আজমিরীগঞ্জ-কাকাইলছেও সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৪৭টি গ্রামের অন্তত ৫-৬ হাজার মানুষের যাতায়াত। গত বন্যায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কটির তিনটি স্থানে বড় বড় ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু বন্যার পানি নেমে যাওয়ার আড়াই মাসেও ওই ভাঙনগুলো মেরামত হয়নি। ভোগান্তিতে পড়েছে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীরা। কোথাও বাঁশের সাঁকো, আবার কোথাও কাদা মাটিতে পাথরের টুকরো ফেলে যাতায়াত করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
একইভাবে আজমিরীগঞ্জ-পাহাড়পুর সড়কের চারটি অংশ ও নবীগঞ্জ মারকুলি সড়কের সাতটি অংশে বড় বড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোতে বাঁশের সাঁকো অথবা পাথরের টুকরো ফেলে যাতায়াত করছে লোকজন। ঘটছে দুর্ঘটনা, গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত ১৭ জুন থেকে হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। এ সময় আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ, বানিয়াচং ও লাখাই উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। সড়কগুলোয় দেখা দেয় খানাখন্দ। বিশেষ করে আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলার সড়কে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ভাঙনের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো সড়ক।
জেলা স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বন্যায় হবিগঞ্জের ৮৫১ কিলোমিটার সড়ক ও ১৮৭ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও কালভার্ট মেরামতের জন্য প্রয়োজন ২৪৫ কোটি টাকা।
আজমিরীগঞ্জ-কাকাইলছেও সড়কের তিনটি অংশে, আজমিরীগঞ্জ-পাহাড়পুর সড়কের চারটি অংশে, নবীগঞ্জ-মার্কুলি সড়কের সাতটি অংশে বড় বড় ভাঙন দেখা দেয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও মেরামত হয়নি ভেঙে যাওয়া স্থানগুলো। এতে ওই সড়কগুলো দিয়ে এখনও বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ।
কাকাইলছেও এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মতিন বলেন, ‘এবারের বন্যায় এ সড়কের তিনটি জায়গায় বড় বড় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিন মাস হয়ে গেলেও সেগুলো কেউ ঠিক করতেছে না। আমরা অনেক কষ্ট করে যাওয়া-আসা করতাছি। ভাঙার মাঝে পাথর দিয়া যাওন লাগে। আর বৃষ্টি হলে অবস্থা আরও খারাপ।’
একই এলাকার সুমন মিয়া বলেন, ‘তিনটা জায়গায় ভাঙা। টমটম দিয়া তো যাওন যায়ই না। মোটরসাইকেল দিয়াও যেতে পারি না। দুই দিন আগেও মোটরসাইকেল দিয়ে যেতে গিয়ে একজন লোক খালে পড়ে যায়। পরে আমরা এসে তাড়াতাড়ি তাকে তুলি।’
স্কুলছাত্র মাহিদুল হাসান বলেন, ‘আমি টমটম দিয়া স্কুলে যাইতাম ১৫ টাকা ভাড়ায়। এখন ৩০ টাকা ভাড়া লাগে। বৃষ্টি হলে ৫০ টাকা ভাড়া দিয়েও যাওয়া যায় না। কাপড় ভিজে যায়।’
মার্কুলি এলাকার বাসিন্দা সুবল দাস বলেন, ‘আগে এক গাড়ি দিয়া বাড়িতে যাইতে পারতাম। এখন চাইরবার গাড়ি বদলানো লাগে। এতে খুব কষ্ট হয়। আবার ভাড়াও বেশি লাগে।’
বদলপুর বাজারের ব্যবসায়ী মনমোহন দাস বলেন, ‘দোকানের মালামাল নিতে অনেক সমস্যা হয়। কয়দিন আগে গাড়ি দিয়া মাল নিছিলাম। ৪-৫ বার ওঠা-নামা করানোর কারণে অনেক মাল ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন নৌকা দিয়া কুশিয়ারা নদী হয়ে ঘুরিয়ে মালামাল নেই। এতে ভাড়া তিন গুণের বেশি দেওন লাগে।’
ফার্মেসি ব্যবসায়ী ফয়েক আহমেদ বলেন, ‘কয়েকদিন আগে কাধে করে চার কার্টন সিরাপ নিয়ে পার হইছিলাম। তখন পা পিছলে পড়ে যাই। সব সিরাপ পানিতে তলিয়ে গেছে।’
হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল বাছির বলেন, ‘বন্যায় হবিগঞ্জের ৮৫১ কিলোমিটার সড়ক ও ১৮৭ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক ও কালভার্ট মেরামতের জন্য প্রয়োজন ২৪৫ কোটি টাকা। কিছু টাকা বরাদ্দ এসেছে। এতে বড় বড় যে ভাঙন আছে, সেগুলো মেরামতের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে, যেন অন্তত যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করতে পারি। তবে সিলেট বিভাগের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সেই প্রকল্প অনুমোদন হলেই সড়ক থেকে বন্যার ক্ষত পুরোপুরি সারাতে পারব।’