বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বনজের বিরুদ্ধে বাবুলের মামলার আবেদন নাকচ

  •    
  • ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৫:৪৮

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বাবুল আক্তার উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার ছিলেন। এর মধ্যে তিনি অনেকবার আদালতে এসেছেন। কিন্তু একবারও নির্যাতনের বিষয়ে আদালতে কোনো অভিযোগ করেননি। এখন এসব অভিযোগ করে মামলার অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। সবকিছু বিবেচনায় আদালত তার আবেদন দুটি খারিজ করে দিয়েছেন।’

হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয়জনের নামে মামলার জন্য চট্টগ্রামে আদালতে আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের আবেদনে খারিজ করে দিয়েছে আদালত।

স্ত্রী মাহমুদ খানম মিতু হত্যা মামলায় আসামি বাবুলের কারাকক্ষে তল্লাশি ও নিরাপত্তা চেয়ে করা আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন বিচারক।

রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছা এই সিদ্ধান্ত দুটি জানান। নিউজবাংলাকে এই আদেশের ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী মনির হোসেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বাবুল আক্তার উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার ছিলেন। এর মধ্যে তিনি অনেকবার আদালতে এসেছেন। কিন্তু একবারও নির্যাতনের বিষয়ে আদালতে কোনো অভিযোগ করেননি। এখন এসব অভিযোগ করে মামলার অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। সব কিছু বিবেচনায় আদালত তার আবেদন দুটি খারিজ করে দিয়েছেন।’

বাবুল আক্তারের এই দুই আবেদন খারিজের পর তার আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, ‘হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন এবং কারাকক্ষে তল্লাশির অভিযোগ ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত চেয়ে আমরা আদালতে দুটি আবেদন করেছিলাম। আদালত আবেদন দুটি খারিজ করে দিয়েছেন। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’

৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয়জনের নামে চট্টগ্রামের আদালতে মামলার আবেদন করেন বাবুল আক্তার। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শুনানি শেষে আদেশের জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করে।

আবেদনে বনজ ছাড়াও পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের এসপি নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের এসপি নাঈমা সুলতানা, সাবেক পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা, এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম ও চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবিরকে আসামি করার আবেদন করা হয়।

মামলার শুনানিতে উপস্থিত থাকা বাবুলের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ সেদিন বলেন, ‘পিবিআই বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে মিতু হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তি আদায়ে নির্যাতন করেছে। এই ঘটনায় নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫ (১) ধারা এবং সংশ্লিষ্ট আইনের ৫ (২) ধারায় মামলার আবেদন করা হয়েছে। বাবুল আক্তার নিজেই আবেদনটি করেছেন।’

এরপর ১২ সেপ্টেম্বর বাবুলের কারাকক্ষে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন তল্লাশি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তার আইনজীবী। বিষয়টি তদন্তে একই আদালতে আবেদনও করা হয়। আদালত শুনানি শেষে এই আবেদনটি ১৯ সেপ্টেম্বর আদেশের জন্য রেখেছিলেন।

পরবর্তী সময়ে ১৯ সেপ্টেম্বর এই দুই আবেদনের আদেশের সময় পিছিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করে আদালত।

১২ সেপ্টেম্বর আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ ৬ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদনের পর আসামিরা মারমুখী আচরণ করছেন। তাদের নির্দেশে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন জেল কোডের তোয়াক্কা না করে কারাগারে বাবুলের কক্ষে প্রবেশ করেন।

‘তিনি (ওসি) দীর্ঘ সময় ওই কক্ষে তল্লাশির নামে বাদীর জীবনের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে।’

তিনি জানান, জেল কোড অনুসারে কর্মরত কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কোনোভাবেই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও আদালতের লিখিত অনুমতি ছাড়া জেলখানায় প্রবেশ করতে পারেন না।

আইনজীবী মুরাদ বলেন, ‘এই যাত্রায় আসামিরা সফল না হলেও অভিযোগকারী বাবুল আক্তার ও তার পরিবারের জীবননাশসহ যেকোনো ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। তাই বাবুল আক্তারের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আদালতে তার পক্ষে পিটিশনটি (আবেদন) করেছি।’

তবে বাবুলের কারাকক্ষে তল্লাশির বিষয়টি ওসি নিজে এবং জেল সুপার আনোয়ারুল করিম অস্বীকার করেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে নগরের জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু।

এ ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত দাবি করে বাবুল আক্তার মামলা করেন পাঁচলাইশ থানায়। তদন্ত শেষে পিবিআই গত বছরের ১২ মে এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

হত্যায় ‘বাবুল জড়িত’ বলে সন্দেহ হলে একই দিন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন আরেকটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়। পুলিশ এ মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখায়।

বাবুলের করা মামলায় পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ অক্টোবর আদালতে নারাজি দেন তার আইনজীবী। আদালত ৩ নভেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়। পরে আদালত বাবুলকে নিজের করা মামলায়ই গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেয়।

এর মধ্যে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি পিবিআই মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের করা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এতে ওই মামলায় গ্রেপ্তার আসামি বাবুলসহ অন্যদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। মামলাটিতে পাওয়া সব তথ্য-উপাত্ত বাবুল আক্তারের করা মামলায় একীভূত করতেও আবেদন জানানো হয়।

পিবিআইয়ের অধিকতর তদন্তে বাবুল আক্তারের করা মামলায় তাকেই আসামি করা হয়।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে মঙ্গলবার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই।

তদন্তে বলা হয়, ২০১৩-১৪ সালে বাবুল আক্তার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কক্সবাজার জেলায় কর্মরত ছিলেন। সে সময় সেখানে কর্মরত এক বিদেশি উন্নয়নকর্মী গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই নারীর বাসার নিরাপত্তাকর্মী সরওয়ার আলম ও গৃহকর্মী পম্পি বড়ুয়ার আদালতে দেয়া জবানিতে ওই বাসায় বাবুলের যাতায়াতের বিষয়টি উঠে আসে। তা ছাড়া বাবুল আক্তারকে উপহার দেয়া ওই নারীর একটি বই জব্দ করে পিবিআই। সেই বইয়ে প্রথম দেখা ও তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়ে বাবুলের হাতে লেখা কিছু তথ্য রয়েছে।

পিবিআইয়ের অভিযোগপত্রে বলা হয়, গায়ত্রীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক নিয়ে মিতুর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হতো। আর এ কারণেই স্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন বাবুল।

আদালতে জমা দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, খুনের পুরো ঘটনায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ৬ জন। অস্ত্র সরবরাহ করেন আরেকজন। কিলিং মিশনের নেতৃত্ব দেন বাবুলের ‘সোর্স’ মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা।

২০১৬ সালে মিতু খুনের পর গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে দেয়া ওয়াসিম ও আনোয়ারের জবানবন্দিতে কামরুলের নির্দেশে খুনের কথা উঠে আসে। এরপর ২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর আসামি এহতেশামুল হক ভোলার জবানবন্দিতেও বাবুলের নির্দেশে তার সোর্স মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা মিতুকে খুন করে বলে জানান।

জবানবন্দিতে ভোলা বলেন, নির্দেশ না মানলে তাকে ‘ক্রসফায়ারে’ দেয়ার হুমকি দেন বাবুল। তবে ঘটনার কয়েক দিন পর কামরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে পুলিশে ধরে নেয়ার কথা বললেও পুলিশ বলেছে তিনি নিখোঁজ।

বাবুল ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম ওরফে কালু ও শাহজাহান মিয়া।

এর মধ্যে মুসা ও খাইরুল ছাড়া বাকিরা কারাগারে রয়েছেন।

যে চারজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন সাইদুল ইসলাম শিকদার ওরফে সাক্কু, আবু নাছের, নুরুন্নবী ও মো. রাশেদ। এর মধ্যে মিতু হত্যার কিছুদিনের মধ্যে রাশেদ ও নুরুন্নবী পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

এ বিভাগের আরো খবর