বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৫ লাখে ইউরোপ পাঠানোর ফাঁদ

  •    
  • ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৬:৩৫

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৬টি পাসপোর্ট, তিনটি চেক বই, চারটি স্ট্যাম্প, পাঁচটি মোবাইল, চারটি বিএমইটি কার্ড, চারটি রেজিস্ট্রার উদ্ধার করা হয়।

উচ্চ বেতনের চাকরি, সঙ্গে নানা সুবিধা, তাও আবার ইউরোপের দেশেগুলোতে। আর সেখানে এসব পেতে খরচ করতে হবে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। এমন প্রলোভন দেখিয়ে ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া মানব পাচার চক্রের হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এবং রাজধানীর গুলশান এলাকায় সোমবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

শুধু ইউরোপ নয়, কম খরচে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্য দেশগুলোতেও তারা পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে আসছিল।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন তোফায়েল আহমেদ, আক্তার হোসেন, আনিছুর রহমান ও মো. রাসেল।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৬টি পাসপোর্ট, তিনটি চেক বই, চারটি স্ট্যাম্প, পাঁচটি মোবাইল, চারটি বিএমইটি কার্ড, চারটি রেজিস্ট্রার উদ্ধার করা হয়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।

প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘আসামিরা সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের সদস্য। চক্রের হোতা দুবাই প্রবাসী তোফায়েল আহমেদ এবং বাংলাদেশে চক্রের হোতা আনিছুর রহমান ও আক্তার হোসেন। রাসেল তাদের অন্যতম সহযোগী।

‘তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার নাম করে প্রলুব্ধ করে। মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর খরচ বাবদ প্রাথমিকভাবে তারা ৪ থেকে ৫ লাখে ইউরোপ এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশের জন্য তারা ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়ে থাকে।’

তিনি জানান, ভিকটিম ও তাদের অভিভাবকরা রাজি হলে প্রথমে তারা পাসপোর্ট এবং প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে থাকে। তারপর ভিকটিম এবং অভিভাবকদের বিদেশ থেকে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে ফোন দিয়ে আশ্বস্ত করে। আসামিদের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে তারা খুব ভালো আছে এবং অনেক অর্থ উপার্জন করে বলে জানানো হয়।

এমন প্রলোভনে অনেকেই আগ্রহী হয়ে ওঠে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরিবহন খরচ, ভিসা খরচ, মেডিক্যাল খরচ, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি খরচের কথা বলে আসামিরা ধাপে ধাপে ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করতে থাকে বলে জানান র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা।

আরিফ মহিউদ্দিন জানান, ফ্লাইটের আগে ভুক্তভোগীদের কাছে পাসপোর্ট, ভিসা বা টিকিট হস্তান্তর করা হয় না। তাদের যখন বিমানবন্দরের ভেতর প্রবেশ করেন, ঠিক তখন তাদের হাতে এসব ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারে কর্মী ভিসার বদলে তাদের ভ্রমণ ভিসায় পাঠানো হচ্ছে। পরে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও আসামিদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না।

র‍্যাব জানায়, অনেক সময় বিদেশ পৌঁছানোর পর দুবাই প্রবাসী জাহিদ ভিকটিমদের স্বাগত জানিয়ে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তারপর ভিকটিমের কাছ থেকে তার পাসপোর্ট ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাদের একটি সাজানো কোম্পানিতে চাকরি দেয়া হয়। চার-পাঁচ দিন পর কোম্পানি থেকে জানিয়ে দেয়া হয় কোম্পানি আইনি জটিলতার কারণে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তারপর জাহিদ পুনরায় ভিকটিমদের অজ্ঞাত স্থানে বন্দি করে রেখে ভিকটিমদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে অর্থ আদায় করে। ওই সময়ে ভিকটিমদের কোনো খাবার দেয়া হয় না। খাবার চাইলে জাহিদ বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে এসে খাবার কিনতে বলে।

র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক বলেন, তোফায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তোফায়েল ভিকটিমদের অপেক্ষা করতে বলে। জানায়, আইনি জটিলতা দূর হলেই আবার কোম্পানি চালু হবে। পরে পাসপোর্ট ফেরত নিতেও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় আসামিরা, যা দেশে কোনো স্বজনের মাধ্যমে পরিশোধ করেন ভুক্তভোগীরা।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ট্রাভেল এজেন্সি বা রিক্রুটিং এজেন্সি পরিচালনার কোনো লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। তারা শুধু সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে সিটি এক্সপ্রেস ট্রাভেল এজেন্সি নামে মানব পাচার ব্যবসা করে আসছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা।

এ বিভাগের আরো খবর