ময়মনসিংহের ফুলপুরের বস্তাবন্দি মরদেহটি নিয়ে হঠাৎ করেই আলোচনা এলাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা দেশেই।
মরদেহটি কার, কে তাকে খুন করেছে- এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। গত ১৫ দিনে মেয়েটির পরিচয়ই শনাক্ত করা যায়নি।
পুলিশ পরিচয় শনাক্তে ফেসবুকে মেয়েটির বিষয়ে তথ্য দেয়া ছাড়াও থানায় থানায় নিখোঁজের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেছে কি না জানতে চেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুরোপুরি অন্ধকারে তারা।
আঙুলের ছাপ নিয়ে মরদেহ শনাক্তের কৌশলও কাজে লাগানো যায়নি। কারণ গলে যাওয়া হাতের ছাপ যন্ত্রের পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব ছিল না।
খুলনার আলোচিত তরুণী মরিয়ম মান্নানের মা নিখোঁজ হওয়ার বেশ কিছুদিন পর এই মরদেহটি পায় পুলিশ। এ নিয়ে খুব একটা আলোচনা ছিল এমন নয়। কিন্তু মরিয়ম হঠাৎ থানায় গিয়ে দাবি করেন, এটি তার মায়ের লাশ।
পুলিশ শুরু থেকেই বলছিল, সেই মরদেহটি ছিল ২৮ থেকে ৩২ বছর বয়সী কোনো তরুণীর, আর মরিয়মের মা পঞ্চাশোর্ধ্ব।
তবে মরিয়ম জোরালোভাবে বলতে থাকেন, তিনি তার মায়ের কাপড়, হাত, পা, কপাল চেনেন। তখন পুলিশ ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করে।
এর মধ্যে মরিয়মের মা উদ্ধার হন ফরিদপুর থেকে। তাকে অপহরণের যে অভিযোগ করা হচ্ছিল, সেই অভিযোগ এবং অভিযোগকারীরাই এখন বড় প্রশ্নের মুখে।
এদিকে মরিয়মের মাকে জীবিত উদ্ধারের পর অজ্ঞাত ওই মরদেহটির পরিচয় নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশ। কোনো ক্লুই মিলছে না এ বিষয়ে। কর্মকর্তারা বলছেন, তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামত স্পষ্ট বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত ১০ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রাম থেকে বস্তাবন্দি মরদেহটি পাওয়া যায়। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ১২ সেপ্টেম্বর সমাহিত করা হয়।
ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে জানান, মরদেহটি উদ্ধারের পরই গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। ছবিসহ জামাকাপড় ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন থানায় মরদেহের বয়সসহ সব আলামতের বর্ণনা দিয়ে খোঁজ করা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই নারীর খোঁজ পেতে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ওসি বলেন, ‘ওই নারীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পূর্বশত্রুতার জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এমন হলে কোনো থানায় পরিবার কিংবা স্বজনরা অভিযোগ দেয়ার কথা ছিল। এসব কারণে পরিচয় শনাক্তসহ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। তবে আশা করছি, দ্রুতই পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে।’
তরুণীর আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারের সঙ্গে কেন মেলানো হয়নি- এই প্রশ্নে ফুলপুর থানার ওসি মামুন বলেন, ‘ওই নারীর গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছি। এরপর মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে ময়মনসিংহ পিবিআইয়ের সাহায্য নেয়া হয়। তারা আঙুলের ছাপ নিতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু গলিত হওয়ার কারণে ভালোভাবে নেয়া সম্ভব হয়নি। সেই ছাপ মেলেওনি কোনোটির সঙ্গে।’
ডিএনএ পরীক্ষাও হবে না
মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করার যে কথা হয়েছিল, সেটিও এখন বাতিল করা হয়েছে। এটি মরিয়ম মান্নানের মা কি না, তা শনাক্ত করতেই পরীক্ষা করার কথা ছিল। কিন্তু মরিয়মের মায়ের খোঁজ মেলায় ওই মরদেহটির ডিএনএ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।