বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ কথার অর্থ বিগত নির্বাচনগুলো সঠিক ছিল না।
রাজধানীর বাড্ডা হাইস্কুল মাঠে রোববার বিকেলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ সারাদেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হত্যা ও হামলা-মামলার প্রতিবাদে এই সমাবেশ ডাকা হয়। গুলশান, বাড্ডা ও রামপুরা থানার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে অসংখ্য নেতা-কর্মী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে এতে অংশ নেয়।
সমাবেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে রাস্তায় আসুন; সেখানে পরীক্ষা হবে।
তিনি বলেন, ‘সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট আর বিদেশে টাকা পাচারের কারণে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ এখানে আমরা যে কারণে সমাবেশ করছি তা বিএনপির দলীয় কোনো ইস্যু নয়, দেশের ১৮ কোটি মানুষের ইস্যু।
‘এই সরকার মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাচার করে দেশকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। সরকার হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে আওয়ামী সিন্ডিকেট।
‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন লোডশেডিং জাদুঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ আজ লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। অর্থনীতি ধ্বংসের কিনারায় চলে গেছে। এর একমাত্র কারণ সরকারের দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার।’
বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, এই সরকার দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় রয়েছে। সেজন্য সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। আজ গরিব-খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে হাঁড়ি জ্বলছে না।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বয়- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে ড. মোশারফ বলেন, ‘আমি মনে করিয়ে দিতে চাই- ৭২ থেকে ৭৫ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। তারা গণতন্ত্র হত্যাকারী। আজ যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি বিনাভোটে একবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আর একবার ভোট ডাকাতি করে হয়েছেন।
‘বিশ্বের কেউ গত নির্বাচনকে নির্বাচন বলে না। অথচ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সময় গণতন্ত্রের সুবাতাস বয়। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। অর্থনীতিতে লুটপাট চালিয়েছে। ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। আর বিএনপির ইতিহাস গণতন্ত্রকে বার বার পুনরুদ্ধার করা।’
বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলেছেন যে এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আমরা তার কথায় বিশ্বাস করি না। আমরা ভোটারবিহীন সরকার দেখেছি। ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছিল।
‘সুষ্ঠু নির্বাচন হবে- প্রধানমন্ত্রীর এ কথা এদেশের জনগণ কেউ বিশ্বাস করে না। তাই আমাদের একটাই দাবি, অবিলম্বে পদত্যাগ করে সংসদ বাতিল করুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক, লেভেল প্লেইং ফিল্ড হোক, আপনারা রাস্তায় আসুন, সেখানে পরীক্ষা হবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও এবিএম রাজ্জাকের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূইয়া, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, নির্বাহী সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর উত্তর বিএনপির নেতা তাবিথ আউয়াল, আমিনুল হক, আব্দুল আলীম নকী, মুনসী বজলুল বাসিত আনজু, শামসুল হক, তহিরুল ইসলাম তুহিন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব প্রমুখ।