পোল্ট্রি খামারিদের সহায়তা দিতে মানিকগঞ্জে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় হাঁস-মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার বা হ্যাচারি। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৩৬ বছর পরও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি খামারে। উল্টো জীর্ণ ভবনে চলছে বাচ্চা লালন-পালনের কাজ। এতদিনেও বাড়েনি হাঁস-মুরগির বাচ্চা সরবরাহ করার সামর্থ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার একমাত্র সরকারি হ্যাচারিটি চলছে অযত্ন-অবহেলায়। খামার ভবনের বেশ কিছু কাচের জানালা ভাঙা। শীতে হু-হু করে ঠান্ডা বাতাস ঢোকে। নেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা। খামারের মেঝে স্যাঁতসেঁতে। দীর্ঘদিনেও আধুনিকের ছোঁয়া লাগেনি খামারে।
হাঁস-মুরগির বাচ্চা বা চিক বিক্রি হয়ে যাওয়ায় কোনো বাচ্চা নেই খামারে। বিশাল জায়গাজুড়ে একটি অফিস ভবন। আর একটি খামার ভবন। বাকি জায়গায় পেঁপে আবাদ করা হয়েছে।
১৯৮৬ সালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জয়রা এলাকার এক একর ৭২ শতাংশ জায়গার ওপর সরকারি এ হাঁস-মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রাণিসম্পদ বিভাগের অধীনে এ খামারটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে: ‘প্রাণিসম্পদের উৎপানশীলতা বৃদ্ধি এবং মূল্য সংযোজনের মাধ্যেমে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ। গ্রামীণপর্যায়ে খামার স্থাপনের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, ক্ষুদ্র খামারি ও জনগণের মাঝে বাড়ন্ত বাচ্চা বিতরণ করা। এ ছাড়া যুবক-যুবতীদের পোল্ট্রি পালনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে বেকারত্ব দূরীকরণ এবং সঠিকভাবে খামারিদের পোলট্রি পালনের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা।’
সম্প্রতি খামারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার’।
খামার সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জে ছোট-বড় ১১ শতাধিক হাঁস-মুরগির খামার আছে। এসব খামারে মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য মুরগী লালন-পালন করেন খামারিরা। আর লালন-পালনের জন্য মুরগির বাচ্চা বা চিক তারা সংগ্রহ করেন এই হ্যাচারি থেকে।
মিরপুরে কেন্দ্রীয় মুরগি খামার থেকে বছরে চার ব্যাচে ফাউমি, আরআইআর এবং হোয়াইট রক জাতের একদিন বয়সের আড়াই হাজার করে মুরগির বাচ্চা মানিকগঞ্জের এই সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে পাঠানো হয়। সেখানে বাচ্চাগুলো ৪২ দিন পর্যন্ত লালন-পালন করা হয়। এরপর সেগুলো জেলার খামারিদের কাছে বিক্রি করা হয়।
মানিকগঞ্জের পোল্ট্রি খামারিরা মনে করেন, তাদের চাহিদার তুলনায় এ সরবরাহ নগণ্য।
পৌরসভার শিববাড়ী এলাকার খামারি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খামারির তুলনায় বাচ্চা একেবারে কম। যে দিন হাঁস-মুরগির বাচ্চা বিক্রি করা হয়, সেদিন অনেক খামারিই খালি হাতে ফিরে যান। যারা পান, তারাও চাহিদার তুলনায় খুবই অল্প চিক পান। জেলায় বছরে প্রায় ১ লাখ বাচ্চা আমাদের দরকার। কিন্তু এখান থেকে সরবরাহ করা হয় মাত্র ১০ হাজার। খামারি ও মাংস এবং ডিমের কথা ভেবে দ্রুত খামারটি আধুনিকায়ন করা উচিত এবং বাচ্চার সংখ্যা বাড়ানো দরকার।’
পোলট্রি প্রোডাকশনের উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম জানান, ‘খামারের অবস্থা খুব একটা ভালো না। প্রচণ্ড রোদ আর শীতের সময়ে বাচ্চাদের কষ্ট হয়। জানালা ভাঙা হওয়ায় শীতে ছালা (চটের বস্তা) দিয়ে বেড়া দিতে হয়। আলো ও বাতাসের সঠিক ব্যবস্থাও নাই। একেবারে নাজেহাল অবস্থা খামারের।’
তিনি আরও জানান, বাচ্চা বা চিক খামারে আসার পর নিয়মিত খাবার ও ঠিকমতো পরিচর্যা করতে হয়। বাচ্চা অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং ২১ দিন বয়সের মধ্যে দুইবার টিকা দেওয়া হয়। বাচ্চার বয়স ২৮ ও ৪২ দিন হলে খামারিদের কাছে সেগুলো বিক্রি করা হয়। সরকারি দরে ২৮ দিনের বাচ্চা ৩৫ টাকা এবং ৪২ দিনের প্রতিটি বাচ্চা ৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
মানিকগঞ্জ হাঁস-মুরগি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. তানজিবুল হাসান বলেন, ‘খামারটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো উন্নয়ন করা হয়নি। শুধু মাঝেমধ্যে মেরামত করা হয়। তবে মানিকগঞ্জসহ দেশের ৩৩টি খামার আধুনিকীকরণের জন্য ইতোমধ্যে সরকারি একটি টিম এসেছিল। তারা এসে জরিপ করেছে। খামারটি আধুনিকায়ন করা হলে পোলট্রি ব্যবসায় খামারি ও সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানিকগঞ্জে সরকারি খামারের মুরগির বাচ্চার প্রচুর চাহিদা আছে। আমরা বছরের যে ১০ হাজার বাচ্চা পাই, তাতে খামারিদের হয় না। কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ হাজার বাচ্চা দরকার। বর্তমানে হ্যাচারির যে দশা, তাতে সঠিকভাবে বাচ্চা লালন-পালন করা সম্ভব নয়। তার পরও কষ্ট করে বাচ্চা লালন-পালন করা হচ্ছে।’