ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জের শাল্লার ঝুমন দাসের জামিন আবেদন আবারও খারিজ করেছে আদালত।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সোমবার সকালে জামিন আবেদন করলে তা নাকচ করেন বিচারক জাকিয়া পারভিন।
ঝুমন দাশের আইনজীবী পঙ্কজ কুমার নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলায় আমরা জামিন আবেদন করেছিলাম। শুনানি গত ১৯ সেপ্টেম্বর হওয়ার কথা থাকলেও বিজ্ঞ বিচারক ছুটিতে থাকায় আজ (সোমবার) শুনানি হয়। বিচারক জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
‘পরিবারের সম্মতিতে ঝুমন দাসের জামিন চাইতে আমরা এখন উচ্চ আদালতে যাব।’
ঝুমন দাসের মা নিভা রানী দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলে নির্দোষ হওয়ার পরও সে জামিন পায়নি। আমি আমার ছেলের মুক্তি চাই। এখন আমরা হাইকোর্টে যাব।’
এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর তার জামিনের আবেদন নাকচ করেন বিচারক।
ঝুমনকে গত ৩০ আগস্ট সকালে ঝুমনকে হেফাজতে নেয় শাল্লা থানা পুলিশ। প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমনুর রহমানের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর আগে গত বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ‘শানে রিসালাত সম্মেলন’ নামের একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন।
এই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের ঝুমন দাস। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন।
মামুনুলের সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকেন তার অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পরদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সকালে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপারের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়ি, মন্দির। ঝুমনের স্ত্রী সুইটিকে পিটিয়ে আহত করা হয়।
এরপর ২২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম।
শাল্লায় হামলার ঘটনায় শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম, স্থানীয় হাবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ও ঝুমন দাসের মা নিভা রানী তিনটি মামলা করেন। তিন মামলায় প্রায় ৩ হাজার আসামি।
কারাবন্দির ছয় মাস পর শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্তি পান গ্রেপ্তার ঝুমন দাস।