বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চায়না দুয়ারি জালের বিস্তারে হুমকিতে মাছের ভান্ডার

  •    
  • ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৮:৪৭

শুধু মাছ নয়, জলজ প্রাণী শামুক, ঝিনুক, সাপ, ব্যাঙসহ প্রায় সবই আটকা পড়ে চায়না দুয়ারি নামে এক নতুন ধরনের জালে। যখন ডাঙায় শুকাতে দেয়া হয়, তখন জালের লেগে থাকা মাছ খেতে এসে আটকা পড়ে পাখিরাও। সহজে বহনযোগ্য ও বেশি পরিমাণে মাছ আহরণ করা যায় বলে এই জাল দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

মাছ আহরণ করতে দক্ষিণাঞ্চলীয় খুলনা জেলার জেলেরা নতুন এক ধরনের জাল ব্যবহার করছেন, যা চায়না দুয়ারি বা ট্রেন জাল নামে পরিচিত। এই জালের প্রতি গিঁটের ফাঁসের দূরত্ব এক সেন্টিমিটারেরও কম। এতে একবার প্রবেশ করলে মাছের ডিম থেকে পোনা কিছুই বের হতে পারে না।

শুধু মাছ নয়, জলজ প্রাণী শামুক, ঝিনুক, সাপ, ব্যাঙসহ প্রায় সবই আটকা পড়ে এ জালে। যখন ডাঙায় শুকাতে দেওয়া হয়, তখন জালে লেগে থাকা মাছ খেতে এসে আটকা পড়ে পাখিরাও।

সহজে বহনযোগ্য, জাল ফেলতে কষ্ট কম ও বেশি পরিমাণে মাছ একই সঙ্গে আহরণ করা যায় বলে এ জাল দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

বতর্মানে খুলনার তেরখাদা উপজেলার ভুতিয়ার বিল, বাসুয়াখালী বিল, ডুমুরিয়া উপজেলার ডাকাতিয়া বিল ও শিবসা, পশুর, ভদ্রা, ভৈরব, শিবসা, কাজীবাছা, কপোতাক্ষ নদসহ প্রায় সব নদী ও খালে এই জাল ব্যবহার করা হচ্ছে।

তেরখাদা উপজেলার নাচুনিয়া গ্রামের জেলে মোজাফ্ফার বলেন, ‘আমি প্রায় পাঁচ বছর ধরে ভুতিয়ার বিল থেকে মাছ আহরণ করি। আগে মাছ ধরার জন্য খেওলা জাল ব্যবহার করতাম। সারা রাত বিলে জাল খেওয়াতে বেশ কষ্ট হতো। তবে গত বছর থেকে চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার করছি।’

তিনি বলেন, ‘এই জাল বিকেলে বিলে ফেলে সকালে ওঠানো হয়। রাতে আর কষ্ট করা লাগে না। আগে খেওলা জাল নিয়ে সারা রাত কষ্ট করে ৫০০ টাকার মাছও পেতাম না। এখন চায়না দুয়ারি জালে ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকার মাছ পাই।’

২০ ফুট লম্বা পাঁচটি চায়না দুয়ারি জাল রয়েছে মোজাফ্ফারের। তিনি দাবি করেন, অন্তত ৫ শতাধিক জেলে ২ হাজারেরও বেশি চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে ভুতিয়ার বিল থেকে মাছ আহরণ করেন।

একই উপজেলার জেলে আফতাব মোল্লা বলেন, ‘ভুতিয়ার বিলের পাশাপাশি আমরা আঠারো বেকি নদীতেও চায়না দুয়ারি জাল পেতে রাখি। একবার জাল পেতে রাখলে টানা পনের দিন আর ওঠানো লাগে না। শুধু প্রতিদিন একবার মাছ ছেঁকে নিয়ে আসতে হয়। পনের দিন পর একবার রোদে শুকাতে হয়। না হলে শেওলায় জালের ফাঁস বন্ধ করে দেয়।’

চায়না দুয়ারি জাল দিনের পর দিন পানিতে রেখে দেয়া যায়। এই জালের সুতা প্লাষ্টিকের তৈরি হওয়ায় সহজে নষ্ট হয় না। জেলেদের ধারণা, এই জাল চায়না থেকে আমদানি করা হয় এবং মাছ প্রবেশ করার জন্য একাধিক দুয়ার থাকায় নাম হয়েছে চায়না দুয়ারি। আবার অনেকটা লম্বা হওয়ায় অনেকে একে ট্রেন জালও বলে থাকেন।

বাংলাদেশে প্রচালিত কোনো মৎস্য আইন ও বিধিমালায় সরাসরি চায়না দুয়ারি জাল নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ বিধিমালায় সাড়ে চার সেন্টিমাটার বা তার থেকে কম দৈর্ঘ্যের ফাঁসবিশিষ্ট জাল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, ‘জালের গিঁটের দৈর্ঘের আইন মোতাবেক এই জালটি আমাদের দেশে পুরোপুরি নিষিদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি যেকোনো জাল মাছের জন্য হুমকি। ছোট ছোট মাছগুলো টিকিয়ে রাখা জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া বড় মাছের পোনা যদি ধরে ফেলা হয়, তাহলে মা মাছের সংকট তৈরি হবে। তখন মাছের উৎপাদনও হ্রাস পেতে শুরু করবে।’

একই বিভাগের অধ্যাপক ড. খন্দকার আনিসুল হক বলেন, ‘এই জাল শুধু মৎস্য ভান্ডার ধ্বংস করছে না, এটা পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। প্লাস্টিকের তৈরি হওয়ায় এটা দীর্ঘদিন নষ্ট হয় না। অনেক সময় এই জাল জেলেরা নদী বা বিলে ফেলে দেন, তখন জালের মধ্যে মাছসহ অন্যান্য প্রাণী আটকা পড়ে মারা যায়। তা ছাড়া অনেক মাছ জালের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে ফাংগাস বা ব্যাক্টেরিয়াল রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। পরিত্যক্ত এসব জাল যুগের পর যুগ পরিবেশের ক্ষতি করতে থাকে।’

খুলনা জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুসারে, জেলার মোট ৩৪টি নদী, খাল ও ১৩টি বিল থেকে জেলেরা মাছ আহরণ করেন।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, ‘নতুন করে এই জালের ব্যবহার শুরু হয়েছে। মাছ রক্ষায় আমরা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি।’

তিন বলেন, ‘নদী-খালের তুলনায় বিলগুলোতে এই জাল বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। সেসব এলাকা আমরা চিহ্নিত করে বেশি অভিযান চালাচ্ছি। জাল পেলে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর