সাহারা মরু অঞ্চলের পাখি উটপাখি পালিত হচ্ছে দিনাজপুরে। সুলতান ইফতেখার চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি এটি শুরু করেছেন নিজের ধানকলের খোলা জায়গায়,পরীক্ষামূলকভাবে। ইতোমধ্যে পাখিগুলো ডিম দিতে শুরু করেছে।
উটপাখির উচ্চতা ৩ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। সর্বোচ্চ ওজন হয় ১৫৫ কেজি। সবচেয়ে দ্রুতগামী বা দৌড়বাজ এ পাখি ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। এটি সবচেয়ে বড় ডিমের অধিকারী, দেড় কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে এক-একটি ডিমের ওজন।
চিকেন ফিড, আলফা ও নেপিয়ার ঘাস, ডুমুর ও নিমপাতা, ফুলকপি-বাঁধাকপি, লালশাকসহ বিভিন্ন শাক-সবজি ও পাথরের গুঁড়া খেয়ে থাকে। দুই আঙুলবিশিষ্ট পায়ের অধিকারী উড়তে না পারা এই পাখি ও তার ডিমের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম নয়।
২০১৯ সালের শুরুর দিকে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ১৩টি পাখি আনেন সুলতান ইফতেখার চৌধুরী। এ দেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে পাখিগুলোকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি, যাতে আগামী দিনে বাণিজ্যিকভাবে এটি পালন করা যায়।
দিনাজপুর সদর উপজেলার রানীগঞ্জ মোড়ে একটি অটো রাইস মিলের খোলা জায়গায় এখন ১১টি উটপাখি পালন করছেন সুলতান ইফতেখার। প্রাণীগুলোকে দেখতে তার মিলে ভিড় করছেন আশপাশের মানুষ।
উটপাখি দেখতে আসা রেজাউল আলম পুতুল বলেন, ‘চিড়িয়াখানা ছাড়া এ পাখি দেখতে পাওয়া যায় না। যেহেতু দিনাজপুরের মাটিতে লালন করা হচ্ছে, তাই আমি প্রায়ই দেখতে আসি। দেখতে খুব ভালো লাগে।’
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে উটপাখি টিভিতে দেখে আসছি। কিন্তু মিলে এই প্রথম সরাসরি উটপাখি দেখতে পেলাম।’
রাব্বি ইসলাম বলেন, ‘আমি পাশের একটি মিলে কাজ করি। বহুদিন আগে উটপাখি স্বপ্নপুরী নামের একটি থিম পার্কে দেখেছিলাম। মিলের পাশেই যেহেতু এটি লালন-পালন করা হচ্ছে, আমি প্রায়ই এখানে আসি।’
মিলের সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে পাখিগুলো হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ছিল। ডিম থেকে বাচ্চা প্রজনন ও স্বাভাবিকভাবে লালন-পালনের জন্য এই মিলে নিয়ে আসা হয়। যেহেতু এগুলো মরুভূমির প্রাণী, তাই তাদের স্বাভাবিক লালন-পালন করার জন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের মিলে পুরুষ উটপাখি আছে সাতটি ও মেয়ে চারটি। ইতোমধ্যে এগুলো ডিম দিতে শুরু করেছে। সেগুলো হাজী দানেশের ভেটেরিনারি বিভাগের মাধ্যমে ফোটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি ডিমগুলো থেকে বাচ্চা জন্ম নেয়, তাহলে আমরা উটপাখির বংশবিস্তার করাতে সক্ষম হব।’
উটপাখির পালক সুলতান ইফতেখার চৌধুরী বলেন, ‘উটপাখি সাধারণ তৃণভোজী প্রাণী। এগুলোর খাবার খুব একটা ব্যয়বহুল নয়। ঘাস, গাছের পাতা, ফিড খেতে দেয়া হয়। উটপাখির অসুখ-বিসুখ খুব একটা হয় না। আমরা গরু-ছাগল যেভাবে লালন-পালন করি, সেভাবেই উটপাখি পালন করা হচ্ছে। আমাদের কাছে অনেকে উটপাখি কিনতে চায়। এদের বংশবিস্তার করা সম্ভব হলে পরবর্তী সময়ে বাইরে বিক্রি করার চিন্তা করব।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘উটপাখি মরু অঞ্চল ও আফ্রিকার বনে পাওয়া যায়। এটি বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে লালন-পালন করা হচ্ছে। উটপাখির মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু। এই পাখির মাংসে চর্বির পরিমাণ ৩ শতাংশেরও কম থাকে। উটপাখির পশম ও চামড়ার বিদেশে চাহিদা রয়েছে।’