মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগমকে ফরিদপুর থেকে উদ্ধারে খুলনা থেকে গিয়েছিল দৌলতপুর থানা পুলিশের একটি দল। এই উদ্ধার অভিযানে ছিলেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দোলা দে।
ফরিদপুর থেকে খুলনা এনে পুলিশের ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত রহিমা বেগমের দেখভালের দায়িত্বেও ছিলেন দোলা।
পুলিশের এই কর্মকর্তা উদ্ধার অভিযান ও পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে।
দোলা জানান, ফরিদপুর থেকে নিয়ে আসার পর দৌলতপুর থানা পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় পুলিশের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো কথা বলেননি রহিমা। তবে মাঝেমধ্যে ইশারায় কিছু যোগাযোগ হয়েছে এসআই দোলার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যায় থানা থেকে আমাকে ফোন করে জানায় একটি উদ্ধার অভিযানে যেতে হবে। আমরা রেডি হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রওনা হই। কোথায় কী অভিযানে যেতে হচ্ছে, তা থানা থেকে আগে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।
‘মাঝপথে গিয়ে জানতে পারি আমরা নিখোঁজ রহিমা বেগমকে উদ্ধার করতে ফরিদপুরে যাচ্ছি।’
দৌলতপুর থানার থানার উপপরিদর্শক দোলা দেদোলা বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমরা ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে পৌঁছাই। সেখান থেকে সোজা চলে যাই কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে। তাৎক্ষণিক দলের সবাই প্রবেশ করি কুদ্দুস মোল্লার ঘরে।
‘সেখানে রহিমা বেগম আরও তিনজন নারীর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। দৌলতপুর থানার ওসি নজরুল ইসলামকে রহিমা বেগম আগে থেকেই চিনতেন। হঠাৎ ওসিকে দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান।
‘আমরা রহিমা বেগমকে নিজেদের হেফাজতে নিই। পরে ওই বাড়ির তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি।’
এসআই দোলা বলেন, ‘রাত ১১টার কাছাকাছি সময়ে আমরা ফরিদপুর থেকে খুলনার উদ্দেশে রওনা হই। গাড়িতে আমার ডান সাইডে বসেছিলেন রহিমা বেগম। সিনিয়র স্যাররা রহিমা বেগমকে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন। তবে কোনো প্রশ্নেরই তিনি উত্তর দেননি।’
পুলিশের দলটি মধ্যরাতের পর খুলনা পৌঁছায়।
দোলা বলেন, ‘রাত ২টা ১০ মিনিটের দিকে আমরা দৌলতপুর থানায় পৌঁছাই। সেখানে ডিসি স্যার সাংবাদিকদের ব্রিফ করার পর থানায় রহিমা বেগমকে আমার সঙ্গে রেখে দেন।’
‘রাতে তাকে আমি নিজের মায়ের মতো সেবাযত্ন করি। নানাভাবে তার আত্মগোপনের কথা জানতে চাই। একপর্যায়ে তাকে বলি, আমি তো আপনার মেয়ের মতো, কাল সকালে তো মেয়েদের কাছে আপনাকে দিয়ে দেয়া হবে। তাদের তো সব বলবেন, আমাকে কিছু বলেন।
‘তখন তিনি মাথা ইশারা করে আমাকে জানান, মেয়েদের কাছে যেতে চান না। তাহলে কী স্বামীর কাছে যেতে চান- এই প্রশ্ন করি। সেটাও তিনি চান না জানিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং ১০ থেকে ১৫ মিনিট কাঁদতে থাকেন।’
থানায় রাতভর রহিমা বেগমের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন এসআই দোলা দেদোলা বলেন, ‘এরপর নানাভাবে সান্ত্বনা দেয়ার পর তিনি (রহিমা) কান্না থামিয়ে নামাজ পড়তে চান। রাতটি তাকে নিয়েই আমি নির্ঘুম কাটিয়েছি।’
এসআই দোলা বলেন, ‘সকালে ওসি স্যারের নির্দেশে তাকে (রহিমা) নিয়ে যাই সোনাডাঙ্গার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। সেখানে তার মেয়েরা দেখা করতে এসেছিল। তবে রহিমা বেগম কিছুতেই মেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে রাজি ছিলেন না। একপর্যায়ে আমার অনুরোধে তিনি জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ান। মেয়েরা তাকে মা বলে ডাক দিলে আবার ভেতরে চলে যান।’
এর কিছু সময় পর রহিমা বেগমকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে পিবিআই কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।