বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘চিটার সর্দার’ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত নিয়ে সংশয়ে নেতারাই

  •    
  • ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৩:৫২

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান সম্প্রতি সাকিবুলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। চাকরি দেয়ার নামে টাকা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ তার। কিন্তু তদন্ত কমিটি তাকে ডাকেইনি। তিনি নিজেই তদন্ত কমিটির কাছে গেলেও তার বক্তব্যও শোনা হয়নি।

ছাত্রশিবির থেকে ছাত্রদল হয়ে একেবারে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বনে যাওয়া সাকিবুল ইসলাম রানা ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কমিটি আদৌ কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে অন্য নেতা-কর্মীরা।

মোবাইল ফোনালাপে নিজেকে ‘চিটার সর্দার’ উল্লেখ করার পর হাস্যরস তৈরির পর তাদের বিরুদ্ধে চাকরি দিয়ে দেয়ার কথা বলে টাকা আদায়সহ বেশ কিছু অপকর্মের অভিযোগ উঠে আসে।

এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে ছাত্রলীগ দায়িত্ব দেয় সংগঠনের তিন কেন্দ্রীয় নেতাকে। তারা তদন্ত করতে গিয়ে ঘুরে এসেছেন রাজশাহীতে। তবে সেটি তৈরি করেছে নতুন এক বিতর্ক, যে কারণে এই তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

ঢাকা থেকে এসে রাজশাহী ঘুরে গেছেন তদন্ত কমিটির তিন সদস্যই। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই সভাপতি ও সম্পাদক ও তাদের অনুসারী নেতাদের বেষ্টনীতেই অবস্থান করেছেন তারা। এমনটাও প্রকাশ পেয়েছে যে, তদন্ত কমিটির সদস্যদের আকাশপ যাওয়া আসা থাকা খাওয়া, যাওয়া আসার খরচও বহন করেছেন অভিযুক্তরা। যদিও এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

বিতর্ক উঠার পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তিন নেতার একজনের নামে বিল পরিশোধ করা হয়েছে, যদিও সেই বিল দেয়া হয়েছে সেই নেতারা রাজশাহী ছাড়ার পরে।

সাকিবুল ও জাকিরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে গত সোমবার সকালে রাজশাহী আসেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক শেখ শামীম তূর্য, উপ-আইন সম্পাদক আপন দাস এবং সহসম্পাদক তানভীর আব্দুল্লাহ।

ফ্লাইটে চড়ে রাজশাহী আসেন তারা। পরদিন বিকেলে ফিরেও যান একই পথে। পুরোটা সময় তারা ছিলেন রাজশাহী পর্যটন মোটেলে। সেখানে থাকা খাওয়াসহ অবস্থানকালীন সময়ে প্রায় পুরোটা সময় সেখানে অবস্থান করেন সাকিবুল ও জাকিরের অনুসারীরা। রাজশাহীর দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা বলারই সময় পাননি এখানকার অন্য নেতারা।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান সম্প্রতি সাকিবুলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। চাকরি দেয়ার নামে টাকা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ তার। কিন্তু তদন্ত কমিটি তাকে ডাকেইনি। তিনি নিজেই তদন্ত কমিটির কাছে গেলেও তার বক্তব্যও শোনা হয়নি।

তাই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভরসা পাচ্ছেন না আতিকুর। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে থেকেই তাদেরকে তথ্য দেয়ার জন্য গেছি। কিন্তু আমার কথায় শুনেনি। তাহলে কাদের কথা শোনার জন্য এসেছিল?

‘তদন্ত টিমের সঙ্গে কথা বলার তো কোনো সুযোগই ছিল না। আমরা গিয়েছিলাম কথা বলতে, ওখানে কথা বলতে গিয়ে তো গ্যাঞ্জাম লেগে যাওয়ার অবস্থা।

‘আমরা কয়েকটা উপজেলা থেকে কয়েকজন গিয়ে যখন ঢুকলাম, এর পরই দেখি ওদের ছেলেপুলে ঢুকাই দিল।’

তার মানে তদন্ত ভালো হবে বলে আস্থা পাচ্ছেন না?- এমন প্রশ্নে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘আমার কাছে তো তেমন মনে হলো না। তদন্ত টিমের আশপাশে অভিযুক্তরা বা তাদের লোকজন সবসময় ছিল। আমরা সঠিক তদন্ত চাই। কিন্তু এটা নিয়ে সংশয়ের মধ্যেই আমি আমরা।

‘আমরা জেনেছি তদন্ত কমিটি আওয়ামী লীগ নেতাদের যাদের সঙ্গেই কথা বলেছে, তারা নেগেটিভ কথা বলেছে। তারপরও ভরসা পাচ্ছি না।’

এনিয়ে কথা বলতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ আইন সম্পাদক আপন দাসের মোবাইলে বুধবার ফোন দিলে তিনি পরিচয় জানার পর পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।

তদন্ত নিয়ে উঠা অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক তানভীর আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আপনাদেরকে আমরা অতি শর্ট টাইমের ভেতর এ বিষয়ে জানিয়ে দেবো।’

তিনি বলেন, ‘তদন্তের মূল কাজটা পর্যটন মোটেলেই হয়েছে। এর বাইরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার সঙ্গে গিয়ে তারা কথা বলেছি। তদন্তের স্বার্থে খুব বেশি কিছু বলা যাবে না।’

তিনি দাবি করেন, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা উপজেলা ইউনিটের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে।

অভিযুক্ত নেতাদের টাকায় থাকা খাওয়া, যাওয়া আসার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘আমরা পকেটের টাকা দিয়ে বিল দিয়েছি। এসবের কাগজপত্র আছে এবং রেকর্ডিও আছে।

‘আপনাদের এই তথ্যটাই খুব মর্মাহত, খুবই মর্মাহত। আপনারা যদি উল্টাপাল্টা নিউজ করেন এটা খুবই দুঃখজনক। তানভীর প্রশ্ন করেন, আপনি বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা হয়ে আমাদের কি ফ্যামেলির এতটুকু ঐতিহ্য নাই যে ৩/৪ হাজার টাকার প্লেন ভাড়া দিয়ে আমরা ফ্লাই করতে পারবো না? এতটুকু কি নাই ভাই বলেন ?

অভিযুক্ত নেতাদের উপস্থিতিতে অন্যদের সাক্ষ্য নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন মুরুব্বিদের কাছে যাই, জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে যাই তখন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে (রাজশাহী জেলা শাখার বলেছি তোমরা তোমাদের মত ঘোরো, তদন্তের সময় আমাদের সঙ্গে থাকবা না। যখন স্টেটমেন্ট নিয়েছি, আমরা তিনজন কেবল ছিলাম।

‘অন্যদের সাক্ষ্য নেয়ার সময় জেলা সভাপতি, সেক্রেটারিদের আমরা বের করে দিয়েছি। এখন বাইরে গিয়ে যদি ঘোরাফেরা করে তাহলে আমাদের কী করার আছে বলেন?’

তৃনমুল ছাত্রলীগ তদন্তে সত্য উঠে আসার আস্থা রাখতে পারে কি না জানতে চাইলে তানভীর বলেন, ‘আমি যখন ঢাকা থেকে রাজশাহী যাই, আমি কিন্তু ফেসবুকে এক লাইন স্ট্যাটাস দিয়েছি যে, আদর্শে অবিচল থেকেই সুষ্ঠু তদন্ত হবে। তৃণমূলও আমাদের বলেছে, তদন্তে কী হয় আমরা জানি। আমরা ওদের রিপ্লাই দিয়েছি যে, সব তদন্ত দেখছ, আমাদের তদন্তটাও দেখবা।’

রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানা ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমির বিরুদ্ধে সম্প্রতি নানা অভিযোগ সামনে আসে। মোবাইল ফোনে গোপনে ধারণ করা সাধারণ সম্পাদকের ‘ফেনসিডিল সেবনের’ ভিডিওচিত্র ফাঁস হয়েছে। ফাঁস হয়েছে দলীয় নারী কর্মীর সঙ্গে সভাপতি সাকিবুল ইসলামের ফোনালাপের একটি অডিও।

সেখানে টাকা ও পদের লোভ দেখিয়ে নারী কর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। শুরুতে ছাত্রশিবির পরে রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের নেতা থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন সাকিবুল এমন অভিযোগও উঠেছে।

ফাঁস হওয়া ফোনালাপে শোনা যায় সাকিবুল সংগঠনের এক কর্মীকে বলেন, ‘শোনো, আমার চোখ চারদিকেই থাকে...। এসব চিটারি করতে পারবা না। বহুত বড় চিটারি-বাটপারি কইরি আমি প্রেসিডেন্ট হইছি...। সব চিটারের দলের সর্দার আমি।’

এর মধ্যে সাকিবুলের বিরুদ্ধে চাকরি পাইয়ে দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের মামলা হয়েছে। দুর্গাপুর আমলী আদালতে এই মামলা করেন দুর্গাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান।

সাকিবুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়ার নাম করে আতিকের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয় মামলা। চাকরি দিতে না পারায় আতিক টাকা ফেরত চাইলেও তা দেয়নি সাকিবুল।

বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের ৩০ সদস্যের নতুন কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।

এ বিভাগের আরো খবর