্ষে দিয়ে দেয়ার সুযোগ করে দিতে পারেন।
কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে দুটো কাজ এক সঙ্গে হয়। ভোটারের পরিচয় শনাক্তকরণ এবং ব্যালট ইউনিটে ব্যালট ওপেন হয়ে যায়। তখন ভেতরে গেলেই ভোট দিতে পারবেন।
‘কারও আঙ্গুলের ছাপ যদি না মেলে… না মেলা কারণ হলো বয়স বেশি হলে, ভারী কাজ করলে বা হাত না থাকলে। এখন কেউ ভোট দিতে না পারলে সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন হয়। সেজন্য প্রিজাইডিং অফিসার ভেটারের নাম, পরিচয়, এনআইডি নম্বর মিলিয়ে দেখেন। এরপর পরিচয় শনাক্ত হলে এনআইডি নম্বর ব্যালট ইউনিটে দেয়া হয়। এই তিনটা যদি মিলে যায় তবেই প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারের পরিবর্তে নিজের আঙ্গুলের ছাপ দেন। তখন ব্যালট ইউনিট সচল হয়।
‘তিনি ভোট দিতে পারেন না। তিনি কেবল সচল করে দেন। সেটার রেকর্ডও আবার ইভিএমের মধ্যে থেকে যায়, যে কাকে এবং কয়জনকে তিনি এই সুযোগটা করে দিয়েছেন।’
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে কয়েকজন বক্তা দাবি করেছেন, প্রিজাইডিং অফিসাররা ৫০ শতাংশ ভোটারের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেন। এসব বক্তব্য খণ্ডন করে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘টক শোতে কথা বলতে তো প্রমাণ লাগে না। কিন্তু আমাকে কথা বলতে হলে প্রমাণ লাগে। অনেকেই টক শোতে বলছেন ৫০ শতাংশ ক্ষমতা প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে। প্রমাণ দেখান আমরা মিলিয়ে দেখি, তাহলে শাস্তি হবে।
তিনি বলেন, ‘অনেকে টক শোতে আলোচনা করে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার মাধ্যমে ওভাররাইট করা যায়। তো বিষয়টাই তো ভুল। ওভাররাইট করার তো কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টা ভোটারের পরিচয় নিশ্চিতের পর ব্যালট পেপার যেমন দেয়া হয়, এটাও তাই। মিসইউজ যাতে কোনোভাবে হতেই না পারে, সে জন্য এক শতাংশের বেশি আমরা দিই না।’
তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এটি এক শতাংশের বেশি হতেও পারে বলেও জানান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘৫০০ ভোটার কোনো কেন্দ্রে থাকলে ৫ জন ভোটারকে তিনি সুযোগটা দিতে পারবে না। ৬ নম্বর ভোটার আসলেও প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সেটা পারেন না। কারণ প্রিজাইডিং অফিসারের আইনগত এবং টেকনিক্যালি সে সুযোগ থাকে না। এই অবস্থায় যদি প্রিজাইডিং পোলিং অফিসার, নির্বাচনি এজেন্ট সবাই একমত হন যে ওই ৬ নম্বর ব্যক্তিটি ভুয়া ভোটার নন, তখন প্রিজাইডিং অফিসার রিটার্নিং অফিসারকে ফোন করেন, তিনি আবার নির্বাচন কমিশনে ফোন করবেন। নির্বাচন কমিশন তখন একটা নতুন পাসওয়ার্ড দেন। সেই পাসওয়ার্ড দিলেই কেবল ওই ৬ নম্বর ব্যক্তিকে সুযোগ করে দিতে পারেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা।’
‘এক শতাংশের ওপরে কোথাও লাগেও না। হঠাৎ কোনোখানে লাগে। এতগুলো নির্বাচন করলাম কেবল বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের একটা নির্বাচনে এমন বাড়াতে হয়েছিল।’
মো. আলমগীর বলেন, ‘ওভাররাইট করা যায়, প্রিজাইডিং ভোট দিয়ে দেয়; এই নানা রকম কথাবার্তা, ভুল ধারণা আছে তা দুর করতে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কমিশন বৈঠকে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওটা ১ শতাংশের ওপরে ওঠবে না কখনও। তবে কথাটা আরও স্পটিকরণ করা হবে, যেন ভুল ধারণা দূর হয়। এখন প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে কাকে, কয়জনকে সুযোগটা দিলেন সে তথ্য কেবল ইভিএমে থেকে যায়। এখন এটার সঙ্গে সকলের স্বাক্ষরসহ ফিজিক্যাল ডকুমেন্টও রাখার চিন্তা ভাবনা হচ্ছে।’
ইভিএমের সুবিধা সম্পর্কে কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘প্রথম কন্ডিশন হলো যার ভোট তিনিই দেবেন, এটা নিশ্চিত করা হয়। ভোটার উপস্থিত না হলে অন্য কারো ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। এটাই হলো ইভিএমের বিশেষত্ব। যন্ত্রই বলে দেয় কেউ ভোটার কি-না, অর্থ্যাৎ ফিঙ্গার প্রিন্ট যখন দেবে ইভিএমে সঙ্গে সঙ্গে নাম ছবি ভেসে ওঠবে। আর ওই কেন্দ্রের না হলে সেটাও বলে দেবে যে আপনি এই কেন্দ্রের ভোটার নন।’