প্রথম দেখায় মনে হবে এ যেন তাল গাছের রাজ্য। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি অসংখ্য তাল গাছ। এক মন জুড়ানো দৃশ্য। প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে এই তাল সম্রাজ্যে বসেছিল তাল পিঠার মেলা।
শনিবার বিকেল থেকে তিন দিনব্যপী এই মেলা শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই সেখানে সমাগম ঘটেছে হাজারো মানুষের।
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙ্গা তাল সড়কে উপজেলা পরিষদের আয়োজনে প্রতিবছরই মেলার আয়োজন করা হয়। যেখানে এ অঞ্চলের বহু মানুষের সমাগম ঘটে। দর্শনার্থীরা সড়কটির সৌন্দর্য উপভোগের পাশা-পাশি স্বাদ নিতে পারেন বাহারি তাল পিঠারও।
নিয়ামতপুরের ঘুঘুডাঙ্গায় তাল সম্রাজ্যে পিঠা উৎসবে দর্শনার্থীরা। ছবি: নিউজবাংলা
এ বছর তালের পাটিসাপটা, তালের জিলাপি, তালের বড়া, তালের ক্ষীর, তালের কফি, তালের আমতা, তালের নাড়ুসহ অন্তত ২০ ধরনের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে এই মেলায়।
অন্যদিকে বিভিন্ন জেলা থেকে পিঠার পসরা সজিয়ে বসেন দোকানীরা।
বদলগাছীতে থেকে আসা দোকানি জাহেরা খাতুন বলেন, ‘আমার স্টলে ১০-১২ রকমের পিঠা আছে। বেচা-কেনাও ভালো হচ্ছে। অনেক মানুষের সমাগমও ঘটেছে এই পিঠা মেলায়।’
তালের হরেক রকম পিঠা বিকি-কিনি করছেন বিক্রেতা-ক্রেতারা। ছবি: নিউজবাংলা
সাপাহার উপজেলা থেকে আসা মীনা বেগম পিঠার স্টল দিয়েছেন মেলায়। মিনা বলেন, ‘আমার স্টলে ১০-১৫ রকমের তালের পিঠা আছে। কেউ স্টল ঘুরে দেখছেন আবার কেউ কিনে খাচ্ছেন পছন্দের পিঠাগুলো। সবমিলে অন্যরকম এক উৎসব বিরাজ করছে মেলায়।’
বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন দর্শনার্থীরাও। এমন মেলায় আয়োজন করায় তারাও খুশি। জেলা শহর থেকে মেলায় আসা লতিফুর রহমান বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে মেলায় এসেছি। অনেকদিন ঘুরাফিরা করা হয় না। অনেক রকমের তালপিঠা পসরা সাজানো। সবমিলে খুব ভালো লাগছে।’
সাবরিনা আক্তার নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, ‘আমি ও কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবী মিলে এসেছি মেলায়। অনেক তালগাছ আবার তালপিঠার মেলা। অনেক চমৎকার আয়োজন। আমাদের খুবই ভালো লাগছে।’
পিঠা মেলায় খাদ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সেখানে হাজির ছিলেন সাংবাদিক, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ।
হরেক রকম পিঠা নিয়ে ঘুঘুডাঙ্গার মেলায় উদ্যোক্তারা। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি বলেন, ‘খুবই চমৎকার একটি স্থান। দুই পাশে অসংখ্য তাল গাছ। এখানেই বসেছে রকমারী পিঠার মেলা। পিঠাগুলোর অন্যরকম স্বাধ। গাছ আমাদের পরম বন্ধু। আমাদের সকলের উচিত বেশি করে গাছ লাগানো ও পরিবেশরে ভারসাম্য রক্ষা করা।’
১৯৮৬ সালের দিকে স্থানীয় হাজিনগর ইউননিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে এই তালগাছগুলো রোপণ করেছিলেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। উদ্যেশ্য ছিল, বজ্রপাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি যোগ হবে বাড়তি সৌন্দর্য্য।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘প্রতি বছর ভাদ্র-আশ্বিনে বসানো হয় বর্ণিল এই আয়োজন। মেলাকে উপলক্ষ করে জামাই-মেয়ে আর স্বজনরা আসেন প্রতিটি বাড়িতে। মূলত নতুন প্রজন্মের কাছে বিভিন্ন প্রজাতির গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তালের পিঠা পরিচিত করে দেয়ার জন্যই এমন আয়োজন। একটা সময় আমি থাকব না, তবে এমন আয়োজন যুগের পর যুগ থাকবে।’